আর্য কারা ? আর্য কি কোন
ভাষাগোষ্ঠী ? নাকি কোন জাতি ? এই
ভাষাগোষ্ঠী বা জাতির আর্যরা কি বিদেশী বা বিদেশী ও ভারতীয় ?
ভারতীয় কিছু কিছু লেখকেরা এটা প্রমাণ করার
চেষ্টা করেছেন যে, আর্য একটা জাতির নাম । এবং তারা বিদেশী নয় । উদাহরণ স্বরূপ তাঁরা
দেখাতে চেয়েছেন যে, ডঃ আম্বেদকরও বলেছেন আর্যরা বিদেশী নয়
।
প্রকৃত সত্য তবে কি ? আর ডঃ
আম্বেদকর কোন আর্যদের বিদেশী বলেননি, সে বিষয়ে আমরা
আলোকপাত করব ।
প্রথমে আমরা দেখি আর্য কারা ?
আর্য হচ্ছে
একটি ভাষা গোষ্ঠীর নাম । আর একাধিক মানবগোষ্ঠীই এই ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত । ভাষাগত দিক দিয়ে
ভারতবর্ষে দু'টি আর্য জাতির অস্তিত্ব মেলে । আর গোষ্ঠীগত দিক দিয়ে যাদের একটি হ'ল-
আলপাইন
মানবগোষ্ঠীভুক্ত এবং অন্যটি নর্ডিক মানবগোষ্ঠীভুক্ত । এই আলপাইন
মানবগোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা যেমন অসুর নামে পরিচিত; তেমনি নর্ডিক মানবগোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা ছিল ব্রাহ্মণ নামে পরিচিত ।
মানবগোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা যেমন অসুর নামে পরিচিত; তেমনি নর্ডিক মানবগোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা ছিল ব্রাহ্মণ নামে পরিচিত ।
নর্ডিক আর্য আগমনপূর্ব ভারতীয় আলপাইন বা
অসুর মানবগোষ্ঠীর ভাষাও ছিল আর্য । এই দিক দিয়ে অর্থাৎ ভাষাগোষ্ঠী হিসাবে এরাও
আর্য বলে গণ্য । ঋগবেদে এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ আছে । অন্যদিকে নর্ডিক মানবগোষ্ঠীর
বৈদিক ব্রাহ্মণদের ভাষা যেহেতু আর্য ছিল তাই তারা আর্যজাতি হিসাবেই পরিচিত । অতএব
ভাষাগত দিক দিয়ে বিচার করলে ভারতবর্ষে দু'টি আর্য জাতির
সন্ধান মেলে ।
প্রথমটি
হ'ল- আলপাইন মানবগোষ্ঠীভুক্ত প্রাগার্য জাতি
এবং
অন্যটি হ'ল-
নর্ডিক মানবগোষ্ঠীভুক্ত বৈদিক ব্রাহ্মণ বলে স্বীকৃত বৈদিক যুগের আর্য জাতি ।
অনেক চিন্তাশীল
লেখকেরাই ব্যাপারটাকে ঘুলিয়ে ফেলেন । তাঁরা বলেন, ডঃ আম্বেদকর বলেছেন বৈদিক
আর্যরা বহিরাগত বা অনুপ্রবেশকারী নয় । আসলে তাঁরা আম্বেকরের ব্যাখ্যাকে সঠিকভাবে
বুঝতে পারেননি বলে মনে হয় । আসলে ডঃ আম্বেদকর বলেছেন, আলপাইন
বা অসুর মানবগোষ্ঠীর আর্য ভাষীরা বহিরাগত নয় । কিন্তু নর্ডিক মানবগোষ্ঠীভুক্ত আর্য
ভাষীরা হলেন বহিরাগত । যদিও বর্তমানে আর্য বলতে আমরা কেবল নর্ডিক মানবগোষ্ঠীভুক্ত
আর্য ব্রাহ্মণদেরই বুঝে থাকি । যারা হলেন ভারতবর্ষে অনুপ্রবেশকারী বা বহিরাগত ।
'বেদে আর্যজাতি
নামে প্রকৃত পক্ষে কোন জাতি নেই ।' কারণ বেদে আর্য শব্দটি কখনই জাতি
অর্থে ব্যবহৃত হয়নি । তাই বেদে দু'টি মানবগোষ্ঠীর ভাষাকেই আর্য হিসাবে
সনাক্ত করা হয়েছে । যার একটা হ'ল নর্ডিক মানবগোষ্ঠীর আর্যভাষী ব্রাহ্মণ
এবং অন্যটা আলপাইন মানবগোষ্ঠীর আর্যভাষী অসুর-যা ডঃ আম্বেদকর তাঁর গবেষণা দ্বারাই
প্রমাণ করেছেন ।
আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে যে, নর্ডিক
মানবগোষ্ঠীর ব্রাহ্মণেরা এবং আলপাইন মানবগোষ্ঠীর অসুরেরা যেহেতু আর্য
ভাষাগোষ্ঠীভুক্ত তাই সম্ভবত ব্রাহ্মণেরা অসুরদের ইতিহাস চিরতরে মুছে দেওয়ার জন্য
নিজেদেরকে আর্য মানবগোষ্ঠী বলে প্রচার দিয়ে দেশীয় অসুরদের অনার্য মানবগোষ্ঠী বলে
প্রচার করেছেন । আর অসুররা অনার্য মানবগোষ্ঠী
হিসাবে প্রচার পাওয়ার সাথে সাথে একেবারেই মাটিচাপা পড়ে গেছে আসল সত্যটি; যে, -'দেশীয়
অসুররাও প্রকৃত পক্ষে আর্য ভাষাগোষ্ঠীরই মানুষ ।' যদিও উভয়ের মধ্যে অর্থাৎ আলপাইন ও নর্ডিক মানবগোষ্ঠীর মধ্যে বিরাট
পার্থক্য রয়েছে ।
প্রশ্ন হচ্ছে- অসাম্যের পূজারী অত্যাচারী
হিটলারের বংশধর নর্ডিক মানবগোষ্ঠীর ব্রাহ্মণেরা তবে কেন নিজেদেরকে আর্য মানবগোষ্ঠী
বলে পরিচয় দিলেন ? অথচ একই মানবগোষ্ঠীভুক্ত হওয়া সত্বেও হিটলারের গোষ্ঠীটিতো
আর্যমানবগোষ্টী বলে সনাক্ত নয় । তারা তো নর্ডিক মানবগোষ্ঠী বলে পরিচিত । আর ভাষা
গোষ্ঠীকে যদি মানবগোষ্ঠী বলা হয় তবে তো মূলনিবাসী আলপাইন বা অসুর মানবগোষ্ঠীর
ভাষাও তো আর্য ছিল । তারা কেন তবে আর্য মানবগোষ্ঠী বলে গণ্য হলেন না ? আর কেনইবা ঋগবেদে দেখা য়ায় নর্ডিক আর্যভাষী এবং আলপাইন আর্য ভাষী নামে
এই দুই আর্য ভাষীদের মধ্যে প্রতিনিয়তঃ যুদ্ধ করতে ?
নর্ডিক মানবগোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা যেহেতু তারা
ব্রাহ্মণ নামে পরিচিত;
তাই তারাই মূলনিবাসীদের মধ্যে অত্যন্ত সুকৌশলে বিভেদ সৃষ্টি করে
ইন্দো-ইরানি দাস এবং দস্যু সহ দেশীয় আলপাইন মানবগোষ্টীভুক্ত আর্যদেরও যুদ্ধে
পরাজিত করে ভারতবর্ষে আধিপত্য বিস্তার করেন । কারণ ইন্দো-ইরানী দাস এবং দস্যু ও
দেশীয় আলপাইন মানবগোষ্ঠীভুক্ত আর্যরা ছিলেন অযাজকীয় বা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে
বিশ্বাসী । কিন্তু নর্ডিক মানবগোষ্ঠীভুক্ত আর্যরা ছিলেন যাজকীয় মতবাদে বিশ্বাসী ।
আর জয়ের পরিকল্পনাটি ঠিক এ কারনেই ।
কিছু কিছু পশ্চিমী লেখকরা যথেষ্ট প্রমাণ
ছাড়াই অনুমান করেছেন যে বৈদিক নর্ডিক আর্যরা দেশীয় দাস এবং দস্যুদের জয় করেছিলেন ; যা নিতান্তই
ভুল ধারণা । কারণ দাস এবং দস্যুরা হলেন যেমন দু'টি আলাদা
জাতি, তেমনি তারা আবার মূলভারতীয়ও নয় । তারা ইন্দো-ইরানী
এক সম্পদশালী মানবগোষ্ঠী । এখানে পশ্চিমী লেখকরা দাস ও দস্যু নামের অপব্যাখ্যা করে
তাদের যেমন মূলনিবাসী বলে চালিয়ে দিয়েছেন তেমনি মূলনিবাসী আলপাইন মানবগোষ্ঠীভুক্ত
আর্যদের দিয়েছেন মাটিচাপা । এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, সে যুগে ভারতবর্ষ ছিল এক বহুজাতিক দেশ । ঋগবেদে তাই অবৈদিক দেশীয়
আলপাইন মাববগোষ্ঠীভুক্ত আর্যদের পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইন্দো-ইরানী দাস এবং
দস্যুদেরও অনুপ্রেবেশকারী বৈদিক নর্ডিক আর্য ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দেখা
যায় । তাই পশ্চিমী লেখকদের নর্ডিক আর্য ব্রাহ্মণদের জয়ের মতবাদকে প্রতিষ্টিত করতে
ঋগবেদের উদাহরণ দিয়ে অবশ্যই বলতে হ'তো ইউরোপীয় নর্ডিক আর্য ব্রাহ্মণেরা দেশীয় আলপাইন আর্য
অসুর এবং ইন্দো-ইরানী দাস এবং দস্যুদের জয় করে ভারতবর্ষে আধিপত্য বিস্তার করেন ।
কিন্তু ডঃ আম্বদেকর বলেছেন, 'এই দুই আর্য জাতির মধ্যে কারা দাস এবং
দস্যুদের জয় করেছিল যদি তারা আদৌ তাদের জয় করে থাকে ।' একথার সমর্থনে বলা
যায় যে নর্ডিক আর্যরাই দাস এবং দস্যুসহ মূলনিবাসী আলপাইন আর্যদেরও জয় করেছিল । যার
প্রমাণ ঋগবেদের উদাহরণ থেকেই পাওয়া যায় । অর্থাৎ ঋগবেদে দেখা যায় দাস এবং দস্যুরা
আলপাইন আর্যদের পক্ষ নিয়ে নর্ডিক আর্যদের বিরুদ্ধে সর্বদাই যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন । আর
নর্ডিক আর্য ব্রাহ্মণেরা যে সত্যিই দাস, দস্যু এবং আলপাইন আর্যদের জয় করেছিলেন
তা অনুপ্রবেশকারী বৈদিক নর্ডিক আর্য ব্রাহ্মণের নিত্য নতুন বৈদিক আইন প্রনয়ণ এবং
বৈদিক ধর্মের উপর পরবর্তীকালীন প্রাধান্য থেকেই পরিষ্কার । অতএব ডঃ আম্বেদকরের
সদ্ধান্ত থেকে প্রমাণিত নর্ডিক আর্য ব্রাহ্মণেরা বিদেশী ইউরোপিয়ান অনুপ্রবেশকারী ।
কিন্তু আলপাইন আর্যরা দেশীয় অসুর জাতি বলেই পরিচিত । যে আলপাইন বা অসুর জাতি
নর্ডিক আর্য আগমনের অনেক পূর্বেই নগরকেন্দ্রিক সিন্ধু সভ্যতা গড়ে তুলেছিলেন ।
{ সংগৃহীত-
অনালোকিত অতীত ইতিহাসে ভারতীয় মূলনিবাসীরা ও তাদের ধর্ম ভাবনা(যুদ্ধঃ আর্য বনাম
আর্য, দাস ও দস্যু)-মনি মোহন বৈরাগী(মতুয়া গবেষক)পৃঃ নং
১২,২৩,২৮ ও ২৯}
https://www.youtube.com/watch?v=TLk85V093o0
This comment has been removed by the author.
ReplyDelete