Sunday, 28 August 2016

// // Leave a Comment

ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ সম্পর্কে বাবা সাহেব আম্বেদকর

ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ সম্পর্কে 
বাবা সাহেব আম্বেদকর
      আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, যে ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ আলাদা। অনেক ব্রাহ্মণই ব্রাহ্মণ্যবাদ-এর ধাজিয়া উড়িয়েছেন। অনেক ব্রাহ্মণ টেনে আনা হয় যে, তাঁরা মূলনিবাসী মহামানবদের সংগ্রামে  সহযোগীতা করেছেন। ইত্যাদি ইত্যাদি। এবার আপনাদের কাছে একটি প্রশ্ন করছি, ক’জন ব্রাহ্মণ জাতিব্যবস্থা নির্মূল করার জন্য সংগ্রাম করেছেন? এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে আপনারা বলতে পারেন বর্তমানে অনেক ব্রাহ্মণতো তাঁদের পদবী মুছে দিয়ে পৈতে ফেলে দিয়ে মূলনিবাসীদের  আন্দোলনে সামিল হচ্ছে। ইত্যাদি ইত্যাদি। জানি, আমাদের মধ্যে পন্ডিতের অভাব হবে না ব্রাহ্মণদের ঢাল হয়ে সামনে আসার জন্য।   
    যাইহোক, এ বিষয়ে বাবা সাহেব তাঁর জাতব্যবস্থার বিলুপ্তি (Annihilation of Caste) বইয়ে জাত ব্যবস্থা ধ্বংসের পথ-নির্দেশের প্রশ্নটির উপর  বেশি গুরুত্ব দিয়ে তিনি  বলেছেন, “আমার মতে, এই কাজ করা প্রায় অসম্ভব। আপনারা হয়তঃ এটা জানতে চাইতে পারেন যে, আমি এরকম কেন বলছি? যেসব কারণগুলি আমার মনে এই বিশ্বাস তৈরী করেছে,  তার কয়েকটি আমি উল্লেখ করব, যেগুলোকে আমি বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। তার মধ্যে একটি   হল-  বিদ্বে ভাবনা (attitude of hostility)  ব্রাহ্মণরা   জাত ব্যবস্থা ধ্বংস করতে চায় না।  বরং যাঁরা এটা নষ্ট করার জন্য আন্দোলন করছে, তাদের বিরোধিতা করাই এঁদের কাজ। ভারতবর্ষে রাজনৈতিক সংস্করার এমনকি অনেক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সংস্কার আন্দোলনেরও নেতৃত্ব দিয়েছে ব্রাহ্মণরা। কিন্তু জাত ব্যবস্থার নির্মূল করণ আন্দোলনের অংশগ্রহন  করার জন্য ব্রাহ্মণদের পাওয়া যায় না। জাত ব্যবস্থার বাঁধা ভাঙ্গতে সেনাবাহিনী গড়তে এগিয়ে আসে না।
      এরকম আশা করা যেতে পারে কি, ভবিষ্যতে  কোন ব্রাহ্মণ এই জাত ব্যবস্থা ধবংসের জন্য নেতৃত্ব করবেন? আমি বলছি- কখনও নয়। আপনারা জানতে চাইতে পারেন যে, এই পিছনে কারণ কি যার জন্য ব্রাহ্মণরা সমাজ সংস্কার থেকে দূরে সরে থাকে? আপনারা হয়তঃ তর্ক করবেন যে, ব্রাহ্মণরা জানে যে, হিন্দু সমাজের ধ্বংসের কারণ হল জাত-ব্যবস্থা। উচ্চশিক্ষিত ও কৃষ্টিসম্পন্ন শ্রেণী হিসাবে তারা জাত ব্যবস্থার পরিনামের প্রতি উদাসীন থাকতে পারবে, এটা আশাকরা ঠিক নয়। আপনারা হয়তঃ এই তর্ক ও করতে পারেন যে, অনেক ধর্মনিরপেক্ষ ব্রাহ্মণ আছে। যদি পুরোহিত শ্রেনীর ব্রাহ্মণরা জাত ব্যবস্থা ভাঙতে না চায়, তাহলে ধর্মনিরপেক্ষ ব্রাহ্মণরা জাতব্যবস্থার নির্মূল করতে চাইবে। এই সব যুক্তি-তর্ক শুনে বেশ যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়। কিন্তু এই সব যুক্তি-তর্কের মধ্যে একটি কথা ভুলে যাওয়া হয়। সেটি হল জাতব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটলে ব্রাহ্মণ জাতির খুব ক্ষতি হবে। এই সব তথ্যকে ধ্যান রেখে আমরা এই আশা করতে পারি কি, ব্রাহ্মণরা এই ধরনের আন্দোলনের নেতৃত্ব করতে রাজি হবেন; যার পরিণাম হিসাবে ব্রাহ্মণ জাতির শক্তি এবং সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে? পুরোহিত ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করতে ধর্মনিরপেক্ষ  ব্রাহ্মণদের পাওয়ার আশা করা যুক্তিযুক্ত হবে কি? আমার বিচারে, ধর্মনিরপেক্ষ ব্রাহ্মণ এবং পুরোহিত শ্রেনীর ব্রাহ্মণদের মধ্যে পার্থক্য করা অর্থহীন। তারা উভয়েই পরস্পরের আত্মীয়। তারা একই শরীরের দু’টি বাহু। এক বাহুর অস্তিত্বের জন্য অন্য বাহু যুদ্ধ করতে বাধ্য। (Is it reasonable to expect the secular Brahmins to take part in a movement directed against the priestly Brahmins? In my judgment, it is useless to make a distinction between the Secular Brahmins and Priestly Brahmins. Both are kith and kin. They are two arms to the same body and one bound to fight for the existence of the other.)” 
    হ্যাঁ, এখানে দেখলেন তো বাবা সাহেব বলেছেন, তাঁর বিচারে ধর্মনিরপেক্ষ ব্রাহ্মণ (যাঁদেরকে আমরা ব্রাহ্মণবাদের উর্ধে ধরতে পারি আমাদের পান্ডিত্য দিয়ে) আর পুরোহিত শ্রেণীর ব্রাহ্মণ (যাঁদেরকে আমরা ব্রাহ্মণ্যবাদকে পুষ্ট করা বা রক্ষাকারী বলতে পারি আমাদের পান্ডিত্য দিয়ে) এই দুই শ্রেণীর ব্রাহ্মণদের মধ্যে পার্থক্য করা অর্থহীন। তাঁরা উভয়েই পরস্পরের আত্মীয়। তাঁরা একই  শরীরের দু’টি বাহু। এর পরে আর বলার কিছু থাকে কি? হ্যাঁ, আপনাদের কাছে অনেক কিছু বলার আছে, সেটা আমরা জানি। তা না হলে তো আপনাদের আধিপত্য এবং অন্য অনেক কিছু হাত ছাড়া হয়ে যাবেন। তাই নয় কি?      

    

0 comments:

Post a Comment