Saturday 2 January 2016

// // Leave a Comment

মাতা সাবিত্রিবাই ফুলের জন্মদিন 3rd জানুয়ারীকে আমাদের শিক্ষক দিন মানানো উচিত কি না?

মাতা সাবিত্রী ফুলের জন্মদিন 3rd জানুয়ারীকে আমাদের শিক্ষক দিন মানানো উচিত কি না?  

   ভারতের প্রথম শিক্ষিকা, মাতা সাবিত্রী ফুলে 3rd জানুয়ারী 1831 সালে মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার নায়গাঁও নামক গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। বাল্যকালেই তাঁর জ্যোতিরাও ফুলে এর সঙ্গে বিবাহ হয়। জ্যোতিরাও ফুলে, সাবিত্রীকে প্রথমে শিক্ষিত করে তোলেন। আর 18 বছর বয়সে শিক্ষিকা রূপে ভারতের অনাবাদী জঙ্গলময় অশিক্ষার ভূমিতে প্রথমে স্ত্রী শিক্ষার চারা গাছ রোপন করেন। আর ধীরে ধীরে সেই শিক্ষার চারা গাছ বিশাল বটবৃক্ষের মত বিস্তারলাভ করে। তো এরকম বিদূষী মাতা সাবিত্রীর অতুলনীয় অবদানকে কেউ কি বিস্মৃত হ’তে পারে?  

    ভারতবর্ষে হাজার বছর ধরে শোষিত বঞ্চিত, আদিবাসী ও অতি পিছিয়ে পড়া শ্রেণীকে শিক্ষার  আলো থেকে বহু যোজন দূরে সরিয়ে রেখেছিল ব্রাহ্মণ্যবাদী ব্যবস্থা। সেই শিক্ষার আলোকে তিনি এই বঞ্চিতদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। শিক্ষা গ্রহণের অধিকারকে হাজার বছর ধরে ষড়যন্ত্র করে বন্ধ করে রাখার ফলে জঞ্জালের পাহাড় জমে ছিল, সেই জঞ্জালকে এক ঝকটায় সরিয়ে দিয়ে তিনি শিক্ষার বীজ বপন করতে শুরু করেন।

    যে দেশে একলব্যের আঙ্গুল গুরু দক্ষিণা হিসাবে জোর করে কেঁটে নেওয়া হয়; আর সেই গুরুর  নামে পুরস্কার দেওয়া হয়। যে দেশে 'শম্বুক' এর মতো বিদ্বানকে হত্যা করা হয়; যে দেশে পিছিয়ে রাখা শ্রেণীর লোকেরা শিক্ষা গ্রহণ করলে তথাকথিত ধর্মীয় গ্রন্থ এই লোকদের কানে শিশা ঢালার আদেশ দেয় ও অন্যান্য ফতোয়া জারি করে। যে দেশে তথাকথিত ব্রাহ্মণবাদী সমাজের তথাকথিত  ব্রাহ্মণবাদী কবি দ্বারা শোষিত বঞ্চিত জনতাকে- ঢোল, গাওয়ার(বোকা) পশু, শূদ্র, নারী- এদেরকে তাড়ন (পিটানো) এর অধিকারী হিসাবে ঘোষণা করে; - এরকম দেশে কোন OBC (Other Backward Class) শ্রেণীর মহিলা দ্বারা এই সব অপমান, ধর্মীয় গ্লানি, অন্ধবিশ্বাস ভেঙে ফেলে নির্ভিকভাবে দাম্ভিকতার সঙ্গে ঘরে ঘরে, গলি গলিতে ঘুরে সব ধর্ম ও জাতির স্ত্রীদের জন্য শিক্ষার ক্রান্তি জ্যোতি জ্বালিয়ে দেওয়ার মত ঘটনা বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের থেকে কোন অংশে কম নয়।

    কিন্তু দুঃখের কথা হচ্ছে- এদেশে এরকম মহিয়সীর এই জ্ঞানের আলো জ্বালানোর কোন মূল্য দেওয়া হয়নি। কারণ এদেশে জাতির ভিত্তিতে সবকিছু পরিমাপ করা হয়। সঠিক প্রতিভারকে জাতি নির্বিশেষে মূল্য দেওয়া হয় না। সর্বদাই জাতির ভিত্তিতে পুরস্কার, সম্মান আর সুযোগ উঁচু জাতির লোকেরা অনায়াসে পেয়ে যায়। আর যদি এরকম না হয়, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে- ভারতে এখনও পর্যন্ত কেন মাতা সাবিত্রি ফুলের নামে শিক্ষক দিন পালন না করে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের নামে পালন করা হয়?  মাতা সাবিত্রি প্রথম মহিলা যিনি সকল শ্রেণীর মহিলাদের জন্য শিক্ষা চালু করেছিলেন। এই শিক্ষার নেত্রী মাতা সাবিত্রি শুধু ভারতের প্রথম অধ্যাপিকাই নন, তিনি সমগ্র সমাজের জন্য এক আদর্শ ও প্রেরণা স্রোত, বিখ্যাত সমাজ সংস্কারক, জাগৃতিকারক, আর ভারতের স্ত্রী আন্দোলনের প্রবর্তকও। 

     হাজার বছর ধরে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে রাখা সর্ব শ্রেণীর স্ত্রীদের জন্য তিনি যখন এক ঝটকায় শিক্ষার দরজাকে লাথি মেরে উন্মুক্ত করে দেন; তখন শিক্ষার বন্ধ দরজা খোলার আওয়াজ শুনে পুনের ব্রাহ্মণ্যবাদীদের কান ফেটে যায়। তাদের কাছে বজ্রাঘাতের মত এই ঘটনা মনে হয়। তখন তারা অমানবিক সামন্ততাত্রিক প্রথার ঘুমন্ত সিংহ কে জাগিয়ে তোলে। তারা মাতা সাবিত্রী ফুলে ও মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলের উপর বিভিন্নভাবে প্রাণ নাশের চেষ্টা চালায়।

    সাবিত্রী ও জ্যোতিরাও দ্বারা প্রজ্বলিও শিক্ষার জ্যোতিকে নিভিয়ে দেওয়ার জন্য ব্রাহ্মণ্যবাদীরা জ্যোতিরাও এর পিতা গোবিন্দ রাও কে ধমকী দিয়ে ভয় দেখিয়ে জ্যোতিরাও কে ঘর থেকে বের করার কাজে সফল হয়। ঘর ছাড়া হয়েও সাবিত্রী ও জ্যোতিরাও তাঁদের শিক্ষা প্রদানের কাজ চালিয়ে যান।

   মাতা সাবিত্রি যখন মহিলাদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য বাইরে যেতেন, তখন তাঁর উপর ব্রাহ্মণ্যবাদীরা গোবর ও পাথর ছুড়ে মারত। তাঁকে রাস্তায় চলার সময় বাঁধা সৃষ্টি করে উঁচু জাতির গুন্ডারা খারাপ খারাপ গালি দিত। এমনকি তাঁকে মেরে ফেলারও ধমকি দিত। মহিলাদের জন্য চালানো স্কুল বন্ধ করার চেষ্টা করত। সাবিত্রী এদের ধমকীতে যাতে ভয় পেয়ে ঘরে বসে যান, সেই চেষ্টা করত। এমনকি ব্রাহ্মণ্যবাদী অনেক নিয়ম তুলে নরকে যাওয়ার ভয়ও দেখাত। এরকমই এক বদমাশ প্রায় প্রতিদিনই সাবিত্রির পিছে পিছে এসে উত্যক্ত করত। একদিন তো ঐ বদমাশ হঠাৎ সাবিত্রীর রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়ায়। আর শারীরিকভাবে আক্রমন করে। তখন সাবিত্রি দুঃসাহস করে ঐ বদমাশকে থাপ্পড় লাগান। থাপ্পড় খেয়ে বদমাশ আর দ্বিতীয় বার সাবিত্রীর সামনে আসেনি।

  তো 3 জানুয়ারী মাতা সাবিত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ করে সব শ্রেণীর মহিলাদের এই মহিয়সীর প্রতি এবং সমাজের প্রতি তাঁর নিঃস্বার্থ ত্যাগের জন্য শ্রদ্ধা জানানো দরকার। আর এখান  থেকে প্রেরণা গ্রহন করে অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কারকে  ত্যাগ করে শিক্ষা প্রসার ঘটানোর জন্য মহিলাদের শক্তিশালী রূপে গড়ে তোলার জন্য শপথ গ্রহণ করলে তবেই হবে মাতা সাবিত্রির অবদানের প্রতি সঠিক সম্মান প্রদর্শন।


YouTube এ ভারত এক খোঁজ এপিসোড 45 লিখে search করুন। মাতা সাবিত্রি ফুলে ও মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলের জীবনী মুলক ভিডিও এর লিঙ্ক-   https://www.youtube.com/watch?v=sqqZaAkCf1Q


0 comments:

Post a Comment