Sunday 13 July 2014

// // Leave a Comment

হোলিকা মুলনিবাসীদের মহানায়িকা

           হোলিকা মুলনিবাসীদের মহানায়িকা
হোলিকা অথবা হোলী এই উৎসব সারা ভারতে উজ্জাপন করা হয়। হোলীকে জ্বালানো এবং পরদিন শরীরে রং লাগানোটা উৎসব হিসাবেই পালন করা হয় । কিন্তু এর পিছনে কি আসল ইতিহাসকে লুকিয়ে রেখে বিকৃত কাহিনীর প্রচার-প্রসার হচ্ছে, এবং উৎসব মুলনিবাসীদের জন্য আনন্দ কি দুঃখের সে বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করছি ।
হোলিকাকে ব্রাহ্মনরা পূরানে এই ভাবে বর্ননা করেছে যে-
প্রাচীনকালে রাক্ষসদের রাজা হিরন্যকশ্যপু নামের রাজা রাজত্ব করত। দেবতাদের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। তার পুত্রের নাম প্রহ্লাদ। যে সব সময় নারায়ন নারায়ন বলে জপ করত । প্রহ্লাদের উপর দেবতাদের যে প্রভাব পড়েছিল সেটা ছাড়নোর জন্য রাজা হিরন্যকশ্যপু খুব চেষ্টা করে। কিন্তু সফল হয়না । অবশেষে রাজা হিরন্যকশ্যপু একটা কাঠের চিতার উপর হোলিকাকে বসিয়ে চিতায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।হোলিকার অগ্নি দেবতার বর ছিল যে সে আগুনে পুড়বেনা । কিন্তু তবুও সে পুড়ে মারা যায়। আর প্রহ্লাদের কিছুই হয়না । সে নারায়ন নারায়ন জপ করতে থাকে ।
এই কাহিনীর সারাংশ এটা হচ্ছে যে, দুষ্ট প্রবৃত্তির হার আর সত প্রবৃত্তির বিজয়।
এখানে একটা প্রশ্ন হচ্ছে বহুজন সমাজের লোকেরা হোলিকাকে কেন পূজা করে ?
এই হোলী কে?
মূলনিবাসী বহুজনদের সঙ্গে তার কি সম্বন্ধ ?
মূলনিবাসী বহুজনদের রাজাধীরাজ শংকাসূর আর হিরন্যকশ্যপুর কাছে সোনার ভান্ডার ছিল । ব্রাহ্মণ দেবতা বিষ্ণু ষড়যন্ত্র করে শংকাসূরকে মেরে ফেলে । তার পুত্র হিরন্যকশ্যপু রাজা হয় । একদিন হিরন্যকশ্যপু হাতিয়ার কেনার জন্য অন্য রাজ্যে গেলে ইন্দ্র হিরন্যপুরে হামলা করে । কারণ সেখনে সোনার ভান্ডার ছিল । ইন্দ্র ত্রৈলেক্য-এর সুন্দরী রানী কপারুকে অপহরন করে। সে প্রেগনেন্ট ছিল । তাই প্রহ্লাদের জন্ম বিষ্ণুলোকে হয়। পরবর্তীতে হিরন্যকশ্যপু সংঘর্ষ করে রানী ও বাচ্চাকে ইন্দ্রের কব্জা থেকে মুক্ত করে । ছোট বাচ্চা প্রহ্লাদের উপর ব্রাহ্মণী সংস্কারের প্রভাব পড়ে । সেই সংস্কার থেকে ছেলেকে মুক্ত করার জন্য হিরন্যকশ্যপু প্রহ্লাদের জন্য দুজন গুরুকে নিযুক্ত করে । কিন্তু তবুও কোন কজের কাজ হয়না । তারপর প্রহ্লাদের পিসি রাজকুমারী হোলিকা প্রহ্লাদকে তার কাছে ডেকে নেয় । হোলিকা প্রহ্লাদকে তাদের মহাপুরুষদের প্রেরনা দায়ক ইতিহাস বলে । হোলিকা প্রহ্লাদকে আরও বরে যে –‘তোমার কাকাকে এই বিষ্ণু ষড়যন্ত্র করে মেরেছে। তোমার মাকে ইন্দ্র জোর করে অপহরন করে ছিল।এই ভাবে হোলিকা ইন্দ্রের ব্যাপারে প্রহ্লাদকে সবকিছু জানায় । প্রহ্লাদ যখন সত্যি ঘটনা জানল তখন সে ইন্দ্রের প্রতি বিদ্রোহ করার জন্য তৈরী হয় । প্রহ্লাদ অনুভব করে সে এক মহান বংশের সন্তান । সেই মহানতার পরম্পরা রক্ষা করা তার কর্তব্য । সে নিজের প্রতি গর্ব অনুভব করে । সে প্রতিজ্ঞা করে তার রাজ্যে কোন ব্রাহ্মনকে যজ্ঞ করতে দেবেনা এমন কি কোন ব্রাহ্মনকে রাজ্যে প্রবেশাধীকারও দেবেনা।
যজ্ঞের বিরোধ অর্থাৎ ব্রাহ্মণদের অস্তিত্বের বিরোধ । যজ্ঞের নামে ব্রাহ্মনরা ফ্রিতে জমি,আনাজ,ধন, সূরা(মদ) আর যুবতী মহিলাকেও পেত । কিন্তু প্রহ্লাদের এই নির্ণয় ব্রাহ্মণদের এই ভোগের প্রতি কুঠারাঘাত করে । তারা দেখল প্রহ্লাদের এই ধরনের বিচার-ধারা পরিবর্তনের পিছনে কাজ করেছে হোলিকা। তাই তারা ঠিক করল হোলিকার উপর বদলা নিতে হবে । তাকে কঠিন শাস্তি দিতে হবে । তারা ষড়যন্ত্র করে গুপ্তভাবে রাজকুমারী হোলিকার উপর হামলা করে ।তাকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় । সেখানে বন্দী করে রাখে ।
 
হোলিকার মুক্তির জন্য অসূর সৈন্যদের একটি দল হিরণ্যপুর থেকে যাত্রা করে । আর এখবর অপহরণকারীরা জানতে পারে । তখন তারা তাড়াতাড়ি হোলিকাকে মারার প্লান বানায় । ঐসময় ফাল্গুন মাসের পূর্ণীমার রাত ছিল । তারা হোলিকাকে মাঠের মধ্যে একটা খাম্বা পুতে তার সংঙ্গে বেধে দেয় । আর তার চার পাশে শুকনো ঘাস গাছের শুকনো ডাল দিয়ে ঘিরে দেয় । হিরন্যকশ্যপুর সৈন্যরা কাছাকাছি এসে যাচ্ছে দেখে শত্রুরা হোলিকার গায়ে অগুন লাগিয়ে দেয় । যার ফলে হোলিকা পুড়ে মারা যায় ।
 
রাজকুমারী হোলিকাকে বাঁচানো সম্ভব হয় না । তখন তারা অতি দুঃখে চিতার ছাই নিজেদের মুকে মেখে মুক কালা করে ।
 
এই করুন ইতিহাসের উপর পর্দা দিয়ে ঢেকে দিয়ে ব্রাহ্মণরা রং-খেলার উৎসব চালু করেছে ।
এই দিন মূলনিবাসীদের কাছে অতি দুঃখের দিন ।
 
আর একটা কথা হারের প্রতিক হচ্ছে আবির। (অ+বির)অর্থাৎ যে বির নয়।

0 comments:

Post a Comment