Sunday, 14 September 2014

// // 3 comments

সংরক্ষণ

http://www.mediafire.com/download/53fvm6w4m7jimz5/What_is_Reservation_do_you_know.m4a

সংরক্ষণ

জগদীশচন্দ্র রায়(মুম্বাই)

      সংরক্ষণ নিয়ে সাধারণত যে আলোচনা হয়, সেটা  Scheduled Caste (SC), Scheduled Tribe (ST) দের সংরক্ষণ নিয়েতারপরে আসে OBC দের সংরক্ষণ নিয়ে। এই সংরক্ষণ তিন প্রকার।             

()শিক্ষায় সংরক্ষণ

() চাকরীতে সংরক্ষণ                

এবং () নির্বাচনে সংরক্ষণ


Scheduled Caste (SC), Scheduled Tribe (ST) এবং Other Backward class (OBC). সংবিধানে SC দের সংরক্ষণ 15.% ST দের 7.50% এদের জন সংখ্যা হিসাবে এই সংরক্ষণ নির্ধারিত হয়েছিলপরে OBC দের জনসংখ্যা 52% হওয়া সত্যেও 27% সংরক্ষণ কেন্দ্রীয় সরকারী হিসাবে নির্ধারিত হয়েছেরাজ্য সরকারী হিসাবে এই % আরো কম। এক এক রাজ্যে একক রকমএই তিন জাতি গোষ্ঠীর জন্য মোট সংরক্ষণ 50%. এদের মধ্যে ধর্ম পরিবর্তিদের অর্থাৎ যারা এই তিন জাতি গোষ্ঠীর থেকে ধর্মান্তরিত হয়েছে তাদের জনসংখ্যা 10.5%. যাদের মোট জনসংখ্যা হচ্ছে 85%. এই 85% জনগণের অধিকার 50% সংরক্ষণেযদিও সংবিধানে এই কথা উল্লেখ নেই যে সংরক্ষণ 50% এর ঊর্ধে হতে পারবে নাSouth India তে 69% সংরক্ষণ আছেআর সেখানকার প্রগতি ভারতবর্ষের অন্য যেকোন রাজ্যের থেকে অনেক বেশি

    যে কথা বলছিলাম- 85% ভারতের জনসংখ্যার জন্য সংরক্ষণ 50% আর বাকি 15% লোকের জন্য অলিখিত সংরক্ষণ 50%. এর পরে আরো আছেন 85% এর জন্য যে 50% সংরক্ষণ নির্ধারিত, তারা পায় বা পেয়ে থাকে বা ভোগ করে এই 50% এর  অর্ধেকের ও কম যেটা কম, সেটাও ভোগ করে ঐ 15% লোকেরাএই 15% লোক কারা? এরা ব্রাহ্মণ, ক্ষৈত্র এবং বৈশ্যযাদের জনসংখ্যা যথাক্রমে 3.5%, 4.50%, 7%

     এবার দেখুন এই তিন শ্রেণির লোকেরা 15% হয়েও 50% এর অধিক সুবিধা ভোগ করছেকিন্তু এদের এতেও শান্তি নেই তাই প্রতিনিয়ত SC, ST, OBC দের প্রতি বিষ নিক্ষেপ করে চলেছেতাদের কথা হচ্ছে সংরক্ষণের জন্য দেশ পিছিয়ে পড়ছেআপনারা একটু ভাবুন তো সত্যি সত্যি দেশ কাদের জন্য পিছিয়ে পড়ছে? সেটা আপনারা কখনও ভাববেন নাকারণ এই পিছিয়ে পড়া শ্রেণির লোকদের তো আপনারা মানুষ বলে মনে করেন না। তাইতো তাদের SC- 1500, ST -700, OBC- 4743 জাতিতে বিভক্ত করেছেনজাতি হয় পশুদের মধ্যে। আপনারা এই SC, ST, OBC দের পশুর স্তরে নামিয়ে দিয়েছেনতথাকথিত স্বাধীনতার পর শাসন ভার কাদের হাতে চলছে? প্রশাসনে কয়জন SC, ST, OBC আছে? তবুও যতো দোষ নন্দ ঘোষ? আপনারা কথায় কথায় বলেন সংরক্ষণ আর্থিকতার উপর হওয়া দরকারকিন্তু সংবিধানে সংরক্ষণ তো আর্থিকতার উপর ভিত্তিকরে নির্ধারিত হয়নিসংরক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে সামাজিক বৈসম্যের আধারে। আর সেই বৈসম্য করেন আপনারাকিন্তু সেকথা কেউ মনের ভুলেও উচ্চারণ করেন না কেন?

 

     একবার দেখে নেওয়া যাক এই সংরক্ষণের আধার criteria কী? তার আগে দেখি কাদের SC বলা হয়

বহু শিক্ষিত লোক আছেন, যাঁরা Scheduled Caste কথাটার মর্ম বোঝেন না, এমনকি যারা চাকরিজীবি তারাও এর প্রকৃত অর্থ জানেন না। SC নামে কোন জাতি নেইকতকগুলি জাতির সমষ্টি হচ্ছে SC. S-Scheduled, যার অর্থ অনুসূচীঅনু মানে ক্রমাঙ্ক এবং সূচী মানে তালিকাঅর্থাৎ সূচী বা ক্রমবদ্ধ অর্থাৎ ধারাবাহিক তালিকাভুক্ত জাতি

কোন জাতিকে SC -এর তালিকাভুক্ত করার জন্যে তিনটি শর্ত আছে

() শিক্ষাগতভাবে অনগ্রসরতা,

() সামাজিকভাবে অনগ্রসরতা,

   () এদের সঙ্গে অস্পৃশ্যতামূলক আচরণ

ST- দের জন্যেও এরূপ তিনটি শর্ত আছে। 

() শিক্ষাগতভাবে অনগ্রসরতা,

() সামাজিকভাবে অনগ্রসরতা,

   () যাদের মধ্যে আদিম জীবন-যাত্রার বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়

 

আর OBC -দের ক্ষেত্রেও তিনটি শর্ত আছে

() শিক্ষাগতভাবে অনগ্রসরতা,

() সামাজিকভাবে অনগ্রসরতা,

   () SC/ST নয়, অথচ অনগ্রসর

 

     আপনাদের মধ্যে তো ভগবানের ছড়াছড়িকিন্তু কোন ভগবান বা আপনাদের মহামানব এই সামাজিক বৈসম্য, অস্পৃশ্যতা , জাতি বিভাজন দূর করার জন্য কিছু করেছেন? আপনারা যেটা করেন বা দেখান সেটা এই বৈসম্য যাতে চালু থাকে সেই উদ্দেশ্যেসত্যি সত্যি এই  সামাজিক ব্যাধি থেকে সমাজ তথা দেশকে মুক্ত করার জন্য নয়  

     সংবিধানে যে তিন প্রকার মূল সংরক্ষণের উল্লেখ আছে, সেখান শিক্ষা ও চাকরির সংরক্ষণের কোন নির্ধারিত সময় সীমার উল্লেখ নেইআর নির্বাচনে সংরক্ষণ ছিল দশ বছরের জন্যকিন্তু প্রতি দশ বছর পরে পরবর্তি দশ বছরের জন্য নির্বাচনের সংরক্ষণকে বাড়িয়া দেওয়া হয়কেন? এই দশ বছরের জন্য বাড়ানোর জন্য কি কোন  SC,ST রা কোন প্রকার আন্দোলন করেছে? তবে কেন? আর কেন বাড়াতে হবে তার জন্য সংসদে কি কোন চর্চা হয়? কেন হয় না? কারণ চর্চা হলে দেখা যেত নির্বাচনের সংরক্ষণের ফলে SC, ST রা কোন প্রকার উপকার পাচ্ছে না। সেটা পাচ্ছে বাকি শ্রেণির লোকেরাSC, ST দের মধ্যে থেকে যারা নির্বাচনে জয়ী হন, তারা পার্টির প্রতিনিধি রূপে কাজ করনে। তাঁর সমাজের জন্য নয়যদি কেউ ভুল করে ও তাঁর সমাজের কথা উল্লেখ করেন তবে তাঁকে জাত-পাত, সাম্প্রদায়িক বলে কুচেমাছের চাল ছাড়ানোর মতো ছাল ছাড়ানো হয় মিডিয়ার মাধ্যমেফলে এরাঁ মনের ভুলে ও তাঁর সমাজের নাম  নিতে সাহস পান না। গোলামিতে আনন্দ উপভোগ করেতাই এই যে, যে নির্বাচনে সংরক্ষণের বৃদ্ধি এটা বর্ণবাদীদের সুবিধার জন্যই। এখানে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে যে, যখন এই নির্বাচনের সংরক্ষণ পরবর্তি দশ বছরের জন্য বাড়ানো হয়, তখন মিডিয়া প্রচার করে SC, ST দের জন্য শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রের সংরক্ষণ দশ বছরের জন্য বাড়ানো হোলএটা শুনে SC, ST দের বাকিরা গালি দিতে শুরু করেযে গালি দেওয়ানোর কাজ ইচ্ছা করে করানো হয়কারণ যাকে নীচ্‌ করে রাখা হয় তাকে গালি দিতে নীচ্‌ করে রাখার লোকদের মজা হয়তাহলে এবার বলুন তো কে প্রকৃত সংরক্ষণের সুবিধা ভোগ করছে? এই 85% লোকেরা 50% নিয়ে, নাকি 15% লোকেরা 50% নিয়ে?

 

রিজার্ভেশান রিবি হটাও এর কর্মসূচী নয়।

     Sc, ST & OBC এর সাংবিধানিক রিজার্ভেশানের মূল অর্থ হচ্ছে –

প্রতিনিধিত্ব (representation)। যদিও এ প্রতিনিধিত্বের মূল ধারণাকে বদলে দিয়ে গতানুগতিক রিজার্ভেশনের সঙ্গে গুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। যার ফলে এই প্রতিনিধিত্বকে সমাপ্ত করার জন্য  কৌশল করে আওয়াজ তোলা হচ্ছে আর্থিক ভিত্তিতে রিজার্ভেশন দেওয়ার দেওয়া হোক। এই  আওয়াজে বৈদিকবাদীরাতো আছেই সঙ্গে তাল মিলাচ্ছে কিছু দালাল। বাবা সাহেব বলেছিলেন,  আমি কাজ করার জন্য তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন লোক না পেলেও চলবে, সেটা আমি পূর্ণ করে নেব। আমি ইমানদার লোক চাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাবা সাহেবের দেওয়া সুবিধার সুযোগ নিয়ে নিজের সমাজের জন্য ইমানদার না হয়ে, বৈদিকবাদীদের কাছে কিছু পাওয়ার আশায় সমাজের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। তাই বাবা সাহেবের স্বপ্ন অপূর্ণই রয়েগেল।  

সংবিধানের  15(4) & 16(4) ধারায় বাবাসাহেব বলেছেন- ১. Those who are adequately not represented. যাদের পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব নেই। তারাই শুধুমাত্র রিজার্ভেশনের অধিকারী। যাদের কাছে ক্ষমতার সব কিছু আছে তারা সংরক্ষণ পাবেনা।     

     ২. বাবা সাহেব বলেছেন- Those who are the members of the scheduled caste scheduled tribe or socially and educationally back word classes. সামাজিক ও শিক্ষাগত দৃষ্টিকোণ থেকে পিছিয়ে পড়া, অনু্সূচীত জাতি বা অনুসূচীত উপজাতির হলে এবং পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব না পেলে এই শর্তের অধিকারীরা সংরক্ষণের সুবিধা পাবে। 

     অনেকেই বলেন সংরক্ষণ আর্থিক ভিত্তিতে হওয়া দরকার। কিন্তু রিজার্ভেশান আর্থিক  ভিত্তিতে গঠিত নয়। আর্থিক ভিত্তিতে ৪৬ ধারায় লেখা আছে যারা আর্থিক দৃষ্টিতে দুর্বল তাদের জন্য সরকারের উচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। (The State shall promote with special care the educational and economic interests of the weaker sections of the people)

     তাই বি.পি.এল. আর সংরক্ষণের কার্যক্রম একত্র নয়। দারিদ্র রেখার নিচের লোকদের জন্য  কার্যক্রম হওয়া দরকার। যার মধ্যে সব জাতির লোক থাকতে পারবেযেটা হচ্ছে দারিদ্র  নির্মূলনের কার্যক্রম। কিন্তু রিজার্ভেশন হচ্ছে প্রতিনিধিত্বের সামাজিক ন্যায়ের কার্যক্রম।  এদুটো  কখনো এক হতে পারেনা। দরিদ্রদের প্রতি ন্যায়ের জন্য সংবিধানে ৩৮, ৩৯, ৪১ ও ৪৬  ধারা আছে।  সংবিধানে এবিষয়ে বিস্তারিত বর্নণা আছে। দুটোকে একত্র করে উদ্দেশ্যকে বিপথগামী করার কাজ চলছে।  

     সুপ্রিম কোর্ট ১৬ নভেম্বর ১৯৯২ এর স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন যেটা ৯ জন বিচারক (এম. এস. কানিয়া (প্রধান বিচারক), ভেঙ্কট চালাইয়া, এ এম আহমদি, বি.পি. জীবন রেড্ডি, এস. আর.  পান্ডিয়ান, পি. বি. সাবন্ত, পি. কে. থমন ও কুলদীপ সিংহ)  বিচারকের বেঞ্চ জানিয়েছেন যে, There must be a commission appointed by government or experts. চার মাসের মধ্যে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারকে এই কমিশন অবশ্যই গঠন করতে হবে।

    ভোট আসার পূর্ব মূহর্ত থেকেই রিজার্ভেশন দেওয়ার নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রলোভোন দেওয়া হয়। যেটার কোনো বাস্তবতা থাকেনা। 15(4) & 16(4) ধারায় রিজার্ভেশন হচ্ছে এই মূল রিজার্ভেশনের অংশ। এটা কিছুতেই বদলানো সম্ভব নয়।  

     ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সালে নরসিং রাও এর সময়ে আর্থিক ভিত্তিতে ১০% রিজার্ভেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। কিন্তু ১৬ নভেম্বর ১৯৯২ এ ইন্দ্রা স্বাহনী বনাম ভারত সরকার (Indira Sawhney &Ors v. Union of India.) এর কেসে সুপ্রিম কোর্ট সেটাকে নাকচ করে দেন এবং সেটাকে সংবিধান বিরোধী বলে ঘোষণা করেন।    

     কিন্তু তবুও কিছু লোক পুনরায় আর্থিক ভিত্তিতে রিজার্ভেশনের জন্য জোরালো দাবি করছে। তারা বলছে আর্থিক ভিত্তিতে রিজার্ভেশন দেওয়ার জন্য সংবিধান বলদ করো। কিন্তু তারা জানেনা বা জেনে না জানার ভান করে। সংবিধান বদলানো যায়কিন্তু মূল ধারাতে হাতও লাগানো যায়না।  সে ব্যবস্থা বাবাসাহেব সংবিধানে করে রেখেছেন। আর্থিকভাবে রিজার্ভেশনের কথা সেটা দারিদ্র   নির্মূল করণের বিষয়, আর রিজার্ভেশন হচ্ছে প্রতিনিধিত্বের বিষয়। এটা কিছুতে দারিদ্র নির্মূলকরণের কার্যক্রম নয়। তবুও  কিছু প্রতিক্রিয়াশীলরা বার বার আওয়াজ তুলছে গরিবদের  জন্য রিজার্ভেশ দেওয়া হোক।  

(তথ্য সংগ্রহ – Marathi speech of  Prof. Hari Narke. 54 Books Author, Professor, Researcher & Editor of Dr Babasaheb Ambedkar & Mahatma Phule's Books.)

                            _____________________

3 comments:

  1. ভাল লেখা। আসলে আমরা যারা সংরক্ষনের সুবিধা ভোগ করছি তারা এটাকে ব্যক্তিগত অধিকার হিসাবে ধরে নিচ্ছি, ভাবছিনা নিজেকে আমার সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসাবে। আসল স্বার্থপর আমাদের মত সংরক্ষনের সুবিধাভোগীরা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক বলেছেন সুধাকার সারদার বাবু। ধন্যবাদ।

      Delete
  2. খুব সুন্দর লেখা। ধন্যবাদ ।

    ReplyDelete