Sunday, 21 September 2014

// // 1 comment

বাবা সাহেবের ধম্ম পরিবর্তন, ধম্ম চক্র প্রবর্তন ও ও সম্রাট অশোকের বিজয়া দশমী -লেখক- জগদীশ রায়

          

              বাবা সাহেবের ধম্ম পরিবর্তন, ধম্ম চক্র প্রবর্তন ও সম্রাট অশোকের বিজয়া দশমী। 
লেখক-জগদীশ রায় (মুম্বাই) 
    আমরা জানিযে, 14October 1956 সালে বাবা সাহেব ডঃ বি. আর. আম্বেদকর  বৌদ্ধধম্ম গ্রহণ করেছিলেন বা স্বধম্মে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। 
    কিন্তু এখানে বিশেষ আলোচ্য বিষয় হচ্ছে বাবা সাহেব 14October 1956 হিসাবে বৌদ্ধধম্ম গ্রহণ করেননি। তিনি 1935 সালে 13October মহারাষ্ট্রের ইওলা (Yeola) তে ঘোষণা করেন যে, ‘আমি হিন্দু ধর্মে জন্ম গ্রহণ করেছি, যেটা আমার হাতে ছিলনা। (অর্থাৎ যে ক্ষেত্রে আমি কিছু করতে পারিনা।) কিন্তু আমি হিন্দু হয়ে মৃত্যু বরণ করব না।’ এই ঘোষণার স্থলকে  বাবা সাহেব নাম দিয়েছেন–‘মুক্তিভুমি’
    এখন কথা হচ্ছে,1935 সালে ধর্ম পরিবর্তনের কথা ঘোষোণা করেন, কিন্তু তিনি 1956 তেই কেন ধর্ম পরিবর্তন করেন? 1935 থেকে 1956 পর্যন্ত তো অনেক সময়। তবে তিনি 1956 কেই কেন ধম্মপরিবর্তনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন ? এর পিছনে কি কোন বিশেষ কারণ আছে ?
    হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী বাঙ্গালিদের দুর্গা পূজার মধ্যে একদিন হয় দশমী। প্রচলিত কথায় বলা হয়, রাম, রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে বিজয়ী হয় ; তাই এই বিজয় দশমী। বাস্তবে কি তাই? দুর্গা পূজার ইতিহাস তো সেদিনকার। আর রাম বিজয় প্রাপ্ত হয়েছিল বলে বিজয়া দশমী করা হলে বাংলার  বাইরে কেন হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী বাঙালিরা ছাড়া অন্য কেউ এই পূজা করেন না?
আসলে এই বিজয়া দশমীর ইতিহাসকে Encounter করা হয়েছে। আর ব্রাহ্মণ্যবাদীরা তাদের সুবিধা মত কাহিনীতে রূপান্তারিত করেছে।  
    এবার আসি আসল প্রসঙ্গে। মহারাষ্ট্রে বিশেষ করে বৌদ্ধধম্মে বিশ্বাসীরা বিজয়া দশমীকে খুব করে পালন করেন। কারণ বাবা সাহেব বিজয়া দশমীর দিন ধর্মান্তর করেছিলেন। কিন্তু সাধারণতঃ প্রচার হয় যে, বাবা সাহেব 14 October ধর্মান্তর করেছিলেন। এর পিছনে আসল ঘটনা কি ?   
    আপনারা অনেকেই হয়তঃ জানেন যে, সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধম্ম গ্রহণ করেছিলেন কলিঙ্গ  বিজয়ের পর। সম্রাট অশোকের জীবনে ধম্মানুভুতির মাইলস্টোন হিসাবে কলিঙ্গ বিজয়কে মনে করা হয়। তিনি যে দিন এই বৌদ্ধধম্ম গ্রহণ করেন, সেই দিনটি ছিল আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমীর দিন। তিনি হিংসার নিতি থেকে মুক্ত হয়ে বিজয় প্রাপ্ত হন। সারা দেশে পালিত হোল উৎসব। শারদোৎসব। অর্থাৎ শরৎকালের বিজয় উৎসব। সম্রাট অশোকের ধম্মবিজয় উৎসব। যা পরবর্তীকালে সারা ভারতবর্ষে রাষ্ট্রীয়  উৎসবে পরিণত হয়।  বাবা সাহেব কিন্তু 14 October  মনে করে ধর্মান্তর করেননি। তিনি একাধারে সম্রাট অশোকের প্রতি যেমন শ্রদ্ধার্পণ করেন। তেমনি 1956 সালের October মাসের দশমীর দিনকে ঐতিহাসিকভাবে স্মরণ করেন এবং সবাইকে এই দিনটির গুরুত্ব বোঝাতে চেয়েছিলেন। তাই October মাসের দশমীর দিনটাকে বৌদ্ধিক ভাবনায় বলা হয় অশোক বিজয় দশমী সেই অশোক বিজয় দশমীকে Encounter করে দিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিজয় দশমীতে রূপান্তরিত করেছে।   
     এখানে একটা প্রশ্ন থেকে যায় যে, বাবা সাহেব ১৯৩৫ সালে ঘোষণা করেন তিনি হিন্দুধর্ম ত্যাগ করবেন; কিন্তু তিনি অন্য ধর্ম গ্রহণ করার জন্য ১৯৫৬ পর্যন্ত কেন অপেক্ষা করলেন? 
এর পিছনে নিশ্চয় বাবা সাহেবের গভীর ভাবনা থেকে থাকবে। সেই গভীর ভাবনা হচ্ছে- ১৯৫৬ সালে গৌতম বুদ্ধের সঙ্ঘে প্রবেশের ২৫০০ সাল পূর্ণ হচ্ছিল। যেটা ঐতিহাসিকভাবে খুবই মহত্বপূর্ণ।

      গৌতম বুদ্ধের জন্ম  খৃষ্টপূর্ব ৫৬৩ সালে। তিনি ১৯ বছর বয়সে সঙ্ঘে প্রবেশ করেন। যেটা সঙ্ঘের নিয়ম ছিল। বুদ্ধের এই সঙ্ঘে প্রবেশের ২৫০০ বছর পূর্ণ হচ্ছিল ১৯৫৬ সালে।
(৫৬৩-১৯=৫৪৪+১৯৫৬=২৫০০) এই দিনটিকে ঐতিহাসিকভাবে স্মরণ করার জন্য বাবা সাহেব ১৯৫৬ তে বৌদ্ধম্ম  গ্রহণ করেছিলেন বা স্বধম্মে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। 
এবার এই Encounter এর ইতিহাস কিছুটা আলোচনা করা যাক। তারপর আবার এই দিন সম্পর্কে আলোচনায় আসা যাবে।
     ব্রাহ্মণরা যখন প্রতিক্রান্তি করে অর্থাৎ পুষ্যমিত্র শুঙ্গ দ্বারা সম্রাট অশোকের নাতি(চতুর্থ পিড়ি)  বৃহদ্রথকে বধ করে (185 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে) ব্রাহ্মণ্যবাদের সুত্রপাত করে। তারপরেই রামায়ণ লেখা হয়। এর পূর্বে রাম  আর রাব ছিলই না। রাবণের যে  প্রতীক তাঁকে রাক্ষস বলে, অশুভ-এর প্রতীক বলে ঘোষণা করে আর রাবণের ‘দশমুখ’ দেখানো   হয়। আসলে বুদ্ধিজমে ‘দশপারমিতা’-এর বেশী মান্যতা দেওয়া হয়। আর সে জন্য রাবকে দশ  মুখওয়ালা বানিয়ে দেখানো হয়েছে। আট, নয় বা এগার মুখ ওয়ালা কেন দেখানো হয় নি ?   
    ব্রাহ্মণরা যখন প্রতিক্রান্তি করে তখন থেকে ভারতে বিজয়া দশমী উৎসব হিসাবে  পালন করে। আর সম্রাট অশোক যে বিজয় প্রাপ্তি করেন দশমীর দিন তাকে সমাপ্ত করার জন্য ষড়যন্ত্র চালু করে। মারাঠীতে যাকে ‘দসরা’ বলে, আর হিন্দীতে লোকেরা একে ‘দশ্‌হরা’ বলে। যেটা দশ মুখওয়ালা রাবণকে ‘দশহরা’ নাম দিয়েছে, আর বিজয়া দশমীকে বিলুপ্ত করে দিয়েছে। আর এর  জন্য রাবণকে জ্বালানোর প্রকৃয়া করে।
    ফিরে আসি পূর্বের আলোচনায়। বাবা সাহেব যে ধম্ম গ্রহন করেছিলেন, এখানে 14 October  কিন্তু মহত্ত্বপূর্ণ নয়। মহত্তপূর্ণ হচ্ছে-‘অশোক বিজয়া দশমী’র যেটা 1956 সালে হয়েছিল। আর দিনটি ছিল 14 October. তাই আমাদেরকে বাবা সাহেবের ধর্মান্তরের দিনকে 14 October না বলে ‘অশোক বিজয় দশমী’-এর দিন বলা বা লেখা উচিত। কারণ বাবা সাহেবের উদ্দেশ্যে ছিল আশ্বীন মাসের সারদ শুক্লা বিজয়া দশমীকে পালন করা। কারণ সম্রাট অশোকের ধম্মপরিবর্তন দিন ইংরেজী তারিখ হিসাবে পালিত হয়নি। কিন্তু 1956 সালের 14 October ছিল অশোকা বিজয়া দশমীর দিন। তাই আমাদেরও বিজয়া দশমীকে সম্রাট অশোকের ‘অশোক  বিজয় দশমী’ দিন এবং বাবা সাহেবের ‘ধম্মচক্রপরিবর্তন’ দিন হিসাবে পালন করা উচিত।  কারণ বাবা সাহেব যে দিন অর্থাৎ এই অশোক বিজয় দশমীর দিন ধর্মান্তর করেন সেটা কে ‘ধম্মচক্র প্রবর্তন’ দিন বলা হয়। অর্থাৎ সম্রাট অশোকের বৌদ্ধধম্ম গ্রহণের দিন হচ্ছে অশোক বিজয়া দশমী, আর এই অশোক বিজয়া দশমীর দিন বাবা সাহেব যে বৌদ্ধধম্ম গ্রহণ করেন তাকে নতুন নাম দেওয়া হয় ‘ধম্মচক্র প্রবর্তন’ দিন । ধম্মচক্র প্রবর্তন এর অর্থ হচ্ছে- বৌদ্ধ ধম্মের চাকা (সমতা, স্বতন্ত্রতা, বন্ধুতা ও ন্যায়) কে গতিশীল করা। এই ইতিহাস আমাদের জানা ভীষণ দরকার বলে মনে করি। কারণ সঠিক ইতিহাসই সঠিক দিশা নির্দেশ করে।আশা করি, এই লেখাটি আমাদের  বর্তমান এবং আগামী প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে সাহায্য করবে ।  
                             ____________________________

1 comment:

  1. খুব সুন্দর বিশ্লেষণ করা হয়েছে ।
    এই বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক ।

    ReplyDelete