Sunday 28 June 2020

// // Leave a Comment

সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন না করে সমাজের কোন উন্নতি করা কি সম্ভব? লেখক – বাবাসাহবে ড. আম্বেদকর


সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন না করে সমাজের কোন উন্নতি করা কি সম্ভব?
লেখক – বাবাসাহবে ড. আম্বেদকর 
( from Annihilation of Caste)


যতক্ষণ আপনারা সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তন না করবেন, ততক্ষণ তেমন কোন উন্নতি করতে পারবেন না। আপনারা আপনাদের সম্প্রদায়ের লোকদের একত্রে সমাবেশ করতে পারবেন না, কোনো আক্রমনের জন্য বা কোনো প্রতিরক্ষার জন্য জাতি-ব্যবস্থার ভিতের উপর আপনারা কোনো কিছু নির্মাণ করতে পারবেন না।  আপনারা রাষ্ট্রের নির্মাণ করতে পারবেন না। আপনারা আদর্শ নীতিবোধ ও তৈরি করতে পারবেন না। জাতিব্যবস্থার ভিতের উপর আপনারা যা কিছু নির্মাণ করুন না কেন সেটা ভেঙ্গে পড়বে। সেটা কখনও স্থায়ী হবে না।
    এখন আর একটি প্রশ্নের বিচার- বিশ্লেষণ করতে বাকি আছে। সেই প্রশ্নটি হল- হিন্দু সমাজ ব্যবস্থায় সংস্কার কিভাবে করা যায়? জাতিপ্রথাকে কিভাবে ধ্বংস করা যায়? এটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নএই ধরনের মতামত করা হয়েছে যে, জাতব্যবস্থার সংস্কার করতে হলে প্রথম পদক্ষেপ হল জাতের উপবিভাগগুলি (Sub-castes) সমাপ্ত করতে হবে। এই মতবাদের পিছিনে যুক্তি হল যে, আচার ব্যবহার এবং মর্যাদাবোধের দিক দিয়ে বিভিন্ন জাতের চেয়ে একটি জাতের উপবিভাগগুলির মধ্যে বেশি সাদৃশ্য আছে। আমি মনে করি, এটা একটা ভুল যুক্তি। দক্ষিণ ভারতের ব্রাহ্মণদের তুলনায় উত্তর ভারতের এবং মধ্য ভারতের ব্রাহ্মণদের সামাজিক পদমর্যাদা নিম্নস্তরের। উত্তর এবং মধ্য ভারতের ব্রাহ্মণরা শুধুমাত্র রান্না করা এবং জল আনার কাজ করে,  অথচ দক্ষিণ ভারতের ব্রাহ্মণরা উচ্চ সামাজিক মর্যাদা দখল করে আছে। অপরদিকে উত্তর ভারতের বৈশ্য ও কায়স্থরা এবং দক্ষিণ ভারতের ব্রাহ্মণরা শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বুদ্ধিতে ও সামাজিক মর্যাদায় সমকক্ষ। আবার আহারের ব্যাপারেও দক্ষিণ ভারতের ব্রাহ্মণদের সঙ্গে কাশ্মীর ও বাংলার   ব্রাহ্মণদের কোন মিল নেই। দক্ষিণ ভারতের ব্রাহ্মণরা নিরামিষাশী এবং কাশ্মীর ও বাংলার ব্রাহ্মণরা আমিষভোজী। আবার আহারের ব্যাপারে দক্ষিণ ভারতের ব্রাহ্মণ এবং গুজরাটী মারোয়ারী, বনিয়া এবং জৈন প্রভৃতি অব্রাহ্মণদের সঙ্গে অনেক বিষয়ে মিল আছে। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের ব্রাহ্মণদের মধ্যে ঘনিষ্ট সামাজিক মিলন ঘটানোর চেয়ে উত্তর ভারতের কায়স্থ এবং দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড় ও অব্রাহ্মণদের মধ্যে ঘনিষ্ট সামাজিক মিলন সহজসাধ্য


    ধরুন, এক জাতির উপ-বিভাগগুলির মধ্যে ঘনিষ্ট সামাজিক মিলন সম্ভব হলে এবং উপবিভাগগুলির বিলোপ সাধন হলে জাত ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে, এর কি গ্যারান্টি আছে? অপর পক্ষে একটি জাতির উপবিভাগগুলির বিলুপ্তি হওয়ার সাথে সাথে জাতিভেদ প্রথার বিলুপ্তি হওয়ার পথ একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, জাতের উপবিভাগের বিলুপ্তি ঘটানোর এই তত্ত্ব অবাস্তব এবং অকার্যকারী।
   জাতিব্যবস্থা সমাপ্ত করার আর একটি পদ্ধতি হচ্ছে- অসবর্ণদের মধ্যে একত্রে বসে খাওয়া-দাওয়া শুরু করাকিন্তু আমার মতে অসবর্ণ  ভোজন জাতব্যবস্থা নামক সামাজিক ব্যধির আসল  ঔষধ নয়। অনেক জাতির মধ্যে অসবর্ণ ভোজনের বাধা নেই। কিন্তু সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে, অসবর্ণ  ভোজন স্বজাতি প্রীতি এবং জাত চেতনাবোধ ধ্বংস করতে সাফল্য লাভ করতে পারেনি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ‘জাতিভেদ’ প্রথা নামক সামাজিক ব্যাধির খাঁটি ঔষধ হল ‘অসবর্ণ বিবাহ’।  শুধুমাত্র রক্তের সংমিশ্রণই আত্মীয়তা বোধ সৃষ্টি করতে পারে।  যতক্ষণ  বিভিন্ন জাতের মধ্যে আত্মীয়তা বোধ সৃষ্টি না হবে, ততক্ষণ জাত ব্যবস্থা নির্মূল হবে না। জাত ব্যবস্থার মাধ্যমে একজাতের লোক অন্য জাতের লোককে পর ভাবে। একমাত্র অসবর্ণ বিবাহের ফলে রক্তের মিশ্রণের দ্বারা ঘনিষ্ট মিলনের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের মধ্যে আত্মীয়তাবোধ গড়ে উঠবে। হিন্দুর সামাজিক জীবনে মিলনের পথ সৃষ্টি করতে অসবর্ণ বিবাহ একটি অপরিহার্য  উপাদানকোনো  সমাজ যখন অন্যান্য বন্ধনের দ্বারা দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত হয়, তখন বিবাহ মানুষের একটি সাধারণ ঘটনা। কিন্তু যে সমাজ সামাজিক মিলনের জন্য কোনো বন্ধন নেই সেখানে বিবাহ  সামাজিক বন্ধন সৃষ্টি করতে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে। জাত ব্যবস্থা ভাঙার প্রকৃত প্রতিকার হল অসবর্ণ বিবাহ। অসবর্ণ বিবাহ ছাড়া অন্য কিছু জাতিব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটাতে সক্ষম হবেনা।(The  real  remedy for breaking Caste is inter-marriage. Nothing else will serve as the solvent of Caste.)
   আপনাদের ‘জাতপাত তোড়ক মন্ডল’ অসবর্ণ বিবাহকে উৎসাহ দিতে চায়। আমি এজন্য আভিনন্দন জানাইজাত-ব্যবস্থাই হিন্দু সামাজের দুরারোগ্য ব্যাধি। জাতপাত তোড়ক মন্ডল হিন্দু সমাজের এই রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছে এবং হিন্দুদের বলতে সক্ষম হয়েছে যে, হিন্দুদের মধ্যে দোষ-ত্রুটিগুলো কোথায়। মন্ডলের এই সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য আমি তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। সামাজিক অত্যাচারের কাছে রাজনৈতিক অত্যাচার কিছুই নয়। যে রাজনীতিবিদ সরকারের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান, তার চেয়ে যে সমাজ-সংস্কারক সমাজের অন্যায় নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান- তিনি অনেক বেশি সাহসী এবং বীর। প্রত্যেক জাতির সাধারণ মানুষ যখন অধিক সংখ্যায় অসবর্ণ ভোজন এবং  অসবর্ণ বিবাহ করতে রাজী হবে এবং তা অনুসরণ করবে তখন জাত-ব্যবস্থার কঠিন বন্ধন খসে  পড়তে বাধ্য হবে- আপনাদের এই মতবাদ নির্ভুল।
  আপনারা রোগের মূল কারণ খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু রোগ নিরাময়ের জন্য আপনাদের প্রতিবিধান কি ঠিক? আপনারা নিজেরাই নিজেদের কাছে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন। কি কারণে হিন্দুদের একটা বড় অংশ অসবর্ণ ভোজন ও অসবর্ণ বিবাহ করে না? আপনাদের এই উদেশ্য জনপ্রিয় না হওয়ার কারণ কি? এই প্রশ্নের একটি মাত্র উত্তর আছে; সেটা হ’ল, অসবর্ণ ভোজন এবং অসবর্ণ বিবাহ হিন্দুদের পবিত্র ধর্মমত ও বিশ্বসের সম্পূর্ণ বিরোধী। জাত, ইটের দেওয়াল বা কাঁটা তারের বেড়ার মত নিরেট বস্তু নয় যে সেটা ভেঙে ফেললে পথের সব বাঁধা অপসারিত হবে। জাত হল একটি ধারনা, এটা একটা মানসিক অবস্থা। অতএব জাত-ব্যবস্থা নষ্ট করার অর্থ কোনো নিরেট বস্তু ধ্বংস করা বুঝায় না। এর অর্থ বিচার পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্তজাতব্যবস্থার ফলে মানুষ মানুষের প্রতি অমানুষিক ব্যবহার করে। তবে একথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, মিঃ গান্ধিসহ যে সমস্ত সংস্কারকরা অস্পৃশ্যতা দূরীকরণের কাজে নিযুক্ত আছেন, তাঁরা হয়তঃ  বুঝতে পারেননি যে, জনগণের সামাজিক আচরণগুলি শাস্ত্র নির্দেশিত নীতিগুলির প্রতি অবিচল বিশ্বাসের ফল। শাস্ত্রের মাধ্যমে যেটা তাদের মনের মধ্যে গেথে দেওয়া হয়েছে। জনগণ শাস্ত্রের প্রতি যতক্ষণ পবিত্র ভাব ও বিশ্বাস  করা বন্ধ না করবে, ততক্ষণ তারা তাদের আচরণের পরিবরতন করবেনা। কারণ যুগযুগ ধরে বংশ পরম্পরায় শাস্ত্র নির্দেশিত আচরণ হিন্দুদের রক্তের  সঙ্গে মিশে গেছে। পিতামাতার কাছ থেকে অজ্ঞাতসারে সন্তানরাও ঐ আচরণবিধি মেনে চলছে। তাই অস্পৃশ্যতা দূরীকরণের প্রচেষ্টাগুলি বিশেষ ফলপ্রসু হয়নি। আর এর জন্য আশ্চর্য হওয়ারও কোন কারণ নেই।

     অস্পৃশ্যতা দূরীকরণের জন্য সমাজ সংস্কারকরা যে ভুল করছেন, আপনারাও সেই একই ভুল করছেন। অসবর্ণ ভোজন এবং অসবর্ণ বিবাহের জন্য আন্দোলন করা বা হিন্দুদের সংগঠিত করা, কৃত্রিম উপায়ে জোর করে খাদ্য খাওয়ানোর মত। প্রত্যেক নরনারীকে শাস্ত্র নির্দেশিত বিধির নাগপাশ থেকে মুক্ত করে দিন। শাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে যে সব অনিষ্টকর ধারণাগুলি তাদের   মনের মধ্যে গেঁথে আছে, সেই সব ভক্তি-বিশ্বাস, ধ্যান-ধারণা, মনোবাভ, বিচারকে নির্মূল করুন তখন দেখতে পারবেন যে, প্রত্যেক নরনারী অসবর্ণ ভোজন ও অসবর্ণ বিবাহ করতে দ্বিধাবোধ করবে না। শাস্ত্র দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ক্ষতিকর ধারণাগুলি মাথা থেকে বেরিয়ে গেলে তখন দেখবেন আপনারা না বললেও তারা অসবর্ণ ভোজন ও বিবাহের আয়োজন করবে।

     কথার মার-প্যাঁচের সাহায্য নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। শাস্ত্রগুলি জাত মেনে চলতে বলেনি বা শাস্ত্র বাক্যগুলি জাত-ব্যবস্থা সমর্থন করেনা, অথবা শাস্ত্রবাক্যের ব্যাকরণগত অর্থ বা তর্কশাস্ত্রের নিয়মগত ব্যাখ্যা অনুসারে জাতিভেদ প্রথার জন্য শাস্ত্রগুলি দায়ী নয়, এরকম বাকচাতুরী করে কোন লাভ হবে না। এখানে প্রধান বিচার্য বিষয় হল, সাধারণ মানুষ শাস্ত্রগুলির অর্থ কিভাবে করেছে এবং বুঝেছে। গৌতম বুদ্ধ যেরকম বলিষ্ঠ পথ দেখিয়েছিলেন আপনাদেরও সেরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বুদ্ধ এবং গুরুনানকের মত আপনাদেরও শুধু শাস্ত্র প্রত্যাখ্যান করলে চলবে না। শাস্ত্রের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করতে হবে। হিন্দুদের একথা বলতে আপনাদের সাহস থাকা দরকার। হিন্দুধর্মের মধ্যেই ত্রুতি রয়েছে। এই ধর্ম জাতব্যবস্থার সৃষ্টি করেছে। জাত খুব ভাল জিনিস এই ধারণাটি প্রত্যেক হিন্দুর মনের মধ্যে গেথে দিয়েছে। হিন্দুদেরকে এসব কথা বলতে আপনারা সাহস দেখাবেন কি?


Read More

Thursday 25 June 2020

// // Leave a Comment

*তপশিলি উন্নয়নে- যোগেন্দ্রনাথ বনাম শ্যামাপ্রসাদ* লেখক – প্রদীপকুমার বিশ্বাস




তপশিলি উন্নয়নে- যোগেন্দ্রনাথ বনাম শ্যামাপ্রসাদ

     লেখক – প্রদীপকুমার বিশ্বাস
     ১৯৪১ সালে নভেম্বর মাসে ফজলুল হক সাহেবের প্রথম মন্ত্রীসভা ভেঙে যায়। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই হিন্দু মহাসভার শ্যামাপ্রসাদের সাহায্যে দ্বিতীয়বার হকসাহেব মন্ত্রীসভা গঠন করেন। অখণ্ড বাংলায় যা “শ্যামা-হক” মন্ত্রীসভা নামে পরিচিত। অর্থাৎ মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের আগেই শ্যামাপ্রসাদ মুসলিম মন্ত্রীসভা গঠনের শরিক ও তার মন্ত্রী হয়েছিলেন।
     ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত ‘শ্যামা-হক’ মন্ত্রীসভার অন্যতম ক্ষমতার অধিকারি শ্যামাপ্রসাদ তপশিলি সমাজের উন্নতির জন্য কিছুই করেননি। তিনি শুধুমাত্র বর্ণহিন্দু তথা উচ্চবর্ণীয় হিন্দুদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে ব্যস্ত। তপশিলি সমাজের মানুষ যাতে শিক্ষা ও চাকুরীতে কোনো সুযোগ না পায়, তার জন্য শ্যামাপ্রসাদ হকসাহেবকে দিয়ে সেই ষড়যন্ত্রই করে গেছেন। শুধু তাই নয়, হকসাহেবের সময়কালে মুসলমানেরাও তপশিলি সমাজের ন্যায় শিক্ষা ও সরকারী চাকুরী থেকে সমানভাবে বঞ্চিত হয়। শ্যামাপ্রসাদের ষড়যন্ত্রে সরকারী সমস্ত সুযোগ সুবিধা বর্ণহিন্দুরা পেতে থাকে।
শ্যামা-হক মন্ত্রীসভার নেতৃত্বে সংগঠিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো-
(১) শ্যামা-হক মন্ত্রীসভায় District School Board গঠনের জন্য একটি আইন প্রণীত হয়। Board এর সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি অনুসারে তপশিলি জাতির কোনো সদস্য নির্বাচিত হতে পারবেন না।*১
(২) এই মন্ত্রীসভার সময়কালে ২৫০০ টাকার চাকুরীতে মুসলমান ও তপশিলি সমাজের কেউ কে ইনিয়োগ করা হয়নি। এক্ষেত্রে সবটাই নিয়োগ হয়েছিল বর্ণহিন্দুরা।*২
(৩) Communal Ratio Rule প্রবর্তিত থাকা সত্ত্বেও তপশিলি জাতির প্রার্থীগণকে তদানুসারে চাকুরী দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়।*৩
(৪) তপশিলি জাতির শিক্ষার জন্য বার্ষিক পাঁচ লক্ষ টাকার রেকারিং গ্রান্ট শ্যামাপ্রসাদের পরামর্শে ‘শ্যামা-হক’ মন্ত্রীসভা বন্ধ করে দেন। *৪
(৫) বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারী বৃত্তির সুযোগ অধিক মাত্রায় বর্ণহিন্দুরাই পেতে থাকে। তপশিলি সমাজের একজনকেও সরকারী বৃত্তি দেওয়া হয়নি। সুযোগের তালিকায় মুসলমানেরাও ছিল নগণ্য।   
     শ্যামা-হক মন্ত্রীসভার ঐ অপশাসনের বিরুদ্ধে তপশিলি সমাজের পক্ষ থেকে বাংলার তৎকালীন গভর্ণর জন্‌ আর্থার জি. সি. আই-ই-এর কাছে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল অভিযোগ করেন। লীগের পক্ষ থেকে নাজিমুদ্দিনও একই অভিযোগ করেন। গভর্ণর অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে হকসাহেবেক প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। অর্থাৎ দুর্নীতি পরায়ণ শ্যামা-হক মন্ত্রী সভার পতন ঘটে।
     শ্যামাপ্রসাদ, হিন্দুমহাসভা (বর্তমানে R.S.S.)-এর বর্ণহিন্দুগণ তপশিলি  সমাজের স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের এই সংগ্রামকে মেনে নিতে পারেনি। তাই শ্যামাপ্রসাদ, হিন্দুমহাসভা তথা বর্ণহিন্দুদের কাছে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল মহাশত্রুতে পরিণত হন।
    
যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল অনুধাবন করলেন অখণ্ড বাংলায় প্রধানতঃ তপশিলি ও মুসলমান সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। অথচ প্রতি ক্ষেত্রে তপশিলি ও মুসলমানেরা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দ্বারা বঞ্চিত, শোষিত, নির্যাতিত ও অপমানিত।
 ১৯৪৩ সালের ২৮শে মার্চ বাংলার গভর্ণর ‘শ্যামা-হক’ মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দেন। পরবর্তীতে শ্যামাপ্রসাদ, হকসাহেবকে পুনঃরায় প্রধানমন্ত্রী করে নিজে ক্ষমতার কেন্দ্রে যাবার চেষ্টা করতে থাকেন। অপর দিকে লীগের এম.এল.এ.গণ নাজিমুদ্দিনকে বাংলার প্রধানমন্ত্রী করবার চেষ্টা করতে থাকেন।
    এমতো অবস্থায় যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল তপশিলি সমাজের উন্নতি ও অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট হন। তিনি ২১ জন তপশিলি সমাজের এম.এল.এ.গণকে নিয়ে কলকাতার স্যাভয় হোটেলে অবস্থান করেন। তপশিলি সমাজের উন্নতি ও অধিকার রক্ষায় বিস্তর আলোচনা হয়। আলোচনার পর তপশিলি এম.এল.এ.গণ সর্বসম্মতভাবে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্তের মধ্যে দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত হলো তপশিলি সমাজের উন্নতি ও অধিকার রক্ষার শর্তগুলি যে মন্ত্রীসভা মেনে নেবে তপশিলি এম.এল.এ.গণ সেই মন্ত্রীসভাকেই সমর্থন জানাবে।  
শর্তগুলি নিম্নরূপঃ-
 (১) তপশিলি জাতির তিনজন মন্ত্রী এবং তিন জন পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী নিযুক্ত করতে হবে। *৫  
(২) তপশিলি জাতির শিক্ষার জন্য বার্ষিক পাঁচ লক্ষ টাকা রেকারিং মঞ্জুর ও কার্যকরী করতে হবে। * ৬
(৩) ‘কমিউনাল রেশিও (Communal Ration Rule)’ অনুসারে সকল চাকুরীতে তপশিলি জাতির প্রার্থী নিয়োগ করতে হবে।* ৭   
(৪) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন সভায়, District Board, Union Board, Municipality প্রভৃতি স্বায়ত্ত্ব শাসন মূলক প্রতিষ্ঠানে তপশিলি জাতির  সংখ্যানুপাতে নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষণ করতে হবে।*
(৫) ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র ভর্তির জন্য আসন সংরক্ষণ। * ৯
    স্যাভয় হোটেলে তপশিলি এম.এল.এ.গণ উক্ত শর্তের সমর্থনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। উক্ত দাবি যিনি মেনে নেবেন তাকেই নেতা মনোনীত করবার পক্ষে স্বাক্ষর করবেন।
    পরদিন শ্যামাপ্রসাদের নেতৃত্বে হকসাহেব স্যাভয় হোটেলে উপস্থিন হন। শ্যামাপ্রসাদ,  যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলসহ অন্য তপশিলি এম.এস.এ.গণকে হক সাহেবকে নেতা মনোনীত করে স্বাক্ষর  করতে বলেন। যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের নেতৃত্বে তপশিলি এম.এল.এ.গণ তপশিলি জাতির উন্নতি ও  অধিকার রক্ষার পূর্বগৃহীত শর্তগুলি তুলে ধরেন। তখন শ্যামাপ্রসাদ বলেন,-“আগে দলপতি মনোনয়ন করুন, তারপর দাবির বিষয় বিবেচনা করা যাবে।” *১০ যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলসহ তপশিলি  এম.এ্ল.এ.গণ আগে শর্ত মানা পরে নেতা মনোনীত করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। তখন শ্যামাপ্রসাদ ‘দাবি মানা সম্ভব নয়’*১১  বলে হক সাহেবকে নিয়ে স্যাভয় হোটেল ত্যাগ করেন।   
     এখানে বিশেষভাবে লক্ষনীয় শ্যামাপ্রসাদ তপশিলি জাতির উন্নয়ন ও স্বার্থের জন্য কোনো শর্ত  মানেননি এবং হক সাহেবকেও মানতে দেননি। অর্থাৎ বাংলার তপশিলি সমাজের প্রধান শত্রু ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। বর্তমানে সেই শ্যামাপ্রসাদের দর্শনের মুখোশ R.S.S.এবং B.J.P.
    পরদিবস নাজিমুদ্দিন, সুরাবর্দি, সাহাবুদ্দিন লীগের পক্ষে স্যাভয় হোটেলে উপস্থিত হন।  যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের নেতৃত্বে তপশিলি এম.এল.এ.গণের পূর্ব গৃহীত সিদ্ধান্তের শর্তগুলি নাজিমুদ্দিন ও তাঁর সহযোগীগণ মেনে নিলেন। অবশেষে ১৯৪৩ সালের ১৯শে এপ্রিল ২১ জন তপশিলি এম.এল.এ. ও লীগের যৌথ সভায় নাজিমুদ্দিনকে নেতা মনোনীত করেন। নাজিমুদ্দিনকে নেতা   মনোনীত করে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলসহ ২১ জন তপশিলি এম.এল.এ. স্বাক্ষর করেন। ২৩শে এপ্রিল (১৯৪৩) সম্মিলিতভাবে গভর্ণরের নিকট সেই স্বাক্ষরিত কপি পেশ করেন। পরদিন অর্থাৎ ২৪শে এপ্রিল নাজিমুদ্দিন ১৩ জনের মন্ত্রী পরিষদ গঠনের মাধ্যমে বাংলার প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করেন। (তৎকালীন সময়ে প্রাদেশিক শাসন কর্তাকে প্রধান মন্ত্রী বলা হতো, যেটা বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী নামে পরিচিত)।
     শর্তমতো মন্ত্রীসভায় তিনজন তপশিলি মন্ত্রী হলেন-
(১) যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল
(২) প্রেমহরি বর্মণ
(৩) পুলিনবিহারী মল্লিক।
শর্তমতো তিনজন পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী হলেন-
১) অনুকুলচন্দ্র দাস
২) বঙ্কুবিহারী মণ্ডল
৩) রসিকলাল বিশ্বাস।
    ১৯৪৩ সালের ২৬শে আগস্ট নাজিমুদ্দিন মন্ত্রীসভার বাজেট পাশ হলো। বাজেটে তপশিলি জাতির শিক্ষার জন্য বার্ষিক পাঁচ লক্ষ টাকা (বর্তমানের নিরিখে কয়েক কোটি টাকা) রেকারিং গ্রান্ট  মঞ্জুর হলো এবং সেটা কার্যকরী হলো। শুধু তাই নয়, Communal Ratio Rule অনুসারে বিদেশে তপশিলিদের উচ্চ শিক্ষার জন্য সরকারি বৃত্তি প্রদান হতে লাগল।  
      তপশিলি সমাজের জন্য শিক্ষার এই সুযোগ ও অধিকার পাওয়াটা শ্যামাপ্রসাদসহ বর্ণহিন্দুররা অশনি সঙ্কেত পেল। আর তখনই চক্তান্ত করে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল কেন লীগ মন্ত্রীসভায় জোটবদ্ধ হলেন তা নিয়ে অপপ্রচার, কুৎসা রটনা শুরু করল। অথচ হকসাহেবের মন্ত্রীসভায় শ্যামাপ্রসাদ যখন ছিলেন, তখন তিনি শুধুমাত্র বর্ণহিন্দুদের স্বার্থ রক্ষার দূর্নীতি করেগেছেন। সেকথা বলা হলোনা। বর্তমান সময়ে তপশিলি সমাজের কিছু অকৃজ্ঞ শিক্ষিত স্বঘোষিত পণ্ডিত,  যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের অবদান অস্বীকার করছে। তারা বলতে পারছেনা যোগেন মোল্লা হলে শ্যামাপ্রসাদ মৌলবী।
    যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রীসভার সৌজন্যে Communal Ratio Rule অনুসারে অর্থাৎ সংরক্ষণ মেনে তপশিলি জাতির প্রার্থীগণ সমস্ত বিভাগে চাকুরী পেতে লাগলেন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, সাব-ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, মুন্‌সেফ, কোঃ অপারেটিভ ইন্সপেক্টর,  সাবরেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন। যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের সুপারিশে বহু তপশিলি প্রার্থী রাইটার্স বিল্ডিংয়ে চাকুরী পান। ঐসব চাকুরীতে বর্ণহিন্দুদের একচেটিয়া অধিকার ছিল। যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের প্রয়াসে তপশিলি সমাজের শিক্ষাও চাকুরিতে অধিকার বর্ণবাদীরা মেনে নিতে পারলনা। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, অপপ্রচারের কারিগর বর্ণহিন্দু তথা ব্রাহ্মণ্য সমাজ।
    এতো প্রচেষ্টার মধ্যে ১৯৪৩ সালে ফুড রেশনিং বিভাগের চাকুরীতে Communal Ratio Rule অর্থাৎ সংরক্ষণ মানা হচ্ছিলনা। ফলস্বরূপ তপশিলি চাকুরী প্রার্থীগণ বঞ্চিত হতে থাকে। মোর্চার পার্টি মিটিং-এ এবিষয়ে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল নাজিমুদ্দিনের দৃষ্টিগোচর করে বলেন,- Communal Ratio Rule যদি অন্যান্য বিভাগে না মানা হয়, তবে আমার বিভাগেও ইহা মানিবনা। আমি আমার বিভাগে একটি চাকুরিও মুসলমান কিংবা বর্ণ হিন্দুকে দেবনা। সমস্ত চাকুরী তপশিলি জাতির প্রার্থীগণকে দিয়ে অন্য বিভাগের ক্ষতিপূরণ করিব।”*১২    
    এরূপ মন্তব্যে হামিদুলহক চৌধুরীসহ লীগের প্রভাবশালী সদস্যগণ ক্রুদ্ধ স্বরে যোগেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে বাক্য প্রয়োগ করতে থাকেন। তখন যোগেন্দ্রনাথও অনুরূপ ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলেন- “মিঃ হামিদুলহক চৌধুরী, লাল চোখ দেখাবেন না। লাল চক্ষু আমাদেরও আছে। আমি মন্ত্রীত্ব করি, চাকুরী নহে, এ মন্ত্রীত্ব কাহারও দেওয়া দান নহে। যে সুখের ঘর বেঁধে দিয়েছি, প্রয়োজন হলে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তা ভেঙ্গে দিতে পারি।” *১৩  
    মোর্চার পার্টি মিটিংয়ে তখন যুদ্ধংদেহী পরিস্থিতি। প্রধানমন্ত্রী ২০ মিনিট সভা স্থগিত ঘোষণা করলেন। সভার সন্বিহিত একটি কক্ষে প্রধানমন্ত্রী নিজামুদ্দিন ও সুরাবর্দি সাহেব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলেন। পুনঃরায় সভার শুরুতে যোগেন্দ্রনাথের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নাজিমুদ্দিন প্রতিকারের আশ্বাস দেন। পরবর্তী সময়ে Communal Ratio Rule মেনে তপশিলি প্রার্থীদের ফুড রেশনিং বিভাগে প্রচুর চাকুরী হয়।
শুধু তাই নয়, যোগেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে তপশিলি এম.এল.এ.গণ-তপশিলি সমাজের চাকুরীপ্রার্থীগণের  শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কে কি চাকুরী প্রার্থী সে তালিকা প্রস্তুত করে বিভিন্ন দপ্তরে পাঠাতেন। বিনা ইন্টারভিউতে তাঁরা বিভিন্ন দপ্তরে সুপারিশের বিনিময়ে চাকুরী পেয়েছেন। তপশিলি সমাজের  উন্নতির অধিকার রক্ষার স্বপক্ষে বাংলায় যোগেন্দ্রনাথের মতো প্রভাবশালী আর কেহ ছিলেন না।  
    বাংলার তপশিলি সমাজের উত্থানের নায়ক ও মুক্তির দূত যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলকে শ্যামাপ্রসাদসহ বর্ণহিন্দুদের ব্যানার হিন্দুমহাসভা(বর্তমানে R.S.S.) ও কংগ্রেস শেষ করে দিতে ষড়যন্ত্র শুরু করল।
অতএব স্পষ্টভাবেই বলা যায় ‘যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলকে রাজনৈতিকভাবে শেষ করতে না পারলে তপশিলি সমাজের অগ্রগতি কোনোভাবে ঠেকানো যাবেনা’- এই চরম সত্য উপলব্ধি করেই   শ্যামাপ্রসাদ ও কংগ্রেস বাংলাভাগ করে নিল। তপশিলি সমাজের বৃহৎ অংশ এই সত্যটি এখনো বুঝতে বা উপলব্ধি করতে পারলেন না।
________________
(সহায়ক গ্রন্থ-
*(১)(৮) এবং (৯) মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ, ১ম খণ্ড, লেখক- জগদীশচন্দ্র মণ্ডল পৃ. ৯০; প্রকাশক –চতুর্থ দুনিয়া, স্টল ২২ ভবানী দত্ত লেন। কলকাতা- ৭৩.  
* (২)&(৩) ঐ পৃ. ৯৩  
* (৪) ঐ  পৃ. ৮৭   
* (৫),(৬)এবং(৭) ঐ পৃ. ১০২
* (১০)ও (১১) ঐ পৃ. ১০৩
* (১২) ও (১৩) ঐ পৃ. ১১০   
এছাড়া অন্য সহায়ক গ্রন্থ- বাংলাভাগ হল কেন? লেখক –নিকুঞ্জবিহারী হাওলাদার।)


Read More

Tuesday 23 June 2020

// // Leave a Comment

বাংলাভাগের বিরুদ্ধে সর্বাধিক ভোট হওয়া সত্ত্বেও কেন সেটা উপেক্ষা করা হলো? কার স্বার্থে? লেখক - জগদীশ রায়

বঙ্গীয় ব্যবস্থাপরিষদে বাংলাভাগের বিরুদ্ধে সর্বাধিক ভোট হওয়া সত্ত্বেও কেন সেটা উপেক্ষা করা হলো? কার স্বার্থে?

লেখক - জগদীশ রায় 

(মূল লেখা 'ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ' থেকে তুলে দিলাম)

    কেউ কেউ একথা বলেন যে, মুসলমানরা নাকি ভারত ভাগের জন্য দায়ী। আর অন্যদের কথা ছেড়ে দিলাম যারা মহাপ্রাণের কঠোর সংগ্রামের ফল ভোগ করছে, সেই বাংলার  বিশেষ করে নমঃরা বলে, ‘যোগেন মণ্ডল বাংলা ভাগ করেছে।’ আমাদের যে ইতিহাস লেখা হয়েছে যদি সেটা মিথ্যা কথা না বলে; তাহলে দেখাযাক, বাংলাভাগের জন্য কে বা কারা কতো খানি দায়ী। আমরা যদি অতিসামান্যভাবে পর্যালোচনা করি, দেখাযায়, যে কংগ্রেস স্বাধীনতা  আন্দোলন  করেছিল; সেই কংগ্রেসই প্রথমে গান্ধীর উপস্থিতিতে ১৯৪২ সালে ১৫ই জুন,  কংগ্রেসের অধিবেশনে দেশভাগের প্রস্তাব গৃহীত হয়। যখন এই সিদ্ধান্ত করা হলো  দেশভাগ করতে হবে। তখন মুসলিম লীগ দাবী করল দেশ যদি ভাগ  করতে হয়, তাহলে মুসলমানদের  জন্য স্বতন্ত্র দেশ দিতে হবে। বাংলার শ্যামাপ্রদাসাদ মুখার্জী বললেন দেশভাগ হোক না হোক আমরা বাংলাভাগ চাই। মাউন্ট ব্যাটেন ১৯৪৭  সালের ২ জুন নিজের বাড়িতে মিটিং ডাকলেন ভারতের সর্বাপেক্ষা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে। এই মিটিং এ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ডাক পেলেন- জওহরলাল নেহেরু,  সরদার  প্যাটেল, আচার্য কৃপালনী। মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে মহম্মদ আলী জিন্না,   লিয়াকত  আলী, আব্দুররব নিস্তার আর সিখদের পক্ষ থেকে সরকার বলদেব সিং।    
    এই সাতজন মিলে দেশভাগ তথা বাংলা ভাগের সিদ্ধান্তের জন্য মিটিং করছেন। এই মিটিং এ তফশিলি জাতির বড় নেতা ড. আম্বেদরকে বা মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলকেও ডাকা হয়নি। 
     এই সাতজন একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতির কথা মাউন্ট ব্যাটেনকে বললেন যে, বাংলার এসেম্বলিতে যত মেম্বার আছেন, হিদু অধ্যুষিত  মেম্বারদের নিয়ে ও মুসলমান অধ্যুষিত  মেম্বারদের নিয়ে আলাদা আলাদা করে মিটিং করা হোক। সেই মিটিং এ যে সিদ্ধান্ত হবে সেটা মেনে নেওয়া হবে।
        ১৯৪৭ সালের বাংলার এসেম্বলিতে ২২৫ জন মেম্বার ছিলেন। যখন ভাগ করা হচ্ছে কোন কোন জেলায় হিন্দুরা আর কোন কোন জেলায় মুসলমানরা বেশি; সেখানে দেখা গেল  হিন্দু অধ্যুষিত জেলাগুলো হচ্ছে বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া, কলকাতা, ২৪ পরগনা, খুলনা, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং এই এগারোটি জেলা। এই এগারোটি জেলার এসেম্বলির সংখ্যা ৮০। এই ৮০ জনের ভিতরে ৫৪ জন হিন্দু আর মুসলমান ২১ জন। এংলো ইন্ডিয়ান ৪ জন। আর ১ জন ভারতীয় খ্রিষ্টান। মোট ৮০ জন। উক্ত ৫৪ জন হিন্দুর মধ্যে অ-কংগ্রেসী ভোটার ৫ জন। তাঁরা হলেন – ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী (হিন্দুমহাসভা), বর্ধমানের মহারাজাধিরাজ স্যার উদয়চাঁদ মহতাব (স্বতন্ত্র), মুকুন্দবিহারী মল্লিক (স্বতন্ত্র), রতনলাল ব্রাহ্মণ, (কমিউনিষ্ট) এবং জ্যোতি বসু (কমিউনিষ্ট)।   
   ২১ জন মুসলমানের বিশিষ্টদের মধ্যে মিঃ এস. এইচ. সোহারাবর্দী (মূখ্যমন্ত্রী), মিঃ এম. এ. এই. ইস্‌পাহানী (মুসলিম লীগের কার্যকরী সমিটির সদস্য), মিঃ আবুল হুসের (সম্পাদক, বঙ্গীয় মুসলিম লীগ), মিঃ আবদুর রহমান (সমবায় ও ত্রাণ দপ্তরের মন্ত্রী) এবং নবাব মুসারফ হোসেন।
     এই ১১ টি জেলার ৮০ জন এক জায়গায় বসলেন। নির্ধারিত হয়েছিল, হিন্দু শাসিত অঞ্চলের মিটিং এর অধ্যক্ষতা করবেন একজন হিন্দু আর মুসলমান শাসিত অঞ্চলের মিটিং এর অধ্যক্ষতা করবেন একজন মুসলমান। হিন্দুদের মিটিং এর অধ্যক্ষতা করেন বর্ধমানের মহারাজা উদয়চাঁদ মহতব।   
    হিন্দুপ্রধান অঞ্চলের প্রতিনিধিগণের সভায় বঙ্গবিভাগের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। উক্ত প্রস্তাবটি ৫৮-২১ ভোটে গৃহীত হয়। এই অংশের শাসনতন্ত্র প্রণনের উদ্দেশ্য বর্তমান গণপরিষদে যোগদানের প্রস্তাব ৫৮-২১ ভোটে গৃহীত হয়। একজন ভোট দেন না বা অনুপস্থিত ছিলেন।

     এবার দেখাযাক মুসলমান অধ্যুষিত ১৬টি জেলা হলো- চট্রগ্রাম, নোয়াখালি, ত্রিপুরা,  বাখরগঞ্জ, ঢাকা, ময়মনসিং, ফরিদপুর, যশোহর, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, বগুড়া, দিনাজপুর, মালদা, পাবনা, রাজশাহী ও রংপুর। এই ১৬ টি জেলার এসেম্বলির সদস্য সংখ্যা ১৪৫ জন। এর মধ্যে মুসলিম ১০৩, হিন্দু ৪১, ভারতীয় খ্রিস্টান ১ জন। মোট ১৪৫ জন।    
    ৪১ জন হিন্দুর মধ্যে ৬ জন অ-কংগ্রেসী তফশিলী সদস্য, তারমধ্যে দুজন মন্ত্রী  দ্বারিকনাথ   বারুরী ও নগেন্দ্র নারায়ণ রায়। এছাড়া মহারাজা গিরিশচন্দ্র নন্দী, সতীশ চন্দ্র  চক্রবর্তী, ভোলানাথ বিশ্বাস, হারাণচন্দ্র বর্মণ (উভয় পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী), গয়ানাথ বিশ্বাস (ময়মন সিং) এবং একজন কমিউনিষ্ট সদস্য ছিলেন।
    মুসলমান সংখ্যা গরিষ্ঠদের এলাকায় হিন্দু কিরণশঙ্কর রায়, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (যথাক্রমে  কংগ্রেস এসেমব্লি পার্টির নেতা ও উপনেতা), নেলী সেনগুপ্ত এবং পি. আর. ঠাকুর (প্রমথরঞ্জন ঠাকুর)।  
    মুসলমানদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লিখিত মিঃ এ.কে. ফজলুল হক, মিঃ মহাম্মদ আলি (রাজস্ব মন্ত্রী), মিঃ নুরুল আমিন (স্পিকার), মিঃ আহম্মদ হোসেন (কৃষি মন্ত্রী), মিঃ সামসুদ্দীন আহম্মদ (শ্রম ও বাণিজ্যমন্ত্রী) অন্যতম।
   মুসলমান প্রধান জেলাগুলির হিন্দু ও মুসলমান সদস্যগণ মিঃনূরুল  আমিনের সভাপতিত্বে একটি পৃথক সভায় মিলিত হলেনমুসলমান প্রধান অঞ্চলের সসস্যগণের সভায় বঙ্গবিভাগের বিরুদ্ধে ১০৬ জন ও পক্ষে ৩৪ জন  কংগেসী সদস্য ভোট প্রদান করেন। (৪ জন ভোট দানে বিরত থাকেন, আর ১ জন অর্থাৎ যোগেন্দ্রনাথ মন্ত্রী থাকার জন্য ভোট দিতে পারেন না।)  
  পশিমবঙ্গ ব্লকের দুইটি হিন্দু আসন, যথাক্রমে কলকাতা পূর্ব (সাধারণ) এবং জলপাইগুড়ি- শিলিগুড়ি সাধারণ (তফশিলি আসন দুটিকে ভোট থেকে বিরত রাখা হয়। তাছাড়া, বাখরগঞ্জ  দক্ষিণ- পশ্চিম সাধারণ ( তফশিলি) আসনটিকেও ভোট থেকে বিরত রাখা হয়।   
বাখরগঞ্জ দক্ষিন- পশ্চিম সাধারণ তফশিলি আসনটির নির্বাচিত সদস্য আমাদের যোগেন্দ্রনাথ। যোগেন্দ্রনাথকে এই ভোটাভোটিতে অংশ গ্রহণে বিরত রাখার কারণ যোগেন্দ্রনাথ তখন  অন্তর্বর্তী সরকারে আইনমন্ত্রী। সুতরাং ব্যবস্থা পরিষদের এই ভোটাভোটিতে তাঁর পক্ষে যোগদান করা আইনগত দিক থেকে বাধা ছিল। এতে প্রামণ হয় ভারত তথা বাঙলা ভাগের  ব্যাপারে যোগেন্দ্রনাথের কোনও মতামত গ্রহণ করা হয়নি।
     এই অংশের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করবার জন্য বর্তমান গণপরিষদে যোগদান করবে না, মুসলমান প্রধান অঞ্চলগুলির জন্য যে নতুন গণপরিষদ গঠিত হবে, সেই গণপরিষদে যোগদান  করবে তার একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। মুসলমান প্রধান অঞ্চলগুলির জন্য যে নতুন গণপরিষদ গঠিত হবে, সেই গণপরিষদের যোগদানের প্রস্তাবের পক্ষে ১০৭ জন ও বিপক্ষে  ৩৪ জন ভোট প্রদান করায় প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। মুসলমান প্রধান সদস্যদের সভায় আর একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তাহল উক্ত জেলাকে পূর্ববঙ্গ নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নিতে স্বীকৃত আছে। ১০৫-৩৪ ভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। এই অংশের কংগ্রেসী ৩৪ জন সদস্য প্রত্যকটি প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

গণভোট কেন হলো না, হলে কী হতো?
    ‘এইভাবে বাংলাভাগ নির্ধারিত হল। যাঁরা এই ঐতিহাসিতক সিধান্ত গ্রহণ করে বাংলার অখণ্ড মানচিত্র বদলে দিলেন তাঁরা কি জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি ছিলেন? বাংলার ভবিষ্যত নির্ধারণে গণভোট করা হল না কেন? এপ্রিল মাসের শেষের দিকে যোগেন্দ্রনাথ একটি বিবৃতি দিয়ে বলেন, গণভোট করলে দেখা যাবে অধিকাংশ অমুসলমান বাংলাভাগের বিরুদ্ধে। (সুত্র-  The Statesman, 23 April,1947), ১৮ জুন শরৎচন্দ্র বসু গান্ধিকে চিঠি লিখে দাবি করলেনঃ “আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, যদি গণভোট করা হতো তাহলে হিন্দুরা বিপুল সংখ্যাধিক্যে বাংলা বিভাজনের বিরুদ্ধে ভোট দিতেন।” (সুত্র-Abul Hashim, In retrospection, p-161)গান্ধি, নেহেরু, প্যাটেলরা গণভোটে রাজি হলেন না কেন? কারণ,  গণভোট করলে তাঁদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবেনা। (তথ্য সংগৃহীত- বাংলা   ভাগ কেন হল? লেখক- নিকুঞ্জ বিহারী হাওলাদার পৃ.১১২) 
    কথায় বলে চোরের মার বড় গলা। যাদের ভোটে বাঙলা ভাগ হল, যার ফলে উভয় বাঙলার বিপুল সংখ্যক লোক তাদের পৈতৃক বাসস্থান হতে উৎখাত হলেন, স্বাধীন দেশে যারা পরিচিত হলে উদ্বাস্তু বলে, আজ তাদের ভাগ্য নিয়ে সারা রাজনৈতিক ফয়দা তুলছেন, সেই সকল স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক নেতা ও সমর্থকদের সঙ্গে সমসুরে সুর মিলিয়ে যোগেন্দ্রনাথের স্ব-জাতীয় কতিপয় স্বার্থান্বেষী উচ্চস্বরে চিৎকার করেন- বাঙলা ভাগের জন্য প্রধানত যোগেন্দ্রনাথই দায়ী। সরল প্রাণ বাঙালি এদের ক্ষমা করলেও ইতিহাস এদের ক্ষমা করবে না।
(তথ্য সংগ্রহ- মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ৩য় খন্ড পৃঃ ১৪৭-১৫০ লেখক – জগদীশ চন্দ্র মন্ডল )
    আমরা কি দেখলাম, বাংলা ভাগের পক্ষে মোট প্রদত্ত ভোট (হিন্দুপ্রধান অঞ্চল ৫৮+  মুলসমান প্রধান অঞ্চন ৩৪) = ৯২ আর বাংলা ভাগের বিপক্ষে মোট প্রদত্ত ভোট (হিন্দুপ্রধান  অঞ্চল ২১ + মুসলমান প্রধান অঞ্চল ১০৬)= ১২৭। বাংলাভাগের বিপক্ষে বেশি ভোট পড়ল ১২৭-৯২= ৩৫টি।  এর পরও বাংলা ভাগ হলো কেন?    
    তাহলে আপনারাই বলুন বাংলা ভাগ কারা করলো? মুসলমানরা? যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল? না কি বর্ণহিন্দুরা? আমি যে কথা দিয়ে এই লেখা শুরু করেছিলাম, যে দেশভাগ হোক না হোক বাংলাকে ভাগ করতে হবে। এবার মিলিয়ে নিন কে বা কারা এই বাংলাভাগের জন্য দায়ী?।
এই লেখার সমাপ্তি টানছি বাবা সাহেব ড. আম্বেদকরের একটি দুঃখজন ও বাস্তব উদ্ধৃতি দিয়ে-
    যোগেন্দ্রনাথকে ভুলতে বসেছে বাংলার নমঃশূদ্র সহ তফশিলি জাতির বুদ্ধিজীবীরা। এটাই Educated Scheduled Caste Culture. এই সকল শিক্ষিত তফশিলি বুদ্ধিজীবীদের সম্বেন্ধে ড. আম্বেদকর বলেন-
     “I do not have any danger from others, but I feel danger from our own people. There is some progress in education in our society. By acquiring education some people have reached to the higher positions. But these educated people have deceived (প্রতারিত) me. I was hoping from them that after acquiring high education they will serve the society. But what I am seeing is that a crowd of small and big clerks has gathered around, who are busy in filling their belly.” (তথ্য – মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৭-১৮)
------------
*বাংলাভাগের পক্ষে ও বিপক্ষে কাঁরা ভোট দিয়েছিলেন তাঁদের বিস্তারিত তথ্য পিডিএফ এ দেওয়া হল-http://www.mediafire.com/file/a9ws7w95kp7z7et/Bengal_Partition.PDF/file

Read More

Wednesday 17 June 2020

// // Leave a Comment

कहीं हम ए इतिहास भूल न जाएँ


कहीं हम ए इतिहास भूल न जाएँ
👉 वर्तमान हिन्दू धर्म, वैदिक ब्राह्मणों ने बौद्ध धर्म से चुराया और अपना लेबल चिपकाकर मार्किट में उतारा है.....
1)   गुरु पूर्णिमा-
गौतम बुद्ध ने आषाढ़ पूर्णिमा के दिन सारनाथ में प्रथम बार पांच परिज्रावको को दीक्षा दी थी। ये दिन बौद्धों के जीवन में गुरु पूर्णिमा के नाम से जाना जाता था।
बौद्ध धम्म  समाप्त करने के बाद ब्राह्मण धर्म के ठेकेदारो ने इस पर कब्ज़ा किया।
2) कुम्भ का मेला-
कुम्भ का मेला बौद्ध सम्राट हर्षवर्धन ने शुरू करवाया था जिसका उद्देश्य बुद्ध की विचारधारा को फैलाना था। इस मेले में दूर दूर से बौद्ध भिक्षु, श्रमण, राजा, प्रजा, सैनिक भाग लेते थे।
बौद्ध धर्म समाप्त करने के पश्चात ब्राह्मणों ने इसको अपने धर्म में लेकर अन्धविश्वास घुसा दिया।
3) चार धाम यात्रा-
बौद्ध धम्म में चार धामों का विशेष महत्त्व था। ब्राह्मणों ने बौद्ध धम्म के चार धामो को अपने काल्पनिक देवी-देवताओ के मंदिरो में बदल दिया और अपने धर्म से जोड़ दिया।
4) जातक कथाएँ-
जातक कथाये बौद्ध धम्म में विशेष महत्त्व रखती है। इन कथाओ द्वारा बौद्धिस्ट की दस  परमिताओं को समझाया जाता था। कुछ कथाये गौतम बुद्ध काल की और कुछ बाद की लिखी गयी है।
बौद्ध धम्म समाप्त करने के पश्चात ब्राह्मणों ने इन कथाओ का ब्रह्मणिकरण  करके अपने धर्म में लिया और इन कथाओ में कुछ काल्पनिक कथाये, कुछ ऐतिहासिक बौद्ध स्थलो को जोड़कर रामायण और महाभारत की रचना की गयी।

5) विजयादशमी-
सम्राट अशोक ने कलिंग विजय के पश्चात अश्विन दशमी के दिन बौद्ध धम्म स्वीकार किया था। ये दिन विजयदशमी के रूप में जाना जाता था। इसी दिन ब्राह्मण पुष्यमित्र शुंग ने मौर्य सम्राट बृहदर्थ मौर्य की हत्या की थी। मौर्य सम्राट दस परमिताओं का रक्षक था। दस परमिताओं का रक्षक हार गया-दशहरा बौद्ध धम्म समाप्त करने के पश्चात ब्राह्मणों ने इस दिन को काल्पनिक कथा रामायण  के राम-रावण से जोड़कर दशहरा बना दिया। तुलसीदास की रामचरितमानस के अनुसार रावण चैत्र के महीने में मारा गया था।
6) दीपदानोत्सव –
a) गौतम बुद्ध को ज्ञान प्राप्त होने के पश्चात जब गौतम बुद्ध कपिलवस्तु आये थे तो उनके पिता ने उनके आने की ख़ुशी में नगर को दीपो से सजाया था।

7)
सम्राट अशोक ने 84000 बौद्ध स्तूप/चैत्य/विहार बनवाये थे। इन स्तूप /चैत्य/विहारों का उदघाटन कार्तिक अमावस्य के दिन दीप जलाकर किया था और ये दिन दीपदानोत्सव के नाम से जाना जाता था। क्योंकि ये चैत्य/विहार/स्तूप  भारतवर्ष में ही थे इसलिए ये त्यौहार केवल भारत तक ही सिमित था।
बौद्ध धर्म समाप्त करने के पश्चात ब्राह्मणों ने इस त्यौहार को काल्पनिक कथा रामायण के पात्र राम से जोड़ दिया।
8) लिंग-योनि की पूजा पुष्यमित्र शुंग की प्रतिक्रांति के बाद प्रथम शताब्दी में शुरू हुई-
ब्राह्मणों ने बौद्धों से कहा कि ईश्वर है जिसने ये संसार बनाया है और तुम्हे भी बनाया है। बौद्धों ने ब्राह्मणों से कहा कि ईश्वर कल्पनामात्र है। ये दुनिया लिंग-योनि की क्रिया के कारण पैदा हुई है और प्राकृतिक है।
ब्राह्मणों ने प्रतिक्रिया स्वरूप बौद्धों से ताकत के बल पर लिंग-योनि की मूर्ती पूजवाई। बाद में इसको मनगढ़ंत कहानी द्वारा पुराणों में शिव से जोड़ दिया और अंधविश्वासी लोग लिंग-योनि को शिव-लिंग मानकर पूज रहे है।
9) ब्राह्मणों के व्यावसायिक केंद्र-
आज जहाँ-जहाँ पर ब्राह्मणों के काल्पनिक देवी-देवताओ के बड़े-बड़े मंदिर है वहाँ कभी बौद्ध धर्म के केंद्र होते थे,जैसे-अयोध्या, काशी, थुरा,पूरी,द्वारका,रामेश्वरम,केदारनाथ,बद्रीनाथ,तिरुपति, पंढरपुर ,शबरिमला आदि।
बौद्ध धर्म समाप्त करने के पश्चात ब्राह्मणों ने उन्हें मंदिरो में बदल दिया।
आप जाकर देखिये वर्तमान में तिरुपति बालाजी के मंदिर में मूर्ति स्वयं गौतम बुद्ध की है।इस बौद्ध मंदिर पर ब्राह्मणों ने कब्ज़ा करके बुद्ध को आभूषण और कपडे पहना दिए और उसका नाम अलग-अलग रख दिया। कोई इसको बालाजी,कोई वेंकटेश्वर, कोई शिव,कोई हरिहर,कोई कृष्ण,कोई शक्ति बोलता है।
10) पीपल की पूजा-
भारत के मूलनिवासी प्रकृति पूजक थे। पीपल के पेड़ के नीचे गौतम बुद्ध को ज्ञान प्राप्त हुआ था इसलिए पीपल की पूजा का महत्त्व और भी बढ़ गया था। ब्राह्मणों ने बौद्ध धर्म समाप्त करने के पश्चात पीपल के पेड़ के नीचे एक पत्थर गाड़ दिया और इसे पिपलेश्वर महादेव बना दिया।
11)वट वृक्ष की पूजा-
गौतम बुद्ध ने पहला उपदेश सारनाथ में वट वृक्ष के नीचे दिया था इसलिए लोग वट वृक्ष को भी पूजने लगे थे।
बौद्ध धर्म समाप्त करने के पश्चात ब्राह्मणों ने इसे अपने धर्म में लेकर सत्यवान- सावित्री की काल्पनिक कथा से जोड़ दिया।
12) सिर का मुंडन-
बौद्ध भिक्षु अपने सिर के बाल मुंडवाकर रखते थे। बौद्ध धर्म समाप्त करने के पश्चात ब्राह्मणों ने बौद्ध धर्म के प्रति नफरत फैलाने के लिए मृत्यु के पश्चात परिवार के लोगो का सिर मुड़वाने की प्रथा की शुरुवात की ।।
👉ये लेख ब्राह्मणवाद की विकृति दर्शाता है...। (Taken from what's app)


Read More