ব্রাহ্মণ্যবাদ নামক বিষ হিন্দুধর্মকে নষ্ট করছে। (Brahminism is the poison which has spoiled Hinduism.) ব্রাহ্মণ্যবাদ ধ্বংস হলে হিন্দুধর্ম রক্ষা পাবে।
-
ড. বাবাসাহেব
আম্বেদকর (from Annihilation of Caste)
কোনো সংস্কারকের কাছে যুক্তি এবং নীতি নামে দুটি হাতিয়ার থাকে। একজন
সংস্কারককে এই দুটি হাতিয়ার থেকে বঞ্চিত
করার অর্থ হলো তাকে কাজ করতে অক্ষম করে দেওয়া। যখন এই প্রশ্ন বিবেচনা করে দেখার অধিকার নেই, তখন আপনারা
জাতব্যবস্থা কিভাবে ভাঙ্গবেন?
নীতির সঙ্গে জাতব্যবস্থার কোনো মিল আছে
কিনা সাধারণ লোক যখন প্রশ্ন বিবেচনা করার অধিকারী নয়, তখন আপনারা জাতব্যবস্থা
কিভাবে ভাঙ্গবেন? যে দুর্ভেদ্য প্রাচীর দ্বারা জাত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে এবং
যে সব উপাদানের সাহায্য এই প্রাচীর গড়া হয়েছে, তার মধ্যে যুক্তি-নীতি নামক কোনো
দাহ্য উপাদান নেই। উপরন্তু এই প্রাচীরের অভ্যন্তরে ব্রাহ্মণ সৈন্যবাহিনী পাহারা
দিচ্ছে। সেই ব্রাহ্মণরাই বুদ্ধিজীবী শ্রেণি এবং হিন্দুদের প্রকৃত নেতা। জাত
ব্যবস্থার প্রাচীর পাহারা দেওয়ার জন্য
ব্রাহ্মণ সৈন্যবাহিনী ভাড়াটে সৈন্যদের মতো পাহারা দেবে না। তারা মাতৃভূমি রক্ষার
জন্য প্রাণপন যুদ্ধ করবে। এ থেকে আপনারা সহজেই বুঝতে পারবেন যে, কেন আমি মনে
করি যে, জাত ব্যবস্থা ভাঙ্গা প্রায় অসম্ভব কাজ। জাত ব্যবস্থা ভাঙ্গতে হয়ত বহুযুগ
লাগবে। জাত ব্যবস্থা উচ্ছেদ করতে বেশি সময়
লাগুক আর কম সময় লাগুক, আপনাদের একথা ভুললে চলবেনা যে, বেদ ও স্মৃতি শাস্ত্রগুলি
কোনো যুক্তি বা নৈতিক সূত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তাই যদি আপনারা জাত ব্যবস্থা নির্মুল করতে চান, তাহলে শাস্ত্রগুলির মুখোশ
জনসাধারণের সামনে খুলে দিতে হবে। শ্রুতি এবং স্মৃতি শাস্ত্রগুলিকে সর্বপ্রথম সমূলে
তুলে ফেলা দরকার। এছাড়া অন্য কোনো রাস্তা নেই। জাত
ব্যবস্থার নির্মূল করার জন্য এটাই হল আমার সুচিন্তিত অভিমত। (if you wish to
bring about a breach in the system, then you have got to apply the dynamite to the Vedas and the shastras, which deny any part to
reason; to the Vedas and shastras, which deny any part to
morality. You must destroy the religion of the shrutis and the smritis. Nothing
else will avail. This is my considered view of the matter.)
অনেকে হয়তঃ বুঝতে
পারছেন না যে, আমি ধর্মের বিনাশ কথাটির দ্বারা কি বলতে চাইছি। অনেকে একে বিদ্রোহী
ধারণা বলতে পারেন। আবার অনেকে একে ক্রান্তিকারী বিচারও বলতে পারেন। তাই আমি
বিষয়টির পরিষ্কার ব্যাখ্যা করতে চাই। আমি জানি না আপনারা নীতি এবং নিয়মের মধ্যে কোনো
পার্থক্য করেন কিনা। কিন্তু এর মধ্যে পার্থক্য আছে বলে আমি মনে করি। আমি শুধু এদুটির মধ্যে পার্থক্য আছে মনে করিনা,
বরং এই পার্থক্য যেমন বাস্তব, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করি।
নিয়ম ব্যবহারিক হয়। এর নির্ধারিত মাপদণ্ড
অনুসারে কাজ করার প্রথাগত রাস্তা আছে। কিন্তু
নীতি হচ্ছে বৌদ্ধিক (Intellectual)। নীতি হচ্ছে কোন কিছুকে বিচার করার উপযুক্ত সাধন (Methods of
judging things.)। এটা কোন বিষয়ের ভাল মন্দ সম্পর্কে
গুরুত্বপূর্ণভাবে চিন্তা করতে নির্দেশ দেয়। নীতি বাস্তবে কোন ধরা-বাধা পথে চলতে
নির্দেশ দেয় না। কিন্তু নিয়ম রান্নাকরার পদ্ধতির নির্দেশের মত সরাসরি আমাদের বলে
দেয় যে, কি করতে হবে এবং কিভাবে করতে হবে। নিয়ম এবং নীতির মধ্যে একটা মৌলিক
পার্থক্য আছে।
ভাল কাজ করা বলতে
নিয়ম যা বোঝায়, এবং ভাল কাজ করা বলতে নীতি
যা বোঝায়; তার মধ্যে প্রচুর পার্থক্য আছে। নীতি যখন কোন কিছুকে ভাল কাজ বলে, তখন
সে বিচার বিশ্লেষণপূর্বক তার পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েই সেকথা বলে। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে
যান্ত্রিক পদ্ধতি। নীতি ভুলও হতে পারে। কিন্তু নীতির আধারে করা কাজ দায়িত্বপূর্ণ
হওয়া দরকার। এই দায়িত্বের জন্য ধর্ম হচ্ছে একটা নীতিগত ব্যাপার। ধর্ম কখনও
শুধুমাত্র নিয়ম সর্বস্ব হতে পারেনা। ধর্ম যদি শুধুমাত্র নিয়মে পর্যবসতি হয়, তখন তাকে আর ধর্ম
বলা যায়না। কারণ ধর্মের মৌলিক উপাদান দায়িত্বজ্ঞানকে বাদ দিলে তাকে ধর্ম নামে
অভিহিত করা যায় না।
হিন্দু ধর্ম কি?
এটা কি কিছু নিয়মের বোঝা, নাকি কিছু নীতির সমষ্টি? বেদ আর স্মৃতিশাস্ত্রগুলির বর্ণনা
অনুসারে হিন্দুধর্ম কিছুই নয়। এটা শুধু সামাজিক, রাজনৈতিক ও স্বাস্থ্যবিধি
সম্পর্কিত কিছু নিয়ম ও নির্দেশের সমষ্টি।
হিন্দুরা যাকে ধর্ম বলে সেটা কিছু আদেশ বা নির্দেশ এবং নিষেধাজ্ঞার সমষ্টি। ধর্মের
যে আধ্যাত্মিক নীতি সমূহ; যেগুলি বিশ্বের সব মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হবে, সে সব
হিন্দুধর্মে নেই বললেই চলে।
যেটুকু আছে হিন্দুদের জীবন যাত্রায় তার তেমন একটা ব্যবহার দেখা যায় না। বেদ এবং
স্মৃতিশাস্ত্রগুলির নির্দেশ এবং তার ব্যাখ্যা থেকে জানা যায় যে, একজন হিন্দুর
পক্ষে ‘ধর্ম’-এর অর্থ হল কতকগুলি নির্দেশ ও বিধি নিষেধ মাত্র। বেদে ‘ধর্ম’
শব্দটির দ্বারা কিছু সংখ্যক ধর্মীয় আচরণের আদেশ বোঝান হয়েছে। এমন কি জৈমিনীর ‘পূর্বমীমাংসা’-র ব্যাখ্যা অনুসারে
‘ধর্ম’ হ’ল একটি আকাঙ্খিত লক্ষ্য বা ফল। যেটা
বেদের পরিচ্ছেদে লেখা আছে।
সরল ভাষায় হিন্দুরা
যাকে ধর্ম বলে, তাহল প্রকৃতপক্ষে কিছু আইন বা বেশির বেশি আইনানুগ নিয়ম। পরিস্কারভাবে বলতে হলে আমি এই আচার আচরণের নির্দেশ
নামাগুলিকে ‘ধর্ম’ বলে স্বীকার করতে পারিনা। এই নির্দেশ নামার প্রধান কুফল হল, তা
ধর্ম সম্পর্কে মানুষের মনে ভুল ধারণার
সৃষ্টি করেছে। মানুষের মুক্ত মনের স্বতঃস্ফুর্ত নীতিজ্ঞানকে নষ্ট করেছে। ধর্মভীরু
লোকদের কম বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে ও
তাদের উপর আরোপিত নিয়ম ও আচারের প্রতি দাস সুলভ মনোভাবের সৃষ্টি করেছে। হিন্দুধর্মের
আদর্শের প্রতি কোন নিষ্ঠা বা আনুগত্য নেই।
শুধু আদেশগুলো পালন করার নির্দেশ আছে। এর সবচেয়ে ক্ষতিকর লক্ষণ হল, নির্দেশগুলি অতীতে যা ছিল আজও তাই আছে এবং
ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। এই নির্দেশগুলি অসমান এবং সকল শ্রেণির জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য নয়। এই অসমানতাকে চিরস্থায়ী করে
দিয়েছে। কারণ একে বংশপরস্পরাক্রমে অপরিবর্তনীয় বলে ঘোষণা করেছে। এগুলি ধর্মগুরু বা
ঈশ্বরের দ্বারা প্রণীত হয়েছে বলে আপত্তিকর নয়; এর আপত্তির প্রধান কারণ হ’ল, এই
নিয়মগুলি এমনভাবে প্রবর্তন করা হয়েছে যে, সেগুলি চুড়ান্ত এবং অপরিবর্তনীয়। মানুষের মানসিকতা যেমন বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত
হয়; মানুষের জীবন ধারণ প্রনালীও তেমনি একটি নিয়মকে যুগযুগ ধরে কিভাবে অপরিবর্তনীয় হিসাবে মেনে নেবে?
এজন্য আমি এটা বলতে কোন দ্বিধা বোধ করিনা
যে, এই রকম ধর্ম নষ্ট করা দরকার। আর এই রকম ধর্মকে নষ্ট করার ক্ষেত্রে কোন অধর্ম
হবেনা ( no hesitation in saying
that such religion must be destroyed and I say, there is nothing irreligious in
working for the destruction of such a religion)। বাস্তবিকই, আমি বলি যে, ধর্মের নামে এই ধরেনের অমানবিক
আইনগুলির মুখোস খুলে দেওয়া আপনাদের অন্যতম পবিত্র কর্তব্য হওয়া উচিত। আপনাদের জন্য
এটাই অপরিহার্য পদক্ষেপ হওয়া উচিত। একবার আপনারা যদি মানুষের মন থেকে এই ভ্রান্ত
ধারণা দূর করতে পারেন যে, হিন্দুধর্মের নামে জনগণকে যেটা বলা বা শেখানো হচ্ছে সেটা
ধর্ম নয়, সেটা হচ্ছে কতকগুলি আইন বা নিয়ম। তখন আপনারা এই কথা বলার স্থিতিতে আসতে
পারবেন যে, একে সংশোধন বা নির্মূল করা দরকার। যতদিন পর্যন্ত মানুষ এই নিয়মগুলিকে
ধর্ম বলে বিশ্বাস করবে, ততদিন পর্যন্ত তারা এর পরিবরতন করতে চাইবেনা। কারণ ধর্ম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা হল যে, ধর্ম
অপরিবর্তনীয়। তারা ধর্মকে পরিবর্তন করতে চাইবেনা। কিন্তু তাদের যদি বোঝানো হয় যে,
এটা ধর্ম নয় এটা কতকগুলি পুরানো ও প্রাচীন আইন। যখনই তারা জানতে পারবে যে,
হিন্দুদের ধর্মের নামে যা বলা হচ্ছে বা বোঝানো হয়েছে তা কিছু প্রাচীন নিয়ম মাত্র।
তখনই তারা এটাকে পরিবর্তন করতে সহজেই রাজ হবে।
আমি নিয়মসর্বস্ব
ধর্মকে সমালোচনা করছি বলে এটা যেন কেউ মনে না করেন যে, আমি ধর্মের প্রয়োজনীয়তাকে
অস্বীকার করছি। অপর পক্ষে আমি বার্কের (Burke)
এই কথার সঙ্গে একমত যে,
“প্রকৃত ধর্ম হচ্ছে সমাজ জীবনের ভিত্তি এবং এই ভিত্তির উপরই গড়ে ওঠে দেশের ন্যায়পরয়াণ সরকার। (True religion is the
foundation of society, the basic on which all true civil Government rests, and
both their sanction) । সুতরাং যখন আমি দাবি করি যে, হিন্দু সমাজের প্রাচীন
নিয়মগুলি বিলোপ করা দরকার, তখনই আমি মনে করি সঙ্গে সঙ্গে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে
এমন একটি ধর্মের প্রয়োজন, যেটা প্রতিষ্ঠিত হবে নীতির উপর ভিত্তি করে। ধর্মের
প্রয়োজনীয়তা আমি একান্তভাবে অনুভব করি। তাই আমি আপনাদের বলতে চাই যে, ধর্মের সংস্কারের প্রধান বিষয়গুলি হলঃ-
(১) হিন্দু সমাজের
শুধুমাত্র একটাই আদর্শ ধর্মগ্রন্থ থাকবে, যাকে সর্ব সম্মত ভাবে গ্রহণ করতে হবে।
আর হিন্দু ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বলে প্রচারিত বেদ, স্মৃতিশাস্ত্র এবং পুরাণ
গ্রন্থগুলি আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে। উক্ত শাস্ত্রগুলিতে প্রকাশিত কোনো প্রকার
ধর্মীয় বা সামাজিক নিয়ম বা নির্দেশের
প্রচার ও প্রয়োগ দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য করতে হবে।
(২) পুরোহিত প্রথা
তুলে দিতে পারলে ভাল হয়। সেটা সম্ভব না হলে জন্মগত পুরোহিত প্রথাকে অবশ্যই বন্ধ
করতে হবে। হিন্দু সমাজের যে কোন ব্যক্তি পুরোহিত হতে পারবেন। এর জন্য এরকম আইন
করতে হবে যে, যাঁরা পুরোহিত হতে চাইবেন তাঁদের রাজ্য দ্বারা প্রবর্তিত কোর্সের
পরীক্ষায় পাশ করে পুরোহিত হওয়ার লাইসেন্স নিতে হবে।
(৩) বিনা লাইসেন্সের
কোন পুরোহিত কর্তৃক অনুষ্ঠিত ধর্মীয় কাজকে আইনত অবৈধ বলে গণ্য হবে। আর এই রকম
পুরোহিতকে আইন মোতাবেক শাস্তি দিতে হবে।
(৪) পুরোহিতকে
রাষ্ট্রের কর্মচারি হিসবে গণ্য করতে হবে। তাঁকে নীতিবান, ধর্ম বিশ্বাসী ও সৎ হতে
হবে। আর এই সব বিষয়ে তাঁকে রাষ্ট্রীয় নিয়ম কানুনকে কঠোরভাবে মানতে হবে।
(৫) পুরোহিতদের সংখ্যা
আইনের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ করতে হবে। যেমন দেশের প্রয়োজনানুসারে I.C.S. দের সংখ্যা সীমাবদ্ধ করা হয়।
অনেকের কাছে আমার এই প্রস্তাব অতিরিক্ত
সংস্কার বলে মনে হতে পারে। তবে আমি একে কোন ক্রান্তিকারী পদক্ষেপ বলে মনে করি না।
ভারতের প্রত্যেক পেশার ক্ষেত্রে আইন আছে। চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, উকিলদের পেশাগত
যোগ্যতার জন্য লাইসেন্স বা সার্টিফিকেট নিতে হয়। তাঁরা কর্মক্ষেত্রে একজন নাগরিক
হিসাবে কোন অপরাধ করলে, আইন অনুসারে শাস্তি মানতে বাধ্য। তাঁরা তাঁদের পেশাগত কাজের
ক্ষেত্রে ভাল সেবা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শুধুমাত্র পুরোহিতের কাজ এমন পেশা, যার
জন্য কোন আইন বা নিয়ম নির্ধারিত নেই। মানসিকভাবে একজন পুরোহিত মুর্খ হতে পারে,
নৈতিক চরিত্র খারাপ হতে পারে। এসব কিছুর
কোন এক বা একাধিক অসুবিধা থাকা সত্বেও সে মন্দিরে প্রবেশ করতে পারে এবং হিন্দু দেব
দেবীর পুজা করতে পারে। এতকিছু অসুবিধা থাকা সত্বেও পুরোহিত হওয়ার জন্য একমাত্র
শর্ত হচ্ছে, তাকে ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহণ করতে হবে। পুরোহিত শ্রেণি কো্নো আইন বা
নীতিশাস্ত্র মানে না। তাদের কোন কর্তব্য
নেই। তাদের শুধু অধিকার এবং সুযোগ সুবিধা আছে। রাষ্ট্রের দ্বারা আইন তৈরি করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। তাহলে পুরোহিতরা
সাধারণ মানুষকে ঠকাতে পারবে না। পুরোহিতের
জন্য আইন তৈরি হলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুশিক্ষিত যে কোন হিন্দু এই কাজ গ্রহণ করতে পারবে। পুরোহিতের পেশা আইন দ্বারা
নিয়ন্ত্রিত হলে ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং জাতিভেদ প্রথা নির্মূল করার পথ সুগম হবে।
ব্রাহ্মণ্যবাদ নামক বিষ হিন্দুধর্মকে নষ্ট করছে। (Brahminism is the poison which has spoiled Hinduism.) ব্রাহ্মণ্যবাদ ধ্বংস হলে হিন্দুধর্ম রক্ষা
পাবে। এরকম সংস্কারের কোন বিরোধী পক্ষ থাকা উচিত নয় । আর্য সমাজবাদীদের দ্বারাও এই প্রস্তাবকে স্বাগত করা উচিত। কারণ এটা তাঁদের
দ্বারা প্রবর্তিত ‘গুণকর্ম’-এর তত্ত্বের অনুরূপ।
এই সংস্কারগুলি আপনারা করুন বা না করুন,
কিন্তু আপনাদেরকে আপনাদের এই ধর্মের একটা নতুন গণতান্ত্রিক রূপ দিতে হবে। যেটা স্বাধীনতা,
সাম্য ও মৈত্রীর সঙ্গে সংগতি রেখে গণতন্ত্রের অনুরূপ হবে। ধর্ম বিষয়ে নির্দেশ দানের অধিকার আমার নেই।
তবুও আমি এই কথাই বলব যে, ধর্মীয় আদর্শের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী
নীতির অনুসন্ধান করতে আমাদের বিদেশীদের দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন নেই। উপনিষদে এই সব
নীতি বর্নিত আছে। যদি আপনারা একেবারে সম্পূর্ণ নতুন না করে মূল নীতিগুলিকে
বিশেষভাবে পরিবর্তন করেন, তাহলেও চলবে। এর ফলে জীবনের মৌলিক ধারণা পাল্টে যাবে। এর
ফলে জীবনের মূল্য সম্পর্কে একটা বিরাট পরিবর্তন আসবে। এতে মানুষ এবং জগৎ সম্পর্কে
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিত পরিবর্তন ঘটবে। বাস্তবিক
পক্ষে সেটা হবে একটা ধর্ম পরিবর্তন। যদি
আপনারা ধর্ম পরিবর্তন শব্দটি পছন্দ না করেন, তাহলে আমি একে বলব নতুন জীবন। কিন্তু
নতুন জীবন কোন মৃত দেহে আসতে পারেনা। নতুন জীবন শুধুমাত্র নতুন দেহেই আসতে পারে।
এর জন্য পুরানো দেহের অবসান হওয়া দরকার। নতুনের কাজ শুরুর পূর্বেই পুরানোকে বিদায়
দিতে হবে। সহজ কথায় বলা যায় যে, ধর্মের মধ্যে নতুন জীবনের সঞ্চার করতে হলে
পুরাতন শাস্ত্রীয় ধর্ম ও শাস্ত্রের কর্তৃত্বের অবসান আগে ঘটাতে হবে।
0 comments:
Post a Comment