Saturday, 1 November 2025

// // Leave a Comment

“নেড়ে” কথার ইতিহাস: - তথ্য- ভারতবর্ষ ও ইসলাম, লেখক- সুরজিৎ দাশগুপ্ত

 

নেড়ে কথার ইতিহাস: -

 
    ঐতিহাসিক সুরঞ্জিত দাশ গুপ্ত লিখিত ভারতবর্ষ ও ইসলাম গ্রন্থের ৫৪-৫৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত ব্রাহ্মণ্য শক্তি ভারতের বৌদ্ধদের প্রতি এত বেশী অত্যাচার করত যা অতীব দুঃখের। বৌদ্ধরা মাথা মুণ্ডণ বা নেড়া করতেন। অত্যাচার যখন সহ্য সীমা অতিক্রম করে তখন তাঁরা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বৌদ্ধদের বলা হত নেড়ে। তাই মুসলমানদেরকে অনেক অশিক্ষিত এবং অজ্ঞ লোকেরা নেড়েবলে থাকেন। এই নেড়ে কথাটি যতদিন থাকবে ততদিন ভারতীয় প্রাচীন হিন্দুদের দ্বারা বৌদ্ধদের প্রতি অত্যাচারের ইতিহাসকে জীবন্ত করে রাখার সামিল হবে। এই নেড়ে তত্ত্বের প্রমাণ পাওয়া যাবে অধ্যাপক বিনয় ঘোষ লিখিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর গ্রন্থে ।

নেড়ে ও বৌদ্ধ

সেকশুভোদয়া’, গোবর্ধন আচার্যের লেখা ‘আর্যা সপ্তশতী’ ও ধোয়ীর লেখা ‘পবনদূত’ কাব্যে তৎকালীন বাঙালী সমাজের বিশদ চিত্র পাওয়া যায়- উচ্চ-বর্ণের হিন্দুরা সেসময় বৌদ্ধদের ও নিম্ন-বর্ণের হিন্দুদেরকে নিকৃষ্ট জীব বলেই গণ্য করত। সম্ভবত সেনদের মতো রক্ষণশীল শাসককূলের পক্ষপুটে থেকে সনাতনপন্থী হিন্দুরা প্ররোচিত হয় বৌদ্ধদের প্রতি ঘোর দুর্ব্যহারে এবং মূণ্ডিতমস্তক বৌদ্ধদেরকে ব্যঙ্গ করত ন্যাড়া বা নেড়ে বলে। পরবর্তীকালে এই বৌদ্ধদের অনেক আচার-রীতি-প্রথা হিন্দুত্বের ব্রাহ্মণ্য আচার-রীতি-প্রথার আড়ালে আত্মগোপন করে- বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেসব শিবের থান বা মূর্তি বা পূজাবেদী আছে সেসমস্তই আদতে বুদ্ধের অধিকারে ছিল এবং বুদ্ধই রূপান্তরিত হন বুড়ো শিবে; চড়কের গাজোনে যারা সন্ন্যাস নেয় তারা পীতবস্ত্র পরিধান করে এবং ওই পীতবস্ত্রও প্রকৃতপক্ষে বৌদ্ধদের সংসার ত্যাগ করে ভিক্ষুর জীবন গ্রহণেরই প্রতীক। এভাবে যেমন অনেক বৌদ্ধ আচার-প্রথা তাদের রূপ পাল্টে ব্রাহ্মণ্য হিন্দুসমাজে শামিল হয়ে যায় তেমনিই বৌদ্ধদের অনেকে ব্রাহ্মণ্য হিন্দুদের পীড়নের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্যে বাংলায় মূসলিম বিজয়ের পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে- তখন রক্ষণশীল হিন্দুরা বৌদ্ধ থেকে ওই সব ধর্মান্তরিত মুসলিমদেরকেও ন্যাড়া বা নেড়ে বলে অভিহিত করতে থাকে।

     বাংলাদেশে যা হয়েছে তা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা প্রক্রিয়া নয়; সমস্ত হিন্দুস্তান জুড়েই অনুরূপ প্রতিক্রিয়াদি কম-বেশি হয়েছিল এরকম মনে করার সংগত কারণ আছে। ---- বাংলায় বৌদ্ধদের মতো দক্ষিণ ভারতের জৈনরাও রক্ষণশীল শৈব হিন্দুদের হাতে নিপীড়িত হয় এং একবার একদিনে আট হাজার জৈনকে শূলে হত্যা করার কথা তামিল পুরাণেই উল্লিখিত হয়েছে। স্পষ্টতই এসময়টাতে ব্রাহ্মণ্য হিন্দুধর্ম পরমতসহিষ্ণুতার আদর্শকে জলালাঞ্জলি দিয়েছিল। (তথ্য- ভারতবর্ষ ও ইসলাম, লেখক- সুরজিৎ দাশগুপ্ত, পৃ. ৫৪-৫৫)

      বর্ণভেদ প্রথা একটা অত্যন্ত জটিল বিষয় এবং সে জটিলতার মধ্যে প্রবেশের অবকাশ এখানে নেই। শুধু এটুকু বলা যায় যে বর্ণভেদ প্রথা শুরু থেকেই হিন্দু সমাজকে বিভক্ত করে রেখেছে, ফলে আধুনিক কালে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা নিজেজের একটি স্বতন্ত্র সম্প্রদায় বলে দাবি করে আর সে-দাবি আদমসুমারিতে ও প্রৃথক নির্বাচন প্রথাতে ক্রমশ স্বীকৃতি পায়। কিন্তু শুধু সম্প্রদায়ের স্বাতন্ত্র্য লাভ করে নিন্মবর্ণের হিন্দুদের ক্ষোভ মেটেনি, বহু বছর ধরে বর্ণহিন্দুরা তাদের সঙ্গে যেরকম ব্যবহার করে এসেছে তার প্রতিক্রিয়াতে তারা পুরোপুরি হিন্দু ধর্মের কবল থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে পৃথক ধর্ম হিসাবে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করতে শুরু করে। মনে রাখা ভালো যে একদা বর্ণহিন্দুদের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিক্রিয়াতে নিম্নবর্ণ হিন্দুদের একটা বৃহৎ অংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী হয়ে যায়। অর্থাৎ হিন্দু সমাজের মধ্যেই এমন কিছু আছে যা শুধু আকর্ষণ করে না, বিকর্ষণও করে যা কায়িক শ্রমজীবীদের অশুচি মনে করে দূরে দাঁড় করিয়ে রাখে, যা অন্য ধর্মাবলম্বীদের কলুষিত মনে করে বলে ইসলামে ধর্মান্তরিতদের হিন্দুকরণকে শুদ্ধি আন্দোলন নাম দিয়ে শ্লাঘা বোধ করে, যা ঔদ্ধত্যে স্ফীত ঘৃণায় পুষ্ট এবং হিন্দু সমাজের অন্তর্গত এই প্রবল বিভেদকারী শক্তিকে উপেক্ষা করা যায় না।

 (তথ্য- ভারতবর্ষ ও ইসলাম, লেখক- সুরজিৎ দাশগুপ্ত, পৃ. ২৮৮-২৮৯)

Read More

Thursday, 23 October 2025

// // Leave a Comment

ভাই ফোটার আসল ইতিহাস কি?

 


ভাই ফোটার আসল ইতিহাস কি?

(আমার ধারণা, বিশেষ করে ভারতবর্ষের বেশিরভাগ পূজা বা অনুষ্ঠান বুদ্ধিজমের থেকে ব্রাহ্মণীজমে ডাইভারট করা হয়েছে।)

     কপিলবস্তু শহর আলোর উৎসব উদযাপন করছিল। প্রতিটি ঘর আলোকিত, আনন্দে পরিপূর্ণ এবং ভ্রাতৃপ্রেমের উৎসবে পরিপূর্ণ ছিল - যে দিনটিকে আমরা আজ ভাই দুজ নামে জানি।

    বুদ্ধের সৎবোন, সুন্দরী নন্দা, তার ভাইয়ের আগমনের কথা শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন। বেশ কয়েক বছর পরে ভাই-বোনের সাক্ষাতের মুহুর্ত তৈরি হচ্ছিল। তাঁর আগমনের উদ্দেশে উঠোনে  প্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন, খাবার বানিয়ে ভাইয়ের (বুদ্ধ) জন্য অপেক্ষা করেছিলেন।  

    বুদ্ধ যখন এসেছিলেন, ন্দা বিনীতভাবে তাকে প্রণাম করেছিলেন। তিলক দেওয়ার পরিবর্তে, তিনি তার কপালে একটি পদ্মের পাপড়ি রেখেছিলেন - যা পবিত্রতা এবং শান্তির প্রতীক।

> ভাই, ন্দা বলো,

নন্দা> “আজ বোনেরা তাদের ভাইদের জন্য দীর্ঘ জীবন এবং সুখের জন্য প্রার্থনা করবে। কিন্তু আমি আর কী প্রার্থনা করবো। তুমি তো ইতিমধ্যেই সত্যকে অর্জন করেছ?”

বুদ্ধ হাসলেন।

 তিনি (বুদ্ধ) বললেন, প্রিয় বোন নন্দা, আজ, আমার জন্য দীর্ঘ জীবনের জন্য প্রার্থনা করো না, বরং দীর্ঘ আলোর জন্য প্রার্থনা করো। আমি তোমার জন্য জ্ঞানের জন্য প্রার্থনা করব - যাতে জীবনে প্রেম এবং জ্ঞান উভয়ই বিরাজ করে। এটিই প্রকৃত সুরক্ষা।

     দুজনে একটি প্রদীপের আলোয় খাবার ভাগাভাগি করে খেলেন। প্রদীপটি জ্বলজ্বল করছিল, কিন্তু নিভে যায়নি—যেমন তাদের ভালোবাসা, যা সময় এবং দূরত্বের সাথেও ম্লান হয়নি

কথিত আছে যে সেই দিন থেকে অনেক গ্রামে ভাই-বোনের নামে প্রদীপ জ্বালানো শুরু হয়েছিল—বুদ্ধি ও করুণার প্রদীপ হিসেবে।

(তথ্য সংগ্রহ – The Dalit Voice)


Read More

Monday, 22 September 2025

// // Leave a Comment

গীতা কি বৌদ্ধধম্মের পূর্বে কার? লেখক- ডঃ আম্বেদকর

 


গীতা কি বৌদ্ধধম্মের পূর্বে কার?

   (ক) ভগবদ্‌গীতা ব্রহ্ম-নির্বান বিষয়ে আলোচনা করেছে (ম্যাক্সমূলার মহাপরি-নির্বান সুত্ত, পৃঃ ৬৩) অর্থাৎ ব্রহ্মলাভ করার পথ। ভগবদ্‌গীতা বলেছে নির্বান লাভ করার উপায়-(১) শ্রদ্ধা অর্থাৎ আত্মবিশ্বাস, (২) ব্যবসায় অর্থাৎ স্থিরপ্রতিজ্ঞ, (৩) স্মৃতি অর্থাৎ অদ্ভীষ্টস্মরণ, (৪) সমাধি অর্থাৎ একান্তধ্যান, এবং (৫) প্রজ্ঞা অর্থাৎ অধ্যাত্মিক বা খাঁটি জ্ঞান। এই “নির্বাণ” মতবাদ গীতা কোথা থেকে ধার করেছে? নিশ্চয়ই তা উপনিষদ থেকে ধার করা হয় নাই। কারণ উপনিষদে কোথাও নির্বান শব্দটির উল্লেখ করে নাই। সমস্ত ধারণাটি বৌদ্ধদের এবং বৌদ্ধধম্ম হতে  তা ধারপ্রাপ্ত। এ বিষয়ে যদি কারো কোন সন্দেহ থাকে তবে ভগবদ্‌গীতার এই ব্রহ্মনির্বানের সঙ্গে ‘মহাপরিনিব্বান সুত্তে’ সংকলিত নির্বাণ সম্পর্কে বৌদ্ধদের ধারণার সহিত তুলনা করতে পারেন। দেখা যাবে যে সেগুলি একই। ঘটনা এই নয় কি যে গীতা নির্বাণের পরিবর্তে-ব্রহ্ম-নির্বাণদের সম্পূর্ণ ধারণাটি ধার করেছে? এটা বৌদ্ধ ধম্ম থেকে চুরি করার অপবাদ মোচন ভিন্ন অন্য কোন কারণে নয়

(তথ্যসূত্রঃ ভগবদ্‌গীতা সম্পর্কে প্রবন্ধঃ প্রতিবিপ্লবের দার্শনিক ব্যাখ্যা- ডঃ আম্বেদকরআম্বদেকর রচনাবলী ৬ষ্ঠ খন্ডকৃষ্ণ এবং তার গীতা)

Read More

Saturday, 24 May 2025

// // Leave a Comment

ভারতের প্রাচীন ভাষা কোনটি সংস্কৃত না পালি? ইতিহাস কী বলে? লেখক- ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ (বই- ইতিহাস কী মুআয়না)

 


ভারতের প্রাচীন ভাষা কোনটি সংস্কৃত না পালি? ইতিহাস কী বলে?

লেখক- ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ সিংহ (বই- ইতিহাস কী মুআয়না-হিন্দি)

অনুবাদক- জগদীশচন্দ্র রায়। (বই-ইতিহাসের পর্যালোচনা)

 (ভারতে সুকৌশলে এটা প্রচার করা হয় যে, সংস্কৃত অতি প্রাচীন ভাষা। এটা কতোটা সত্যি? আসুন এ বিষয়ে কিছুটা জানার চেষ্টা করা যাক। উল্লেখিত বই থেকে কিছু অংশ তুলে দিলাম)

ভাষার ইতিহাস

১৬

   ভাষার আচার্যরা সংস্কৃতকে পালির সাথে, পালিকে প্রাকৃতের সাথে এবং প্রাকৃতকে অপভ্রংশের সাথে যুক্ত করেছেন। 

    এবার বলুন, পালিতে সংস্কৃতের কোনো ততসম শব্দ আছে কি? নেই।

    এবার বলুন, অপভ্রংশে সংস্কৃতের কোনো ততসম শব্দ আছে কি? নেই। 

    আর্য ভাষার ১৫০০ বছরের ইতিহাসে পালি, প্রাকৃত এবং অপভ্রং সংস্কৃতের ততসম শব্দে সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত। যদিও আধুনিক আর্য ভাষাতে সংস্কৃতের ততসম শব্দ প্রচুর পরিণামে পাওয়া যায়।  

    যদি আপনার ভাষার ইতিহাস সঠিক হয়, তবে সংস্কৃত শব্দগুলি বেশিরভাগ পালিতে, তার থেকে কম প্রাকৃতে, তার থেকে কম অপভ্রংশে এবং সব থেকে কম আধুনিক ভাষায় হওয়া উচিত ছিল।

আপনাদের এটা উল্টো মনে হচ্ছে না কি? 

   ২৩

     সংস্কৃতের পন্ডিতরা ঘোমটাকেবেষ্টনীর সঙ্গে, নথকে নস্ত-এরর সঙ্গে, ঢাকনাকে স্থগ-এর সঙ্গে, ছেকনিকে ক্ষরণ-এর সঙ্গে এবং যাঁতাকে যন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত করে সংস্কৃত শব্দ বানিয়েছেন।

     আপনি যদি সহজ থেকে জটিল করার কৌশল শিখতে চান, তাহলে সংস্কৃতের মাস্টারদের কাছ থেকে শিখুন।

প্রকৃতপক্ষে ওড়ার জন্য ওড়না, নথের জন্য নাক, ঢাকার জন্য ঢাকনা, ছাঁকার জন্য ছাঁকনি এবং যান্তনের (পেষার) জন্য যাঁতা।

    ভাই এই সব সহজ ব্যাপার। কোনো জটিলতা নেই। এর জন্য সংস্কৃতের জঙ্গলে বেশি দূর  ঘোরাঘুরি করার দরকার নেই।  

     ২৪

        ধরুন, মানুষ বানর থেকে বিবর্তিত হয়েছে, তাহলে বানরের অধিকাংশ গুণ প্রাচীন মানুষের মধ্যে পাওয়া যাবে এবং আধুনিক মানুষের মধ্যে কম পাওয়া যাবে। 

     একইভাবে, ধরুন সংস্কৃত থেকে আধুনিক হিন্দির বিকাশ হয়েছে, তাহলে সংস্কৃতের বেশিরভাগ গুণ প্রাচীন ভাষায় পাওয়া যাবে এবং আধুনিক ভাষায় কম পাওয়া যাবে।

    কিন্তু এটাতো উল্টো। প্রাচীন ভাষা পালি-প্রাকৃতে সংস্কৃতের গুণগত মান বা শব্দাবলিই নেই, এটা আধুনিক হিন্দিতেই বেশি।  

   সিদ্ধান্তে এটা বেরিয়ে আসে যে, পালির - প্রাকৃতের বিকাশ সংস্কৃত থেকে হয়নি। 

২৫

    সংস্কৃতকে ভারতে দেবভাষা বা দেবতাদের বলা হয়। কিন্তু বিখ্যাত ফার্সি গ্রন্থ শাহনামা”-তে (১০১০ খ্রি.) ফেরদৌসি বলেছিলেন যে দেবতা কাদের বলা হয়?

   শাহনামাতে দেব/দেবতা নামে একটি উপজাতি (উপজাতি) বর্ণনা করা হয়েছে  দেব নামের এই উপজাতি ঘোড়ায় চড়ত, যোদ্ধা ছিল এবং মেয়েদের অপহরণ করত। 

     তুলসী রাম লিখেছেন যে দেব নামের এই উপজাতি ইরান থেকে ভারতে এসেছিল।

     আজও ফার্সি ভাষায় দেব মানে রাক্ষস, লম্বা মানুষ এবং নরখাদক হিসাবে মনে করা হয়

২৬

   পৃথিবীর প্রতিটি ক্ষেত্রের বিকাশ হচ্ছে। ভাষার ক্ষেত্রেও বিকাশ হচ্ছে। 

    তাহলে ভারতে সংস্কৃত যুগের পর অপভাষার (অপভ্রংশ) যুগ অর্থাৎ পতন হওয়া ভাষার যুগ কীভাবে এলো?

    এটাতো কলিযুগের মতো কথা হলো। কলিযুগের কথা এটাই তো এটাই তো যে, শুভ যুগের পরে খারাপ যুগ এসেছে

২৭

 ভারতে আর্যদের আগমন যদি সকলের পরে হয়ে থাকে, তাহলে আর্যভাষা সংস্কৃত’, ভারতের প্রাচীনতম ভাষা কীভাবে হবে?

 ২৮

    ভাষাবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায়ে লেখা আছে যে, ভাষাবিজ্ঞানের অধীনে শুধুমাত্র মানুষের ভাষাই অধ্যয়ন করা হয়। 

    সংস্কৃত যদি দেবতাদের বাণী হয়, দেবতাদের ভাষা হয়, তাহলে তা মানুষের ভাষাকে ভাষা হিসেবে গণ্য হবে না।

     তাহলে সংস্কৃতকে ভাষাবিজ্ঞান থেকে বের করতে হবে এবং ভাষাবিজ্ঞান থেকে সংস্কৃত ভাষাকে  পড়ানো বন্ধ করতে হবে।

  ২৯

    গুজরাটি ভাষা গুজরাটের। বাংলা ভাষা বাংলার। ওড়িয়া ভাষা ওড়িশার। তামিল ভাষা তামিলনাডুর। সংস্কৃত ভাষা কোথাকার? সংস্কৃতের ভূগোল আপনি কোথাও খুঁজে পাবেন না।

৩০

    ধরে নিলাম যে সংস্কৃত ভারতের গৌরবোজ্জ্বল এবং জনপ্রিয় ভাষা।

    তাহলে সংস্কৃতে কেন সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় না?

    টিভির লোকেরা কেন সংস্কৃতে সিরিয়াল করে না?

    ভারতে সংস্কৃত ভাষায় কেন  সিনেমা তৈরি হয় না?

   গ্রামে-গ্রামে কেন সংস্কৃত ছবির গান বাজানো হয় না?

   ভাই! যেকোনো পুঁজির বিনিয়োগ করা হয় শুধুমাত্র জনগণের চাহিদা অনুযায়ী। সংস্কৃত পণ্যের জন্য পুঁজিকে ডুবাবে?

৩১

পুরাণ-এর অর্থ হচ্ছে অনেক পুরানো, একদম প্রাচীন কালের, জীর্ণশীর্ণ! এর নাম নিজেই প্রমাণ করে যে পুরাণগুলি খুব পুরানো নয়।

    যে সময়ে পুরাণ লেখা হবে, তখনতো পুরাণ নতুন হবে। কিন্তু লেখক চতুরতার সাথে এর নাম দিয়েছেন পুরাণ, যাতে মানুষ ভ্রান্তিতে এটিকে অনেক পুরনো বলে বুঝে নেয়।

    নতুনকে পুরোনো বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্যই এ গ্রন্থের নাম দেওয়া হয়েছে পুরাণ।

৩২

হিন্দির ‘বারহ’ (বারো) শব্দটি মূলত আদিবাসী শব্দ।

    সংস্কৃতের দ্বাদশ থেকে ‘বারহ’ (বারো) তৈরি হবে না।

    বা/বার হচ্ছে মুন্ডা ভাষার ডি এন এ।  বা/ বার-এর অর্থ হয়- দুই। এই বা/বার থেকে তৈরি হয়েছে – বারহ (বারো)। তাই মুন্ডা ভাষার ডিএনএ হচ্ছে -বা/বার। এই জন্য তার সব ভাষায় বা/বার-এর দুটি অর্থ হয়। আর্য ভাষায় শুধুমাত্র সিন্ধি এবং গুজরাটি দুটির জন্য বি/বে আছে। তাই আর্য ভাষার কোনো ডিএনএ নেই, এমনকি দ্রাবিড় ভাষারও নেই এবং কিরাত ভাষারও নেই।

বারহ (বারো)শব্দটি সংস্কৃতের নয়, মুন্ডা ভাষার।

৩৩

    কুর্মিকে, কোয়রীকে আর্য ভাষা সংস্কৃতে কী বলা হতো? বলুন? নিরব কেন? এটা ফালতু কথা যে এরা আর্য ছিল। যদি আর্যরা থাকত, তাহলে কি আর্য ভাষায় তাদের নাম থাকত না?

৩৪

    আগে বুদ্ধের অনুসারীকে বুদ্ধু বলা হত। কিন্তু পরবর্তীতে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা বুদ্ধর অর্থ পাল্টে বোকা বা বেকুফ বানিয়েছে। একইভাবে অশোকও বুদ্ধের অনুসারী ছিলেন। তাই দেবনাম্‌পিয়-এর অর্থকে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা বোকা বা বেকুফ করে দিয়েছে (স্ট্যান্ডার্ড হিন্দি অভিধান)। প্রকৃতপক্ষে পালি ভাষায় দেব মানে বুদ্ধ। (পালি-হিন্দি অভিধান)। তাই দেবানম্‌পিয়-এর অর্থ বুদ্ধের প্রিয় রাজা (অশোক) হয়েছিলেন। এখন আপনি যদি বুদ্ধের প্রিয় রাজা (অশোক) অর্থ ধরে নিয়ে আবার শিলালিপি পড়ুন,  বিশেষ করে প্রথম ছোট শিলালিপি বা রুম্মিনদেই শিলালিপি, তাহলে এটা পরিষ্কার হবে যে দেবানম্‌পিয় মানে দেবতাদের প্রিয় নয়, বুদ্ধের প্রিয় হবে।

 

 

 

Read More

Thursday, 10 April 2025

// // 1 comment

ধর্মনিরপেক্ষ ব্রাহ্মণ এবং পুরোহিত শ্রেণীর ব্রাহ্মণদের মধ্যে পার্থক্য করা অর্থহীন। তারা উভয়েই পরস্পরের আত্মীয়।- আম্বেদকর


 সাথীরা, আমাদের মধ্যে মধ্যে একটা প্রবাদ আছে অনেক ব্রাহ্মণ আছেন যাঁরা জাত-পাত মানেন না। হ্যা, ব্যাতিক্রম সর্বক্ষেত্রে আছে। কিন্তু আমাদের কাছে কতো জন ব্রাহ্মণের দৃষ্টান্ত আছে যে, তাঁরা জাত ব্যাবস্থার বিলুপ্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন?
এবিষয়ে আমরা বাবা সাহেব রচিত Annihilation of Caste এ দেখতে পাই-
ব্রাহ্মণরা জানে যে, হিন্দু সমাজের ধ্বংসের কারণ হল জাত-ব্যাবস্থা। উচ্চশিক্ষিত ও কৃষ্টিসম্পন্ন শ্রেণী হিসাবে তারা জাতব্যাবস্থার পরিনামের প্রতি উদাসীন থাকতে পারবে, এটা আশাকরা ঠিক নয়। আপনারা হয়তঃ এই তর্ক ও করতে পারেন যে, অনেক ধর্মনিরপেক্ষ ব্রাহ্মণ আছে। যদি পুরোহিত শ্রেণীর ব্রাহ্মণরা জাতব্যাবস্থা ভাঙতে না চায়, তাহলে ধর্মনিরপেক্ষ ব্রাহ্মণরা জাতব্যাবস্থার নির্মূল করতে চাইবে। এই সব যুক্তি-তর্ক শুনে বেশ যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়। কিন্তু এই সব যুক্তি-তর্কের মধ্যে একটি কথা ভুলে যাওয়া হয়। সেটি হ’ল জাতব্যাবস্থার বিলুপ্তি ঘটলে ব্রাহ্মণ জাতির খুব ক্ষতি হবে। এই সব তথ্যকে ধ্যান রেখে আমরা এই আশা করতে পারি কি, ব্রাহ্মণরা এই ধরনের আন্দোলনের নেতৃত্ব করতে রাজি হবেন; যার পরিণাম হিসাবে ব্রাহ্মণ জাতির শক্তি এবং সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে? পুরোহিত ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ গ্রহন করতে ধর্মনিরপেক্ষ  ব্রাহ্মণদের পাওয়ার আশা করা যুক্তিযুক্ত হবে কি? আমার বিচারে, ধর্মনিরপেক্ষ ব্রাহ্মণ এবং পুরোহিত শ্রেণীর ব্রাহ্মণদের মধ্যে পার্থক্য করা অর্থহীন। তারা উভয়েই পরস্পরের আত্মীয়। তারা একই শরীরের দু’টি বাহু। এক বাহুর অস্তিত্বের জন্য অন্য বাহু যুদ্ধ করতে বাধ্য। (Is it reasonable to expect the secular Brahmins to take part in a movement directed against the priestly Brahmins? In my judgment, it is useless to make a distinction between the Secular Brahmins and Priestly Brahmins. Both are kith and kin. They are two arms to the same body and one bound to fight for the existence of the other.)

------------------------------------- 
Read More

Thursday, 27 March 2025

// // Leave a Comment

ড. বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের মহাপরিনির্বাণ (6th Dec.) উপলক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন। তোমার জীবনই সংগ্রাম। জগদীশচন্দ্র রায়




















 . বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের মহাপরিনির্বাণ (6th Dec.) উপলক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন।  

তোমার জীবনই সংগ্রাম।

জগদীশচন্দ্র রায়

 

তোমার জীবনই সংগ্রাম।

তোমার নামই সংগঠন।

তোমার কর্ম ও আদর্শই জাগরণ

তাই তুমি সকলের বাবা সাহেব, লহ প্রণাম।

 

বাল্যকালে তুমি মাতৃহারা হয়েও

শিক্ষার আলো পেতে ব্রত নিলে

 সকল বাঁধাকে পিছনে ফেলে

 জেগে উঠলে তুমি ‘ভীম’ নাম নিয়ে।

 

বিদেশে উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি নিয়েও

 গ্রহণ করলেনা কোনো উচ্চপদ।

 তোমার মাথায় একটাই চিন্তা

ব্রাহ্মণ্যবাদের কবল থেকে ভারতকে মুক্ত করে

বানাতে চাইলে প্রবুদ্ধ ভারত।

 

তোমার সংগ্রামের প্রথম মুহুর্তেই

বলিদান দিল তোমার সন্তানেরা ও আপন জন।

নিজের সন্তানের লাশকে ঢেকে রেখে তুমি

খুলে দিলে হাজার সন্তানের অন্ন-বস্ত্র ও শিক্ষার দ্বার।

তোমার সংগ্রামের রক্তকে পান করে

জেগে উঠল ঘুমন্ত শিশুর দল।

 

 

কিন্তু হায়! একি হোলো?

তারা কোথায় ছুটে চলেছে?

কোন্‌ ব্রাহ্মণ্যবাদের মরিচিকা তাদের করছে আহবান?  

কোন অগ্নিকুন্ডের দিকে ছুটে চলেছে এরা

 নিজের স্বাভিমানকে দিতে বলিদান!

এরা কোন বিসমতার সুরে নৃত্য করছে?

বিকিয়ে দিচ্ছে নিজেদের আত্ম সম্মান?

 

এ দোষ কি শুধু তাদের?

যারা তোমার ফল খেয়েই ভুলে যাচ্ছে তোমাকে?

তারাতো অবশ্যই দোষী।

কিন্তু তাদের থেকেও মহাদোষী ঐ ব্রাহ্মণ্যবাদি শয়তানগণ।

যারা তোমাকে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে দিতে,

তোমার নামে অপবাদ প্রচার করতে

ছড়িয়ে দিচ্ছে বিষের জ্বাল।  

 

বিসমতার এই বারুদ, রুদ্ধ করছে সমতার কন্ঠকে।  

ধীরে ধীরে সব কিছুকে গ্রাস করে

বুদ্ধের মত তোমাকেও

নিক্ষেপ করতে চাইছে অতলান্তে!

 

তাই, ওঠো, জাগো হে মুক্তিকামী জনতা।

শুরু করো সংগ্রাম, ফিরে পেতে স্বাভিমান ও আত্ম সম্মান।

যদি তোমরা হও এই পিতার সন্তান।

হাতে নাও বিচার ধারার কৃপাণ

 ভেঙে ফেলে দাও এই শয়তানের প্রাচীর

তুলে ধরো মহামবের বিজয় বীণ।

 আর শ্লোগান তোলো জয় ভীম জয় ভীম।

শ্লোগান তোলো জয় ভীম জয় ভীম।

_____________ 

Read More
// // Leave a Comment

তোমার বিদ্যার দেবতা কে? জগদীশচন্দ্র রায়

 


তোমার বিদ্যার দেবতা কে?

জগদীশচন্দ্র রায়

তুমি ছিলে অচ্ছুৎ, পতিত, নীচ্‌।

তোমার থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল

শিক্ষা, সম্পত্তি ও শস্ত্রের অধিকার।

তুমি ভাবছো, ‘এসব জেনে আমার কী দরকা’। 

তবে শোন, তোমার একটাই কর্ম হলো নির্ধারিত;

নিঃশব্দে প্রভুর সেবা করা।

তুমি হলে পশুর থেকেও অপবিত্র।

এইভাবে তুমি শৃঙ্খলীত হয়ে, মানুষ নামের পশু হয়ে

কাটালে তোমার জীবন।

হাজার বছর ধরে।

 

কালের চক্র ঘুরে চলে। দিকে দিকে জন্ম নিল-

বুদ্ধ, মার্ক্স, মার্টিন; হরি-গুরু, যোগেন,ভীম।

‌ জ্যোতি,সাবিত্রি, নেলসন; আরো কতো নাম।   

তোমাকে শৃঙ্খল মুক্ত করতে শুরু হোল তাদের সংগ্রাম।

ক্রান্তি – প্রতিক্রান্তির ডামাডোলে

কারাগারের ছিদ্র দিয়ে দেখতে পেলে তুমি আলোকে।

 যে আলো তোমার শৃঙ্খল মুক্ত করতে চায়।

তোমার অজ্ঞানতাকে দূর করতে চায়।

তোমাকে সমস্ত অধিকার ফিরিয়ে দিতে চায়।

প্রবল সংঘর্ষের ফলে তুমি শরীরের বন্দি দশা থেকে হলে মুক্ত।

 

 কিন্তু হায়!

তোমার প্রভুরাতো তোমাকে গোলামই রাখতে চায়।

তাই তুমি বন্দি হলে বৈদিক পূজা-পাঠ, যাগ-যজ্ঞ, দান-দক্ষিণায়। 

তোমাকে যারা মুক্ত করে আলো দেখালো

তাদের তুমি ভুলে গিয়ে আকড়ে ধরলে অলীককে।

আপন করলে শত্রুকে। আর পর করলে নিজেকে।

 

তুমিতো জানোয়ার নও। তুমিতো মানুষ!

কবে জাগবে তোমার হুষ?

যে পশুও বোঝে কোনটা মাটি আর কোনটা খাটি।

তাহলে তুমি কেন বুঝতে চাওনা

মাটির পুতুল ছেড়ে মানুষ কেন চেনোনা?

তোমার হাতে তো কলম উঠেছে,

কিন্তু পেটে কালির বিদ্যা কবে হবে?

তোমার পকেটে তো টাকা এসেছে।

তবে এসবের অবদানকে কবে জানবে?  

তোমার অহমিকাকে ভুলে গিয়ে মহামানবদের কবে চিনবে?

 যারা অবিদ্যান হয়েও বিদ্যার লড়াই করল তোমার জন্য

তোমার চোখে জ্বাল্লো জ্ঞানের আলো

আজ তাদের ভুলে তুমি ছুটে চলেছ

এ কোন অলীক বিদ্যাদেবীর দ্বারে??

 

যদি তুমি মানুষ হতে চাও

মাটির প্রতিমাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে

ভালোবাস মাটির মানুষকে।

ভালবাস তোমার জ্ঞানালোক ধারীকে।

বন্দনা করো তাদের জ্ঞানাদর্শকে।

বন্দনা করো তাদের জ্ঞানাদর্শকে।।

_______________ 

 

 

 

 

 

 


Read More