Monday 26 September 2016

// // Leave a Comment

প্রকৃতি ও সত্যের প্রতীক নবদুর্গা কলাবৌ লেকখঃ- কাশ্যপ


প্রকৃতি ও সত্যের প্রতীক নবদুর্গা কলাবৌ
লেকখঃ- কাশ্যপ
     ভারতের পশ্চিমবাংলা, ত্রিপুরা, আসাম রাজ্যে এবং বাংলাদেশে বাঙালির সব চেয়ে বড়ো      উৎসব শারদীয়া উৎসব বা দুর্গা পূজা। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ এবং একই সঙ্গে বাংলাভাগের ফলে ভারতের বিভিন্ন অবাঙালী অধ্যুষিত অঞ্চলে বসবাসকারী বাঙালিরাও দুর্গাপূজা করে থাকে। কিন্তু দুর্গাপূজার প্রকৃত ইতিহাস সামান্য কিছু বাঙালি জানে। দুর্গাপূজা সর্ব প্রথম চালু হয় বাংলায়।  দুর্গাপূজা শুরু হয় আজ থেকে আনুমানিক ১২০০-১৩০০ বছর আগে।  
   ১২০০-১৩০০ বছর আগে দুর্গাপূজার প্রচলন ছিলনা। ঐ সময়ের আগে বঙ্গ প্রদেশে প্রচলিত  ছিল প্রকৃতি ও সত্যের প্রতীক “নবদুর্গা বাকলাবৌ”-এর পূজার। যাঁরা দুর্গা পূজা করেন তাঁরা নবদুর্গা বা কলাবৌ-এর বিষয়টা একদম জানেন না।
     ‘নবদুর্গা’- আক্ষরিক বিশ্লেষণ হ’ল নব-মানে ‘নয়’ দুর্গা-মানে দুর্গতিনাশিনী বা বিপদ থেকে  রক্ষাকারী। আর্যরা বা ব্রাহ্মণবাদীরা ভারতবর্ষে আসবার পূর্বে ভারতীয় মূলনিবাসী তথা অনার্য বা ভারতের আদিবাসিন্দারা এমন ‘নয়’ রকম গাছের সংস্পর্শে এসেছিল যার মধ্যে নানান ধরণের গুণ ছিল। ঔষধীয় গুণ, খাদ্য গুণ ইত্যাদি। অনার্য ভারতীয়গণ ঐ নয় রকম গাছের পূজা করত দেবী দেবতা জ্ঞানে নয়, ‘উপকারী জিনিস’-এই হিসাবে। পরবর্বতীকালে বিদেশী আর্যরা  গাছের মধ্যে দেবত্ব বা দেবীত্বভাব আরোপিত করে । ভারতের মূলনিবাসী তথা অনার্য তকমা দেওয়া মানুরা,এই নয় রকম গাছের মধ্যে এই ঔষধীয় ও খাদ্য দুই গুণই পেয়েছিল। সেগুলি হ’ল-  
(১) কলা (২) কচু (৩) হলুদ (৪) জয়ন্তী (৫) অশোক (৬) বেল (৭) ডালিম (৮) মান (৯) ধান।  
কলাগাছ সহজে সংগ্রহ করা যায়। প্রতীক হিসাবে কলা গাছের আকৃতিও সুন্দর। তাই প্রাচীন ভারতীয় মানুষ সংঘবদ্ধভাবে ভক্তিভাবে নির্দিষ্ট স্থানে কলাগাছ রেখে এবং কলা গাছের নিচে বাকি ৮টি গাছের প্রতীকি নমুনা সাজিয়ে জ্ঞানী মানুষ তথা মুনিরা (ঋষিরা নয়) ঐ নয়টি গাছের গুণাবলী  সম্পর্কে মানুষকে উপদেশ দিতেন। এটিই ছিল প্রাচীন ভারতের নিয়মাবলী। বিশেষভাবে বাংলায়।
নয়টি গাছের এবং তার ফলের গুণাবলী-
(১) কলাঃ- (ক) কলা একটি পুষ্টিকর খাদ্য। (খ) পালাজ্বর বা দু’দিন অন্তর জ্বর –তার ঔষধ কলা।  (গ) যকৃত, অগ্ন্যাশয়, কিডনি ভাল রাখে কলা। (ঘ) ডিসেন্ট্রি রোগেরও ভাল ঔষধ কলা (ঙ)  মৃতবৎসা নারীর পক্ষে উপকারী কলা। (চ) শিশুর মাতৃ বিয়োগ হলে ঐ শিশুর মাতৃদুগ্ধের অভাব পূরণ করে কলা। (ছ) কলা আর তার দ্বিগুণ ওজনের ছাতু এক সঙ্গে মিশিয়ে খেলে স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পায়। কলার এই অশেষ গুণের জন্য কলার অপর নাম ব্রাহ্মণী শক্তি। তাই আর্যপূর্ববর্তী ভারতীয়রা কলাকে সম্মান করতেন বা পূজা করতেন তার গুণাবলীর জন্য।  
(২) কচুঃ- কচুর খাদ্যগুণও যথেষ্ঠ। বিশেষ করে কিডনির পক্ষে ভীষণ ভাল।
(৩) হলুদঃ- হলুদ একটি ভাল মশলা। বিষক্রিয়া নাশকও বটে। কাঁচা হলুদ চর্ম রোগের ঔশধ। যেখানে অনেক লোক জড় হয় সেখানে রোগ ছড়াতে পারে। প্রাচীনবাংলায় তাই জড় হওয়া লোক বাড়িয়ে গিয়ে কাঁচা হলুদ বেঁটে গায়ে মাখত, যাতে রোগের জীবানু ধ্বংস হয়। অথবা সামাজিক উৎসবের আগে সবাই গায়ে কাঁচা হলুদ বাঁটা গায়ে মাখত। একই উদেশ্যে বিয়ের সময় ছেলে এবং  মেয়েকে কাঁচা হলুদ বেঁটে স্নান করান হয় ঐ রোগ মুক্তির জন্যই। যা বর্তমানে গাত্রহরিদ্রা নামে পরিচিত।
(৪) জয়ন্তীঃ- জয়ন্তী মূল ঔষধ তৈরীতে লাগে। জয়ন্তী ধবল কুষ্ঠের মহাঔষধ। সাত রকম কুষ্ঠের চার রকমের কুষ্ঠ জয়ন্তীর মূলেই সেরে যায়। তাই জয়ন্তী গাছকে মানুষ সম্মান জানাত বা পূজা করত।
(৫) অশোকঃ- যাকে হিন্দিতে বলে সীতা অশোক। এই অশোক হল সমস্ত স্ত্রী ব্যাধির মহাঔষধ অশোক গাছ থেকে মদ বা ঔষধ তৈরী হয় তাকে বলা হয় অশোকারিস্ট বা অশোক সিরাপ।
(৬) বেলঃ- কাঁচা বেল সমস্ত উদর বা পেটের রোগের সবচেয়ে ভাল ঔষধ। কাঁচা বেল পুড়িয়ে  খেতে হয়। একদম কচি বেল রোদে শুকিয়ে গুড়ো বা ছাতুর ন্যায় করে হাল্কা মধু দিয়ে খেতে হয়।  তাহলে দীর্ঘ দিনের আমাশয় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বেলের অশেষ গুণের জন্য এর অপর নাম শ্রীফল।
(৭) ডালিমঃ- ডালিমের ছাল, শেকড় ও ফুল সমস্তই স্ত্রীরোগের খুব ভাল ঔষধ বর্তমানে ক্যানসার  আক্রান্তদের কেমো বা রে দেবার সময় বেশি করে ডালিম ফলের রস খেতে বলা হয়। ডালিমের এতই গুণ।
(৮) মানঃ- যাকে বলা হয় ওল। গরমের সময় এর খাদ্য গুণ শরীরকে ঠান্ডা রাখে। অত্যাধিক গরমে মানুষের নাক দিয়ে রক্ত পড়ে; সেই সময় মান এর রস ঔষধের কাজ করে। তাই মান খাদ্য এবং ঔষধ দুই-ই।
(৯) ধানঃ- ধান থেকে চাল, চিড়া, খই সবটাই মানুষের বেঁচে থাকার উপাদান পাওয়া যায়।  প্রাচীনকালে ভাত পচিয়ে মদ তৈরী হ’ত যা থেকে নানা ধরনের ঔষধ তৈরী হ’ত।
      এই নয় রকমের গাছের বিশেষ গুণ থাকায় মানুষ এই গাছ গুলোকে শ্রদ্ধা করত। এই নয়টি গাছের একত্রিত নাম ছিল চন্ডিকা শক্তি। এই নয় রকমের গাছপালা-এর মধ্যে যে চন্ডিকা (শক্তিশালী) শক্তির অভিব্যক্তি তার মিলিত শক্তির নাম হল নবচন্ডী। আর এই নয় রকম গাছের মিলিত নাম হল নবপত্রিকা। আজ থেকে ১৩০০ বছর আগে বাংলায় এই নবপত্রিকার পূজাই প্রচলিত ছিল। কলাগাছকে কেন্দ্র করে বাকি আটটা গাছের প্রতীকি জড় করে পূজা করা হত।
    আজ থেকে বাংলায় ১৩০০ বছর আগে যখন কাল্পনিক দুর্গাপূজার প্রচলন হ’ল তখন কৌশল করে দুর্গাপূজাকে প্রচার প্রসারের জন্য গাছের ঔ নয়টি শক্তিকে নাম দেওয়া হল নবদুর্গা এবং দুর্গাপূজার সঙ্গে কাল্পনিক চরিত্র লক্ষ্মী, গনেশ, কার্তিক প্রভৃতির সঙ্গে সঙ্গে নয় নয়টি গাছের মিলিত শক্তিকে কলাবৌ সাজিয়ে স্থান দেওয়া হল।
    লজ্জার বিষয় বাঙালী সমাজ দুর্গাপূজায় মেতে ওঠে; কিন্তু ঔ কলা ‘বৌ’ রূপী নবদুর্গার প্রকৃত ইতিহাস জানেনা। প্রকৃতি এবং সত্যের প্রতীক ঐ কলাবৌ বা নবদুর্গাই যে আসল। দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গনেশ সবটাই কাল্পনিক এবং মিথ্যা। সত্যের পূজা না করে বাঙালী মিথ্যার পূজার করে চলেছে।
(সহায়ক গ্রন্থঃ ‘নমঃশিবায় শান্তায়’ -লেখক আন্দমূর্তি) 




Read More

Sunday 25 September 2016

// // Leave a Comment

দুর্গাপূজার উৎপত্তি-সম্পদনায়- ডাঃ সুধাংশু শেখর মালাকার

দুর্গাপূজার উৎপত্তি
(সৌজন্যে- শ্রীশ্রী গোপালচাঁদ চরিত্র সুধা। লেখক শ্রী শ্রীকান্ত ঠাকুর।
সম্পদনায়- ডাঃ সুধাংশু শেখর মালাকার, পৃষ্ঠাসংখ্যা-868-870
       সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী জেলার তাহেরপুরের জমিদার কুল্লভট্টের পুত্র কংস নারায়ণ প্রায় আট লক্ষ টাকা ব্যয়ে মহাধুমধামে দুর্গাপূজা করেছিলেন। তারপর থেকেই ক্রমে ক্রমে বাংলার ঘরে ঘরে এই পূজার প্রচলন হয়েছে। এই জন্যই বলা হয় চণ্ডীর জন্ম বাংলাদেশে।
দুর্গা ও কালীর উদ্ভব সম্বন্ধে দুটি কথা
     মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায় উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে (সিন্ধু ও বেলুচিস্থানে) শিবকে দিয়ে হিন্দুর যাত্রা শুরু এবং পূর্বাঞ্চলে দুর্গা ও কালীকে দিয়ে তার শেষ।
     বাংলাদেশের নাটোর জেলার তাহেরপুর পরগনায় জমিদার কংসনারায়ণ (বাংলার বারো ভূঁইয়ার একজন, ১৫৮৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন) নিজের ক্ষমতা, আভিজাত্য ও ধনৈশ্বর্য জাহির করার উদ্দেশ্যে অভিনব কিছু করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তার কুলগুরু তাকে দুর্গাপূজা করার প্রস্তাব করেন। এর আগে কেউ কখনও দুর্গার নাম শোনে নি। অতএব, লোকে তা মানবে কেনজমিদারের এ সন্দেহ ছিল। জনসাধারণ কর্তৃক মেনে নেবার দায়িত্ব নিয়ে কুলগুরু তাকে আশ্বস্ত করেন। কংসনারায়ণের সভাপণ্ডিত ছিলেন কৃত্তিবাস ওঝা। কৃত্তিবাস ওঝার জন্মস্থান নদীয়া জেলার রাণাঘাট মহকুমার প্রায় এক ক্রোশ দক্ষিণ-পশ্চিমে স্থিত ফুলিয়া গ্রামে। কৃত্তিবাস আনুমানিক ১৪৪৭ খ্রিষ্টাব্দ অবধি বেঁচে ছিলেন। কুলগুরু এই কৃত্তিবাসের সঙ্গে পরামর্শ করে বাংলায় রামায়ণ তর্জমা করান। সংস্কৃত রামায়ণে দুর্গার কোনই উল্লেখ নেই। সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ করানোর সময় কৃত্তিবাসকে দিয়ে কংসনারায়ণের  কুলগুরু রামায়ণের মধ্যে প্রক্ষিপ্ত করান যে, রাম অকালবোধন করে দুর্গাপূজা করেছিলেন। বাংলার সাধারণ জনগণ সংস্কৃত জানে না, প্রায় নিরক্ষর। রামায়ণের দোহাই দিয়ে জমিদার কংসনারায়ণকে দিয়ে দুর্গাপূজা করিয়ে জনগণকে গ্রহণ করালো। তখনকার আমলে (আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্দ্ধে) নয় লক্ষ টাকার অধিক খরচ করে চোখ ধাঁধানো জাকজমকপূর্ণ পূজা প্রথম প্রচলন করা হয়। এত ব্যয়বহুল পূজায় পুরুত ঠাকুর কি বিরাট পরিমাণ দক্ষিণা পেয়েছিলেন পাঠক একবার অনুমান করুন । এ জন্যই দুর্গাপূজার আর এক নাম বড় পূজা। এ পূজা বাংলার বাইরে অবাঙালি হিন্দুর মধ্যে প্রচলন নেই বললেই চলে। যেখানে বাঙালি সেখানেই দুর্গাপূজা। বহু আদিবাসী এই দুর্গাপূজার সময় শোক পালন করে। তা হলে কি বলা অত্যুক্তি হবে যে, দুর্গার পিতা জমিদার কংসনারায়ণ, জন্মভূমি বাংলাদেশের নাটোর জেলার তাহেরপুর পরগণায়, পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমাদ্ধের্ ?
     কেউ কেউ বলেন কৃত্তিবাসের জন্ম ১৪৪০ খ্রিষ্টাব্দে, মাঘ মাসে, নদীয়ার শান্তিনগর থানার ফুলিয়া গ্রামে। কেউ বলেন বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার প্রেমতলীর নিকটে। ১২ বছর বয়সে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে শাস্ত্রীয় শিক্ষার জন্য যান রাজশাহীর বরেদ্রভূমিতে। তার পরে রাজানুগ্রহ লাভের জন্য গৌড়ের রাজা গণেশ (১৪১৫-১৪১৮)/সুলতান জালালুদ্দিন মাহমুদ শাহ (১৪১৫-১৪১৮) এর দরবারে যান।
কৃত্তিবাসী রামায়ণের আদি নাম ছিল শ্রী রাম পাঁচালি
     পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ। শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে জয়গোপাল তর্কালঙ্কার সম্পাদিত কৃত্তিবাসী রামায়ণ ১৮০২-১৮০৩ সালে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে প্রকাশিত হয় ১৮৩০-১৮৩৪ সালে। পরবর্তী চার শতাব্দীতে কৃত্তিবাসী রামায়ণের প্রভূত পরিবর্তন সাধিত হয়। রামায়ণে কৃত্তিবাস দুর্গার অকালবোধন লিখিতভাবে আমদানী করলেন পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে, সেই সূত্রে ২০১৪ সালে দুর্গার বয়স হয় আনুমানিক ৫৬৪ বছর।
History & Origin of Durga Puja
-By Subhamoy Das, About.com Guide

The First Durga Puja in Bengal the first grand worship of Goddess Durga in recorded history is said to have beed celebrated in the lage 1500s. Folklores say the landlords or zamindar of Dinajpur and Malda initiated the first Durga Puja in Bengal. According to another source, Raja Kangshanarayan of Taherpur or Bhabananda Mazumdar of Nadiya organized the first Sharadiya or Autumn Durga Puja in Bengal in c1606.


* দুর্গাপূজার উৎপত্তি ও বছরে ৩ বার কেন দুর্গা পূজা হয়
  এ প্রশ্নের উত্তরে আচার্য সুভাষ শাস্ত্রী তাঁর অমৃতালোকগ্রন্থের ১০৫ থেকে ১০৬ পৃষ্ঠায় বলেছেন:-
     মূর্ত্তি পূজার পক্ষে প্রামাণ্য শাস্ত্রে কোন নির্দেশ নাই। তথাকথিত ব্রাহ্মণেরা দেব-দেবীর স্রষ্টা। কৃষিপ্রধান ভারতবর্ষে শ্রমজীবী কৃষকদের অর্থ সম্পদ শোষণ করা এবং জমিদারদের খেয়ালী মনের পূর্ণতা দানের জন্য কল্পিত পুঁথি রচনা করে দুর্গাপূজা সৃষ্টি করা হয়েছিল।

     ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে রাজশাহী জেলার চলন বিলের পার্শ্বে জমিদার কংসনারায়ণ এর দ্বারা শরৎকালে প্রথম দুর্গাপূজা হয়েছিল। এই পূজার উৎপত্তির মহা তিন নায়ক হলেন (১) জমিদার কংসনারায়ণ, (২) তাঁর সভাপতি কৃত্তিবাস ওঝা, এবং (৩) তাঁর বংশের পুরোহিত রমেশ শাস্ত্রীকৃত্তিবাস ওঝা পয়ার ছন্দে গোঁজামিল দিয়ে কাল্পনিকভাবে মূল বাল্মিকী রামায়ণের নকল করে বাংলা ভাষায় রামায়ণ রচনা করে দুর্গাপূজাঢুকিয়ে দেন। আর রমেশ শাস্ত্রী কঠোর চেষ্টা করে চণ্ডীপাঠের পুস্তক ও দুর্গাপূজার পদ্ধতি রচনা করেন। সেই সময় আট লক্ষ টাকা খরচ করে প্রথম দুর্গাপূজা হয় চলনবিলে। এই পূজার আয়োজন দেখে পাশের ভাতুরিয়া পরগণার জমিদার জগৎ নারায়ণ বসন্তকালে দুর্গাপূজা করেন। তিনি খরচ করেন নয় লক্ষ টাকা। এই দুই জমিদারের নাম কেনা-বেচা এবং প্রভাব বিস্তারের জন্যই বাংলা এলাকায় দুর্গাপূজার উৎপত্তি ও প্রসার বলে ঐতিহাসিকেরা মনে করেন। মূল বাল্মীকি রামায়ণে কোন দেব-দেবী ও দুর্গাপূজার নামগন্ধ নেই। সুরথ রাজা দুর্গাপূজা করেছিলেন বলে মার্কণ্ডেয় পুরাণে যে কাহিনী আছে তা অনৈতিহাসিক। ফলে সুরথ রাজার দুর্গাপূজাকরার ঘটনাও মিথ্যা। ফলে ভারতবর্ষের অন্য হিন্দু জনসমাজ দুর্গাপূজা করেন না একমাত্র বাঙালি জনসমাজ ছাড়া। সুরথ রাজা এবং রামচন্দ্র যদি দুর্গাপূজা করেই থাকেন তবে ভারতবর্ষের অন্য স্থানে এবং অযোধ্যায় দুর্গাপূজা নেই কেন? সমগ্র বাংলা এলাকা, আসাম এবং বিহারের কিছু অংশে দুর্গাপূজার বহুল প্রচলন কারণ বাঙালি যেখানে আছে সেখানেই  দুর্গাপূজারছড়াছড়ি। ভারতবর্ষের সংস্কৃত সাহিত্য, প্রামাণ্য পুস্তকসমূহ এবং হিন্দী সাহিত্যে দুর্গাপূজার কোন কথা নেই বলে তাঁদের আচরিত ধর্মে দুর্গাপূজার স্থান নেই। অথচ কৃষিপ্রধান বাংলা এলাকায় দুর্গাপূজা প্রচলন করে পুরোহিত এবং জমিদার নামক শোষকেরা। একটু ভেবে দেখুন এক বছরের মধ্যে তিন বার তিন ভাবে দুর্গাপূজার নামে কৃষি প্রধান শ্রমজীবী লোকদের শোষণ করা হয়। কৃষকেরা চৈত্র-বৈশাখ মাসে কঠোর পরিশ্রম করে আউশ ধান, পাট এবং আমন ধান রোপণ করেন। শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে আউশ ধান এবং পাট কৃষকের ঘরে এলে এই সময় শরৎকালে দুর্গাপূজারবিধান দিয়ে কৃষকদের আউশ ধান এবং পাট বিক্রয়ের অর্থ শোষণ করা হয়। মাত্র কিছুদিন পরেই কার্তিক মাসে আবার কাত্যায়নীপূজা নাম দিয়ে আশ্বিন মাসে যে দুর্গাদেবী ও তার বাহিনীকে বিসর্জনদিয়ে ত্যাগ করা হলো বা মেরে ফেলা হলো সেই দুর্গাদেবীকে পুনরায় সাধারণ মানুষদের শোষণ করার জন্য আবার ডেকে আনা হলো ব্রাহ্মণদের মন্ত্রের জোরে। পুনরায় চলল ধর্মের নামে তথাকথিত শূদ্রদের অর্থ সম্পদ শোষণ। ফাল্গুন মাসে আমন ধান ও চৈতালী ফসলের টাকা শোষণ করার জন্য বাসন্তী পূজার নামে দুর্গাদেবী এবং তার বাহিনীকে ডেকে আনা হয় পুনরায় কৃষকদের সকল অর্থ সম্পদ বাসন্তীপূজার নামে শোষণ করার জন্য। ভেবে দেখুন এক মা দুর্গা ও তার সাথের সকলকে তথাকথিত পুরোহিতের দল তিনবার তিনভাবে ডেকে এনে সমাজকে শোষণ করছে। এ সকল ঘটনায় বুঝতে পারা যায় তথাকথিত দেব-দেবীরা পুরোহিতদের মন্ত্রের দাস। তারা দেব-দেবীকে ইচ্ছেমতো মন্ত্রের জোরে ডেকে আনে আবার ইচ্ছামত বিসর্জন দেয় বা মেরে ফেলে। কারণ একটাই তা হলো শূদ্র নাম দিয়ে বৃহৎ জনসমাজকে ধর্মের নামে শোষণ এবং শাসন করা। এমনিভাবে হরেক রকম দেব-দেবীর কাল্পনিক মূর্তি, পুরাণ, উপপুরাণ এবং অন্য বহু কাল্পনিক গাল-গল্পকে ধর্ম নাম দিয়ে অধর্মযুক্ত পুস্তক রচনা করে কৌশলে জনসমাজের উপর ব্রাহ্মণ বা পুরোহিতের দল সমাজের উপর চালাচ্ছে শোষণ ও লুণ্ঠন।
Read More