Sunday 17 January 2016

// // Leave a Comment

বিষয়ঃ-লকুড় কমিটির সুপারিশের প্রতিবাদে যোগেন্দ্রনাথ

নমঃশুদ্র,রাজবংশী, শুঁড়ি ও ধোবাদের প্রতি মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথের অবদান কি ছিল ? যেটা অনেকেই জনেনা,বা জানার প্রয়োজন মনে করেন কিনা তাদের জন্য ।
মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ রনজিত কুমার সিকদার

ডঃ আম্বেদকর প্রকাশনীর

http://www.mediafire.com/download/66qxgrj9p8e7po8/B.N.+LOKUR+COMMITTEE+1965+AND+J.N.+MONDAL.pdf

http://www.mediafire.com/download/tqqq9v4y1s8ioip/Lokur+Committee+Report.pdf

 
বিষয়ঃ-লকুড় কমিটির সুপারিশের প্রতিবাদে যোগেন্দ্রনাথ
১৯৬৫ সালের একটি ঘটনা পশ্চিম বঙ্গে তফসিলী সমাজের মধ্যে দারুন সোরগোল সৃষ্টি করেছিল । ভারত সরকার ষাটের দশকে তফসিলী জাতির তালিকার রদবদল সম্পর্কে একটা কমিটি নিয়োগ করেছিল । উক্ত কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন স্যার বি.এন.লকুড়, আই.সি.এস. । উক্ত কমিটি ১৯৬৫ (25th Aug. 65)  সালের মাঝামাঝি পঃবঙ্গের তফসিলী জাতির তালিকা থেকে ৪টি জাতিকে বাদ দেবার সুপারিশ করে । উক্ত চারটি জাতি হল -নমঃশুদ্র,রাজবংশী,শুঁড়ি ও ধোবা ।

      এখানে একথা উল্লেখযোগ্য যে, উক্ত কমিটি কর্তৃক পঃবঙ্গ থেকে মাত্র দুজন ব্যক্তির মতামত গ্রহন করা হয় । এই দুজন হলেন পঃবঙ্গ ডিপ্রেসড্ ক্লাসেস লীগের পক্ষ থেকে শ্রীযোগেশচন্দ্র বিশ্বাস এবং উক্ত সংস্থার ।অন্যতম সদস্য তিলজলার শ্রীকালীচরন দাস ।
এই সুপারিশের প্রতিবাদে কলকাতার ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন হলে তফসিলী সম্প্রদায় সমূহের একটি গুরুত্বপূর্ণ জনসভা অনুষ্ঠিত হয় । উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রাক্তন মন্ত্রী মুকুন্দবিহারী মল্লিক ।এই সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় যে, এই সুপারিশ যাতে পার্লামেন্টে গৃহীত না হয় , তজ্জন্য ভারতের প্রধান মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে ডেপুটেশন দেওয়া একান্ত প্রয়োজন । যেহেতু যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল এক সময় দিল্লীর অন্তর্বতী মন্ত্রী সভার আইন মন্ত্রী ছিলেন, সেহেতু প্রধান মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে ডেপুটেশনের নেতৃত্ব তাঁকে দেওয়া হয়। তাঁকে সহায়তা করার জন্য তাঁর সঙ্গী হলেন তৎকালীন পঃবঙ্গের দুই এম.এল.এ. মহানন্দ হালদার ও অপূর্বলাল মজুমদার এবং কলিকাতা হাইকোটের্র এ্যাডভোকেট রমেশচন্দ্র মন্ডল
দিল্লীতে পৌঁছে প্রথমে যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল ফোনে সময় নির্ধারণ করে প্রধান মন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান । এই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেবলমাত্র এ্যাডভোকেট রমেশচন্দ্র মন্ডল। কারণ দিল্লী পৌঁছাবার পর অপূর্বলাল মজুমদার ও মহানন্দ হালদার যোগেন্দ্রনাথের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ রেখেছিলেন বলে জানা য়ায় না ।লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে যোগেন্দ্রনাথ এই কথাটি হৃদয়ঙ্গম করান যে, নমঃমুদ্র সম্প্রদায় প্রধানতঃ পূর্ব বঙ্গের অধিবাসী ছিল এবং তারা ছিল কৃষিজীবী । ভারত ভাগ হওয়ার পর তারা উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে চলে আসে ।ফলে আজ তারা প্রায় সকলেই পঃবঙ্গে খেত-মজুর বা দিনমজুরে পরিনত হয়েছে ।তাদের মধ্যে কিছু কিছু তপসিলী ছাত্র বৃত্তি পেয়ে কিছুটা লেখা পড়া শিখেছে এবং সংরক্ষণের সুযোগে দুচার জনে সরকারী চাকুরী পেয়ে কোন প্রকারে জীবিকা নির্বাহ করছে । পঃবঙ্গে তাদের জনসংখা ৩০-৪০ লক্ষের মত । সুতরাং তাদের যদি তফসিলী জাতির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়, তবে তাদের ভবিষ্যৎ চিরকালের মত অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাবে এবং তফসিলী ছাত্রবৃত্তির সাহায্যে তাদের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা লাভের যেটুকু সুযোগ বর্তমানে রয়েছে তাও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ।
এর পর তিনি শুঁড়ীদের কথা বললেন যে, তাদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন হল দেশী মদ তৈরী করা ও দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রকার মদের ব্যবসা করা । এদের মধ্যে হয়তো কেউ মদের ব্যবসা করে অর্থিক স্বচ্ছলতা লাভ করলেও সামগ্রিকভাবে এরা দরিদ্র এবং শিক্ষার দিক থেকে অত্যন্ত পশ্চাদপদ । এরা যদি তফসিলী তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায় , তবে শিক্ষালাভ ও সরকারী চাকরী পেয়ে ভবিষ্যতে তাদের উন্নতি লাভের কোন সম্ভাবনা থাকবেনা ।
রাজবংশীরা পঃবঙ্গে বৃহত্তম তফসিলী সম্প্রদায় । চাষবাস ও মাছ ধরা তাদের প্রধান জীবিকা । তারা অত্যন্ত দরিদ্র এবং অধিকাংশই নিরক্ষর । তাদের অবস্থা যে শোচনীয় তা নিজের চোখে না দেখলে বুঝা যাবে না। ধোবাদের অবস্থাও তদ্রুপ । পঃবঙ্গে এই সব সম্প্রদায় সমূহের প্রকৃত জনসংখ্যা ৬০-৭০ লক্ষের মত হবে । এদের তফসিলী তালিকা থেকে বাদ দেওয়া অত্যন্ত অমানবিক কাজ হবে ।
যোগেন্দ্রনাথ একথাও জানিয়ে দিলেন যে, নমঃশুদ্র সহ এই সব সম্প্রদায় সমূহের মানুষেরা লকুড় কমিটির এই রিপোর্টে যার পর নাই হতাশা গ্রস্ত এবং উত্তেজিত । লকুড় কমিটি এই সমস্ত সম্প্রদায়ের যে সব সামাজিক সংগঠন আছে ,তাদের সঙ্গে কোন প্রকার যোগাযোগ না করে বা তাদের মতামত না শুনেই কিভাবে এরূপ সুপারিশ করলেন ,তাতে তারা দারুনভাবে ক্ষুব্ধ । পঃবঙ্গে এ নিয়ে যে ভাবে আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে , তাতে যদি সত্বর এই সুপারিশ রদ করা না হয় , তাহলে পঃবঙ্গে একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও ঘটে যেতে পারে । প্রধান মন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী যোগেন্দ্রনাথের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনলেন এবং তাকে আশ্বাস দিলেন যে, লকুড় কমিটির সুপারিশ যাতে কারযকরী না হয় , তা তিনি অবশ্যই দেখবেন ।
প্রধান মন্ত্রীর আশ্বাস পেয়েও যোগেন্দ্রনাথ পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারলেন না । তিনি তখনকার রাষ্ট্রপতি সর্ব্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলেন । ঐ দিনই রাষ্ট্রপতি রাত্রে একটি ডিনার পার্টিতে ডেকেছিলেন । তিনি সঙ্গে সঙ্গে যোগেন্দ্রনাথকে ডিনার পার্টিতে নিমন্ত্রণ জানালেন এবং বললেন, যোগেন্দ্রনাথ ডিনার পার্টিতে এলে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন ।সন্ধ্যা বেলা যোগেন্দ্রনাথকে ডিনার পার্টিতে নিয়ে যাবার জন্য রাষ্ট্রপতি গাড়ী পাঠিয়ে দিলেন । যোগেন্দ্রনাথ রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছালেই তিনি তাঁর সঙ্গে একান্তে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললেন । রাষ্ট্রপতি জানালেন যে, পাকিস্থানে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে যোগেন্দ্রনাথের প্রসংশনীয় ভূমিকার কথা তিনি অবগত আছেন । তিনি যোগেন্দ্রনাথের বক্তব্য শুনলেন এবং লকুড় কমিটির সুপারিশ যাতে কারযকরী না হয় তজ্জন্য যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে কথা দেন ।
যোগেন্দ্রনাথের এই ভূমিকার কথা কলকাতা পৌঁছে গেলে যোগেন্দ্রনাথকে সম্বর্ধনা দেবার জন্যে কলকাতার ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন হলে একটি জনসভা আহ্বান করা হয় । সেখানে যোগেন্দ্রনাথ, প্রধান মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর আলোচনার বিস্তারিত বিবরণ দেন । যোগেন্দ্রনাথ এম.পি. বা এম.এল.এ. না হয়েও এই চারটি সম্প্রদায়ের জন্য যে কাজ করেছিলেন, পঃবঙ্গে তফসিলী সংরক্ষিত আসনের ৮/১০ জন এম.এল.এ. থাকা সত্বেও তারা কিছুই করতে সমর্থ হন নি । এই সম্বর্ধনা সভায় নমঃশুদ্র,রাজবংশী,শুঁড়ি , ধোবা সহ সমস্ত তফসিলী জাতির পক্ষ থেকে যোগেন্দ্রনাথের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় ।


0 comments:

Post a Comment