Monday 27 April 2020

// // Leave a Comment

অজ্ঞানতাই সব বিসমতার মূল - গৌতম বুদ্ধ



অজ্ঞানতাই সব বিসমতার মূল - বুদ্ধ  

     সারিপুত্ত আর মুগলানার গুরু সঞ্জয় নিজেকে মহান জ্ঞানী ব্যক্তি বলে মনে করেন। তাঁর জ্ঞানের প্রকাশ করার জন্য একবার বুদ্ধের কাছে এসে তর্ক যুদ্ধ শুরু করতে চান।
বুদ্ধ তাঁকে দেখেই বলেন- সারিপুত্ত আর মুগলানার গুরু সঞ্জয় এসেছেন?

 তিনি বুদ্ধকে বলেন, যেদিন থেকে “আমার শিষ্য আপনার ভিক্ষু হয়েছে, সেই দিন থেকে আমার মন উৎসুক হয়েছে আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য। আমারও কিছু প্রশ্ন আছে। কৃপা করে তার উত্তর দেবেন কি?
বুদ্ধ – অবশ্যই।
সঞ্জয় – আপনার শিক্ষা কী? আপনার সিদ্ধান্ত (principal) কী?
আমি আমার সম্পর্কে বলছি, আমি কোনো সিদ্ধান্তের উপর ভরসা করিনা।
বুদ্ধ- আপনি কোনো সিদ্ধান্তের উপর ভরসা করেন না, এই কথার উপর ভরসা আছে কি? আপনি অবিশ্বাসী হওয়ার কথায় বিশ্বাস করেন কি?
সঞ্জয়- এটাতো তর্কের খেলা।
বুদ্ধ – না। এটা আপনার বুদ্ধির খেলা।
সঞ্জয় – আমার বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের তো প্রশ্নই নেই। প্রশ্ন হচ্ছে আপনার সিদ্ধান্ত কী?
বুদ্ধ-  যদি কোন ব্যক্তি একবার কোন সিদ্ধান্তকে স্বতসিদ্ধ হিসাবে আকড়ে থাকে, তাহলে সে সর্ব প্রথম নিজের স্বতন্ত্রতাকে নষ্ট করে দেয়। সে অন্ধবিশ্বাসী হ’তে শুরু করে। তার তখন মনে হয়, সে  যে সিদ্ধান্তকে আকড়ে আছে সেটাই সঠিক। সে যেটা বিশ্বাস করে, সেটাই সত্য। বাকী সব অসত্য। আর সেখানে বিচারের স্বতন্ত্রতার (thoughts of freedom) বলি হয়। সেখানে একই বিচার ঘিরে ধরে থাকে। মানুষ  আরো সংকীর্ণ হতে শুরু করে। এর থেকে সংঘর্ষ ও দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কোন কথার উপর বিশ্বাস বা  অবিশ্বাসের প্রতি বিশ্বাস ধোঁয়াসা সৃষ্টি করে। বিচারের ভীষণ শক্তি আছে। বিচারের শক্তি মূল পর্যন্ত  প্রসারিত থাকে। এই বিচারের আসক্তি থেকে মুক্ত হওয়া আত্মবিশ্বাসের সব থেকে বড়ো বাধা। যদি সে ঐ বিচারের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে, তাহলে পরম জ্ঞানের দ্বার কোনদিন খুলবে না।

সঞ্জয় – যদি আপনার শিক্ষা কেউ পালন করে তাহলে কি সেও বন্ধনে বাঁধা পড়ে?
বুদ্ধআমি অনুভবের (experience) কথা বলি। আমার মার্গ, কোনো সিদ্ধান্ত নয়। কোনো দর্শন শাস্ত্রও নয়। কেবলমাত্র শুদ্ধ অনুভব এটা। পরম সত্যের অনুভব।
সঞ্জয় – কিন্তু বুদ্ধ, যদি কেউ আপনার মার্গকেই তার সিদ্ধান্ত মনে করে তাহলে?

বুদ্ধ- আমার মার্গ (path) অভ্যাসের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এটাকে কোনো স্থুল পদার্থের মতো ধরা যায় না বা তাকে পুজনীয় বানানো যায়না। আমার জ্ঞানকে এরকম ভাবা যায়, একটা নৌকার মতো। নৌকার সাহায্যে নদী পার হওয়া যেতে পারে। কিন্তু নদী পার হওয়ার পর আমরাতো নৌকাকে মাথায় নিয়ে যাই না। তাই না?

সঞ্জয় –মনে হচ্ছে আপনার চরণে লুটিয়ে পড়ি। কিন্তু এখনো এরকম কিছু ভাবনা আছে যার আসর এখনো পর্যন্ত আমার মনের মধ্যে রয়েগেছে।

বুদ্ধতিন প্রকারের ভাবনা হয়। সুখ, দুঃখ ও প্রাকৃতিক। এই তিন ভাবনার মূল আমাদের শরীর আর মনের মধ্যেই স্থির আছে। ভাবনা ঢেউ এর মতো ওঠে। আবার নিজেই বিলিন হয়ে যায়। আমি বলি প্রথমে এই ভাবনার ঢেউ ওঠার গভীরতা দেখ, বোঝ, জানো। এই ঢেউ কোথা থেকে উতপন্ন হচ্ছে। সুখের ভাবনা বা দুঃখের ভাবনাই হোক না কেন, শুধুমাত্র দেখো এটা কোথা থেকে  উৎপন্ন হচ্ছে। তার উৎস কী? যখন তার মূলে পৌঁছাবে সেখানে দেখতে পাবে শুধুমাত্র শূন্য।  শূন্য স্থানটা এমন, যেন একটা নীল আকাশ। জায়গাটা শূন্য। কিন্ত সবকিছু তারমধ্যে মিলিত হয়ে আছে।

সঞ্জয়- একটা চাদরের মতো।

বুদ্ধ -শুধু অভ্যাস করো। ধীরে ধীরে অভ্যাস করতে করতে এটা পাবে যে, ঢেউ ওঠা বন্ধ হয়েগেছে। পরম শান্তির ঝীল (lake) আমাদের অন্তরে আছে সেটা বিচলিত হচ্ছে না। তারপর আরো গভীরে গেলেন বুঝতে পারবে ভুল কোথায় হচ্ছিল। যেটা নশ্বর (mortal) তাকে অবিনশ্বর  ভেবে বসে আছো। অজ্ঞানই সকল বিসমতার মূল। আমি শুধুমাত্র জ্ঞান (wisdom) এর কথা বলছি। জ্ঞান থেকেই অজ্ঞানতা দূর হবে। অজ্ঞানতা পুজা-পার্বণ করে দূর করা যায় না। ব্রত পালন করে দূর করা যায় না। না কি দান করে দূর করা যাবে। বা কোনো মেডিটেশন করে সমাপ্ত হবে। অনেক সময় পর্যন্ত নিদ্রায় আছো সঞ্জয়। ওঠো, জাগো। নিজেকে জানো।  (আত্মদীপভব)।

সঞ্জয় – আপনি দর্পন (আয়না)। আপনার প্রতি দৃষ্টি দিয়ে দেখার পর আজ আমি আমার সত্যের প্রতিবিম্ব দেখেছি। আর আমি অজ্ঞানতার জীবন ব্যতীত করবো না। আমাকে আপনার ভিক্ষু স্বীকার  করুন। আমি বুআমি বুদ্ধের শরণে যাচ্ছি। ‘ধম্ম’ যেটা আপনার স্বরূপ আমি তার শরণে যাচ্চি। আমি  সঙ্ঘের শরণে যাচ্ছি। বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি। ধম্মং শরণং গচ্ছামি। সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি।         
Read More