কোনো কোনো মার্ক্সবাদী মনে করেন- "আর্থিক সাম্য প্রতিষ্ঠা হলেই সামাজিক সাম্য আসতে বাধ্য।" এ বিষয়ে আম্বেদকর কী ব্যাখ্যা দিয়েছেন?
কার্ল মার্ক্সের অর্থনৈতিক সংস্কার ও আম্বেদকরের সামাজিক
সংস্কারের মধ্যে
কোনটা বেশি প্রয়োজনীয়?
লেখক- ড. বি আর আম্বেদকর (book- Annihilation of Caste)
অনুবাদক- জগদীশচন্দ্র রায়
সমাজবাদীরা কি ভারতের সমাজ ব্যবস্থা থেকে উৎপন্ন
সামাজিক সমস্যাকে উপেক্ষা করতে পারেন? ভারতের সমাজবাদীরা ইউরোপের সমাজবাদী
বন্ধুদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে (কার্ল মার্ক্সের তৈরি) ‘ইতিহাসের অর্থ – নৈতিক
ব্যাখ্যা’ ভারতীয় ঘটনাবলির উপর প্রয়োগ করার জন্য চেষ্টা করছে। তাঁরা এটা বলেন যে, মানুষ একটি অর্থনৈতিক জীব। মানুষের
কার্যকলাপ এবং আশা-আকাঙ্খা অর্থনৈতিক ঘটনাবলির দ্বারা সীমাবদ্ধ এবং
শুধুমাত্র সম্পদই সকল শক্তির উৎস। সুতরাং একথা প্রচার করেন যে, রাজনৈতিক এবং
সামাজিক সংস্কার আন্দোলন একটি ভুল পদক্ষেপ এবং সকল প্রকার সংস্কারের পূর্বে
সম্পদের সমবন্টনের জন্য অর্থনৈতিক সংস্কার অবশ্যই আগে হওয়া দরকার। ‘অন্যান্য
সংস্কারের পূর্বে অর্থনৈতিক সংস্কার হওয়া দরকার’– সমাজবাদীদের এই মতবাদের
যুক্তিগুলি বিশেষভাবে আলোচনা করা দরকার।
যেকোনো
ব্যক্তির এই ধারণা হতে পারে যে, আর্থিক প্রেরণাই একমাত্র প্রেরণা নয়, যার থেকে
মানুষ প্রেরিত হতে পারে। সামাজিক ইতিহাস ও সমাজ বিদ্যার কোনো ছাত্র একথা
গ্রহণ করতে পারেনা যে, অর্থনৈতিক ক্ষমতাই
একমাত্র ক্ষমতা। ভারতের মহাত্মা নামধারী রাজনৈতিক নেতা, সাধু-সন্যাসী, ধর্মীয়
গুরুদের সাধারণ মানুষের উপর বিরাট প্রভাব এই সত্যই প্রতিষ্ঠিত করে যে, একজন
মানুষের সামাজিক মর্যাদা অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের উৎস হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে। ভারতের লক্ষ লক্ষ টাকার মালিকেরা
কেন নিঃস্ব সাধু ও ফকিরদের কাছে মাথা নত করে তাদের নির্দেশ মান্য করে থাকে? ভারতের
লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষ তাদের সর্বস্ব বিক্রি করে কেন বেনারস আর মক্কায় তীর্থ করতে
যায়? ভারতের ইতিহাস এই উদাহরণ থেকে প্রমাণ করে যে, ধর্ম ক্ষমতার উৎস।
ভারতের
ইতিহাস এই সাক্ষ্য বহন করে যে, বিচারকের চেয়ে সামান্য একজন পুরোহিতের প্রভাব
সাধারণ মানুষের উপরে বেশি হয়। ভারতের প্রত্যেকটি বিষয় এমনকি ধর্মঘট এবং নির্বাচনের
উপরও সহজেই ধর্মীয় প্রভাব পড়ে। আর এই ধরণের ঘটনাকে ধর্মীয় সুড়-সুড়ি দিয়ে প্রভাবিত
করে। (That,
religion is the source of power in illustrated by the history of India where
the priest holds a sway over the common man often greater than the magistrate
and where everything, even such things as strikes and elections, so easily take
a religious turn and can so easily be given a religious twist.)
সাধারণ মানুষের উপর ধর্মের প্রভাব বোঝানোর
জন্য প্লেবিয়ানদের উদাহরণ আমরা দেখতে পারি। এই উদাহরণটি এই বিষয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ
উল্লেখযোগ্য ঘটনা। প্লেবিয়ানরা রোমের প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সার্বভৌমিক ক্ষমতার
অংশ লাভের জন্য সংগ্রাম করেছিল এবং তার ফলে একজন প্লেবিয়ান কনসাল(বাণিজ্য দুত)
নিয়োগের অধিকার লাভ করে। ঐ প্লেবিয়ান কনসাল প্লেবিয়ানদের ‘কমিটিয়া সেঞ্চুরিয়াটা’ (commitia Centuriata) নামক সংগঠনের দ্বারা পৃথক নির্বাচনের মাধ্যমে নিযুক্ত
হত। তারা তাদের জন্য একজন পৃথক কনসাল চেয়েছিল। কারণ,
তারা এটা উপলব্ধি করেছিল যে, শাসন ব্যবস্থা পরিচালনায় প্যাট্রিসিয়ান জাতি প্লেব
জাতির বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করে। আপাততঃ দৃষ্টিতে তারা একটা বিরাট অধিকার
অর্জন করতে সমর্থ হয়েছিল। কারণ, রোমের প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানে একজন কনসালের ভিটো
প্রয়োগ করার ক্ষমতা ছিল। কিন্তু বাস্তবে
এতে তাদের কি কোনো লাভ হয়েছিল? এর উত্তর হচ্ছে ‘না’। প্লেবিয়ানদের এরকম কোনো প্লেবিয়ান কনসাল অর্জিত হয়নি,
যাকে শক্তিশালী কনসাল বলা যেতে পারে। প্লেবিয়ানদের দ্বারা পৃথক নির্বাচনের মাধ্যমে
নিযুক্ত হওয়ায় সাধারণভাবে তাদের জন্য একজন শক্তিশালী কনসাল পাওয়া উচিত ছিল। এখন
প্রশ্ন হচ্ছে যে, তারা তাদের জন্য একজন শক্তিশালী কনসাল কেন অর্জন করতে পারেনি? এই
প্রশ্নের জবাব এই সত্য প্রতিষ্ঠিত করবে যে, সাধারণ মানুষের উপর ধর্মের আধিপত্য
কতটা সুদূর প্রসারিত। সমগ্র রোম জনসাধারণের সর্বজন স্বীকৃত ধর্মবিশ্বাস ছিল
যে, কোনো কর্মচারী সরকারি অফিসে ততক্ষণ কাজ করার উপযুক্ত নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত ‘ডেলফির
ওরাকল’ (আদেশ) ঘোষণা না করতো যে, তিনি মন্দিরের দেবীর নিকট গ্রহণযোগ্য হয়েছেন।
ডেলফির দেবী মন্দিরে প্যাট্রিসিয়ান জাতির মধ্যে থেকেই পুরোহিত পদে নিযুক্ত করত।
যখন প্লেবিয়ানরা তাদের স্বার্থ সম্পর্কে সচেতন একজন শক্তিশালী কনসাল নির্বাচন করত,
যিনি প্যাট্রিসিয়ানদের স্বার্থের পরিপন্থী, তখনই ডেলফি মন্দিরের ‘ওরাকল’ (আদেশ)
ঘোষণা করত যে, মন্দিরের দেবীর নিকট ঐ ব্যক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে প্লেবিয়ানরা
তাদের অধিকার থেকে প্রতারিত হত।
এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্য করার বিষয় এই যে,
প্লেবিয়ান জাতি নিজেরাই এইভাবে প্রতারিত হবার অনুমতি দিয়েছিল। কারণ তারাও
প্যাট্রিসিয়ান জাতির মতো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত যে, শুধুমাত্র নির্বাচনই যথেষ্ট নয়,
সেই সঙ্গে সরকারী অফিসের দায়িত্ব নিতে হলে ডেলফি
মন্দিরের দেবীর সম্মতির প্রয়োজন। যদি প্লেবিয়ানরা এই দাবি করত যে,
নির্বাচনই যথেষ্ট এবং তারপর আর দেবীর সম্মতির প্রয়োজন নেই, তাহলে তারা তাদের
রাজনৈতিক অধিকারের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারত। কিন্তু তারা সেটা করেনি। তারা এমন
একজন ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে সহমত হত, যিনি তাদের জন্য অনুপযুক্ত হতেন। কিন্তু
দেবীর জন্য উপযুক্ত হতেন। অর্থাৎ প্যাট্রিসিয়ানদের স্বার্থের অনুকূল হতেন। যে
বাস্তব স্বার্থলাভের জন্য প্লেবিয়ানরা এত কঠোর
সংগ্রাম করেছিল, সেই বাস্তব স্বার্থ তারা ত্যাগ করল; কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাস
পরিত্যাগ করতে পারল না। রোমের ইতিহাসের এই সত্য ঘটনা কি এটা প্রমাণ করেনা যে,
অর্থের চেয়ে বেশি না হলেও অর্থের সমকক্ষ ধর্মও একটি ক্ষমতার উৎস?
ভারতীয় সমাজবাদীদের চিন্তাধারায় মারাত্মক
ভুল রয়েছে যে, ইউরোপীয় সমাজের বর্তমান সামাজিক অবস্থায় সম্পদই যেহেতু ক্ষমতার উৎস,
সেই সত্য ভারতের সমাজব্যবস্থার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য এবং প্রাচীনকালে ইউরোপীয় সমাজের
ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য ছিল। ধর্ম, সামাকিজ মর্যাদা এবং সম্পদ এই তিনটি জিনিস
ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের উৎস হিসাবে কাজ
করে। এই তিনটির যে কোনো একটি দ্বারা একজন মানুষ আর একজন মানুষের
স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটা অবস্থায় একটা উপাদান প্রভাব বিস্তার করে,
অন্য অবস্থায় অন্য একটা উপাদান প্রভাব বিস্তার করে – এটাই শুধু পার্থক্য। যদি
স্বাধীনতাকে আদর্শ হিসাবে ধরা হয় এবং স্বাধীনতা বলতে একজনের উপর আর একজন মানুষের
প্রভুত্বের অবসান বোঝায় তাহলে একথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যায়না যে, অর্থনৈতিক
সংস্কারের পথই একমাত্র পথ। যাকে অবশ্যই অনুসরণ করা দরকার। যদি কোনো সময়ে কোনো
সমাজের প্রচলিত ধর্ম এবং সামাজিক অবস্থা, ক্ষমতা ও প্রভুত্ব বিস্তারের উৎস হিসাবে
কাজ করতে থাকে, তবে সেখানে সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কারকে একই প্রয়োজনীয় পথ হিসাবে
গ্রহণ করতে হবে। (Religion, social status and property are all sources of power and
authority, which one man has, to control the liberty of another. One is
predominant at one stage, the other is predominant at another stage. That is
the only difference. If liberty is the ideal, if liberty means the destruction
of the dominion which one man holds over another then obviously it cannot be
insisted upon that economic reform must be the one kind of reform worthy of
pursuit. If the source of power and dominion is at any given time or in any
given society social and religious then social reform and religious reform must
be accepted as the necessary sort of reform.)
এইভাবে ভারতের সমাজবাদীদের দ্বারা গৃহীত (কার্ল
মার্ক্সের) ইতিহাসের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা নামক তত্ত্বকে যে কোনো ব্যক্তি সমালোচনা
করতে পারেন। কিন্তু আমি একথা স্বীকার করি যে, ইতিহাসের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যাটি
সমাজবাদীদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য এটার প্রয়োজন নেই যে,-‘সম্পদের সমবন্টনই একমাত্র প্রকৃত সংস্কার
এবং সকল প্রকার সংস্কারের পূর্বে অর্থনৈতিক সংস্কার আগে হওয়া দরকার।’
যাহোক, আমি সমাজবাদীদেরকে জিজ্ঞাসা করতে চাই
যে, আপনারা সামাজিক ব্যবস্থার সংস্কার না করে অর্থনৈতিক সংস্কার করতে পারেন কি?
মনে হয়, ভারতের সমাজবাদীরা এই প্রশ্নটি বিবেচনা করেননি। আমি তাদের প্রতি অবিচার
করতে চাইনা। এ প্রসঙ্গে আমি একটা চিঠি থেকে উদাহরণ দিচ্ছি। যেটা কিছুদিন আগে আমার
একজন বন্ধুকে একজন সমাজবাদী লিখেছিলেন। এতে তিনি লিখেছেন যে, “আমি একথা বিশ্বাস
করিনা যে, যতোদিন পর্যন্ত এক শ্রেণি দ্বারা অন্য শ্রেণির উপর অন্যায় অত্যাচার
দমননীতি এবং এই ধরণের দুর্ব্যবহার চলতে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা ভারতের একটা
স্বাধীন ও মুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পারব। যেহেতু আমি সমাজবাদী আদর্শে বিশ্বাসী, তাই
আমি বিভিন্ন শ্রেণি ও গোষ্ঠীর মধ্যে পূর্ণ সমব্যবহারের নীতিতে বিশ্বাস করি। আমি মনেকরি, সমাজতন্ত্র এই সমস্ত সমস্যা এবং অন্যান্য
সকল সমস্যার একমাত্র প্রতিকার।”
এখন আমি এই প্রশ্ন করতে চাই, এইটুকু কথা বলাই
কি একজন সমাজবাদীর পক্ষে যথেষ্ট যে,
“বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে পূর্ণ সম ব্যবহারের নীতিতে আমি বিশ্বাস করি?’’ যদি বলা হয়
যে, এরকম বিশ্বাস যথেষ্ট তাহলে সমাজতন্ত্র সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞানের অভাবই প্রকাশ
পায়। যদি সমাজতন্ত্র একটি বাস্তব প্রোগ্রাম হয় এবং যদি সেটা শুধুমাত্র দূরের এবং
বহুদূরের আদর্শ না হয়, তবে সমতার নীতিতে বিশ্বাস করেন কিনা – এই প্রশ্ন একজন
সমাজবাদীর কাছে বড় প্রশ্ন নয় একজন সমাজবাদীর কাছে বড় প্রশ্ন হল, ভারতে যে এক
শ্রেণির মানুষ আর এক শ্রেণির মানুষের উপর ক্রমাগত অন্যায়, অত্যাচার ও শোষণ করছে –
তার বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করবেন কি না এবং এই অত্যাচার ও নির্দয় ব্যবহারের ফলে
বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে যে বিক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে, তার প্রতিকারের জন্য আন্দোলন
করবেন কি না?
এখন আমি আমার মতবাদকে সম্পূর্ণ রূপে ব্যাখ্যা
করার জন্য সেই কারণগুলোর বিশ্লেষণ করব, যেটা সমাজবাদ প্রাপ্তির মধ্যে নিহিত আছে।
একথা সুস্পষ্ট যে, রাষ্ট্র বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল না করা পর্যন্ত
সমাজবাদীদের মতানুসারে অর্থনৈতিক সংস্কার আসতে পারেনা। সেই রাষ্ট্র বিপ্লবে ক্ষমতা
দখল অবশ্যই সর্বহারার নেতৃত্বে হাওয়া দরকার। এ বিষয়ে আমার প্রথম প্রশ্ন এই যে,
ভারতের সর্বহারাবর্গ এই বিপ্লব অর্জনের জন্য সংগঠিত হবে কি? এই ধরণের বিপ্লব করার
জন্য কিভাবে তারা অনুপ্রেরিত হবে? আমার মনে হয় মানুষের মধ্যে অন্যান্য বিষয়গুলি
সমান হলেও যে বিষয়টি মানুষকে বিপ্লবের
পথে অগ্রসর হতে অনুপ্রেরণা যোগায়, সেটা হল আত্ম অনুভূতি। একজন মানুষের যদি এই
অনুভূতির দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, যাদের সঙ্গে সে বিপদসংকুল আন্দোলনের পথে অগ্রসর হবে
সেই সব আন্দোলনকারীরা সমতা, ভ্রাতৃত্ববোধ বা ভাইচারা আর এর থেকেও বড় ন্যায় বিচারের
নীতিগুলি মনে প্রাণে মেনে চলবে, তাহলে সে আন্দোলন করতে এগিয়ে আসতে পারে। যতক্ষণ
পর্যন্ত বুঝতে না পারবে যে, রাষ্ট্রব্যাপী আন্দোলন সফল হওয়ার পর তারা সকলে
সমব্যবহার পাবে এবং জাতিগত শ্রেণিগত বর্ণগত ও ধর্মগত কোনো বৈষম্য থাকবেনা, ততক্ষণ
পর্যন্ত শুধুমাত্র সম্পদের সমবন্টনের প্রলোভনে পড়ে কোনো মানুষ আন্দোলনে যোগদান
করবেনা।
(The only thing that will move one man to take such an action is the feeling
that other man with whom he is acting are actuated join in a revolution for the
equalization of property unless they know that after the revolution is achieved
they will be treated equally and that there will be no discrimination of caste
and creed. The assurance of a socialist leading the revolution that he does not
believe in caste, I am sure, will not suffice. The assurance must me the
assurance proceeding from much deeper foundation, namely, the mental attitude
of the compatriots towards one another in their spirit of personal equality and
fraternity.)
বিপ্লব পরিচালনাকারী কোন সমাজবাদী যদি এই
আশ্বাস দেন যে, তিনি জাতিভেদ প্রথায় বিশ্বাস করেন না। আমার মতে এটা যথেষ্ট নয়।
আশ্বাস এমন হওয়া দরকার যে, যার পিছনে সুগভীর ভিত্তি থাকে। অর্থাৎ একজন দেশবাসীর
মানসিক ব্যবহার অন্যের প্রতি ব্যক্তিগত সমানতা আর ভাইচারার ভাবনা পূর্ণ হওয়া
দরকার। একথা বলা যেতে পারে কি ভারতের সর্বহারা বর্গ ধনী আর দরিদ্র ছাড়া অন্য
কোনো বিভেদ বা পার্থক্য স্বীকার করেনা? এটা বলা যেতে পারে কি যে, ভারতে গরীব লোকেরা জাতি-বর্ণ-ধর্ম, উচ্চনীচ
এই ধরণের বিভেদ স্বীকার করেনা? যদি এটা সত্য হয় যে, ভারতের দরিদ্র শ্রেণি ঐ সব
ভেদাভেদ স্বীকার করে, তবে এরকম সর্বহারাদের থেকে ধনীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার
জন্য কোন্ ঐক্যবদ্ধতার আশা করা যেতে পারে? যদি সর্বহারাবর্গ সংগঠিতভাবে
আন্দোলন না করে তাহলে বিপ্লব কিভাবে হবে? তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া হয়, যে কোনো
কারণে বিপ্লব হল এবং সমাজতন্ত্রীদল
ক্ষমতা দখল করল তখন কি তাদের ভারতের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা থেকে উদ্ধৃত সমস্যাবলী
নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না? আমি ভাবতে পারি না যে, ভারতের জনগণের মধ্যে যে
উচ্-নীচ, পবিত্র-অপবিত্র ভেদাভেদ আছে এবং ঐ রকম ভেদাভেদের কারণ বা ধারণা থেকে
উৎপন্ন সমস্যাগুলির সমাধান না করে ভারতবর্ষে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র এক
সেকেণ্ড সময়ের জন্যও কিভাবে কাজ করতে পারে?
যদি প্রকৃত
সমাজবাদীরা সমাজতন্ত্রের সুন্দর সুন্দর বুলিতে খুশি না থাকেন, যদি তাঁরা
সমাজতন্ত্রকে বাস্তব রূপ দিতে চান, তাহলে তাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে,
ভারতের সমাজ সংস্কারের সমস্যাই প্রধান এবং এই সমস্যার সমাধান ছাড়া অন্য কোনো
রাস্তা নেই। ভারতের প্রচলিত
সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে সমাজতান্ত্রিকদের অবশ্যই ভাবতে হবে। যতক্ষণ তাঁরা এটা না
করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা তাদের কাঙ্খিত বিপ্লব অর্জন করতে পারবেন না। আর যদি
সৌভাগ্যবশত বিপ্লব অর্জন করেন তখন তাদের আদর্শ প্রাপ্ত করার জন্য এই সমস্যার সঙ্গে
লড়তে হবে। আমার মতে, এটা এমন একটা তথ্য যেটা নির্বিবাদ।
আপনারা যেদিকেই তাকাবেন, জাত নামক শয়তানটাকে
সেদিকেই দেখতে পাবেন; সে আপনার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আপনারা যতক্ষণ এই জাত
নামক শয়তানটাকে মারতে না পারছেন, ততক্ষণ রাজনৈতিক সংস্কার কেন, অর্থনৈতিক সংস্কার
ও করতে পারবেন না। (Turn
in any direction you like, caste the monster that crosses your path. You cannot
have political reform, you cannot have economic reform, unless you kill this
monster.)
0 comments:
Post a Comment