ভারতের সমাজ ব্যবস্থা হচ্ছে জাতিবাদে পুষ্ট।
এই জাতিবাদের মূল প্রযোজক হচ্ছে ব্রাহ্মণতন্ত্র। এই ব্রাহ্মণতন্ত্রকে লুকিয়ে রেখে
এরা নাম দিয়েছে হিন্দুতন্ত্র। আর এই হিন্দুতন্ত্রকে সবদিক দিয়ে হৃষ্টপুষ্ট করে
মহিরুহে পরিণত করার একটা অধ্যায় হচ্ছে যোগ দিবসের নাটক। ভারতবর্ষকে হিন্দুরাষ্ট্র
করণের জন্য সব থেকে সুবর্ণ কাল হচ্ছে- বর্তমান সময়। আর এই হিন্দু রাষ্ট্রীয় করণের
ক্ষেত্রে সহায়তা করছে রাষ্ট্রীয় স্তরের সমস্ত মাধ্যম। কারণ এই রাষ্ট্রীয় মাধ্যম
হচ্ছে হিন্দু করণের প্রধান হাতিয়ার।
২১শে জুন কেন যোগ দিবস? এই দিনের বিশেষত্ব
কি? পাঠকরা হয়তঃ মিডিয়ায় প্রভাবিত হয়ে এ
বিষয়ে অন্য কিছু জেনেছেন। তবে, আসল রহস্য কতটা জানেন সেটা ভাববার বিষয়।
আপনারা হয়তঃ নাম শুনে থাকবেন-“রাষ্ট্রীয়
স্বয়ং সেবক সংঘ”-এর। যার সংক্ষিপ্ত নাম RSS. যেটা
প্রতিষ্ঠিত করা হয় ১৯২৫ সালে। আর
এই RSS এর কর্মকর্তা গোড্সে ই গান্ধীজীকে হত্যা করেছিল। এই RSS এর প্রতিষ্ঠিতা হচ্ছে- Dr. Hedgewer, যার
মৃত্যুদিন হচ্ছে ২১শে জুন। আজ আপনারা কেন্দ্রে BJP-র সরকার
দেখছেন। আসলে কিন্তু ওটা RSS এর সরকার। কারণ সমস্ত মন্ত্রী হচ্ছে RSS এর প্রভাবশালী
কর্মকর্তা। তাই এই কর্মকর্তারা ক্ষমতা হাতে পেয়ে তাদের সংঘের সংস্থাপকের
মৃত্যুদিনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের নাম দিয়েছে। এবার
আপনারাই ভাবুন এই সংস্থাপক দেশের সমগ্র দেশবাসীর জন্য কি করেছে? নাকি হিন্দুত্ব
করণের কাজ করেছে ?
এবার আসি যোগের পূর্ব কথায়। “ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি”-এর মাননীয়
প্রবীর ঘোষ, তাঁর ‘মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন’
বইতে জানিয়েছেন(নিচের সম্পূর্ণ লেখা এই বই থেকে তুলে দিয়েছি)- খ্রিস্টপূর্ব
ষষ্ঠ-শতাব্দীর কাছাকাছি আমরা যে সব আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের নাম
পাই, তাঁরা হলেন-আত্রে, সুশ্রুত, জীবক ও চরক। এরাঁ ছিলেন বৌদ্ধ যুগের চিকিৎসক।
আত্রেয় ছিলেন তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাবিদ্যার অধ্যাপক। চিকিৎসাবিদ্যার উপর অনেক গ্রন্থ লিখে গেছেন। তার মধ্যে ‘আত্রেয়
‘সংহিতা’ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। পাঁচ
খন্ডের এই গ্রন্থে নানা রকমের রোগ ও বিভিন্ন ভেষজের গুণ বর্ণনা করা হয়েছে।
সশ্রুত
ছিলেন শল্যচিকিৎসক। তাঁর লেখা ‘সুশ্রুত সংহিতা’র আলোচ্য বিষয় শল্যচিকিৎসা। সুশ্রুতের গ্রন্থের
খ্যাতি ছিল বিশ্বজুড়ে। সুশ্রুত মানুষের শরীরের গঠনতন্ত্রের একটা নির্ভরযোগ্য ছবি
এঁকেছিলেন। বুঝতে অসুবিধে হয় না, তিনি মানুষের শবব্যবচ্ছেদ করতে অভ্যস্ত ছিলেন।
জীবন
শল্যচিকিৎসক ও শশুচিকিৎসক হিসেবে তাঁর সময়ে ভারতবর্ষে অদ্বিতীয় ছিলেন। তিনি ‘কাশ্যপ
সংহিতা’ নামে নয় খন্ডের গ্রন্থ লিখে গিয়েছিলেন। প্রাচীন বৌদ্ধ গ্রন্থ
‘ত্রিপিটক’-এ আয়ুর্বেদ চিকিৎসক চরক-এর উল্লেখ রয়েছে। চরক-এর লেখা ‘চরক
সংহিতা’ প্রাচীন আয়ুর্বেদের জ্ঞানকোষ ও ঔষধ বিজ্ঞানের প্রামাণ্য গ্রন্থ।
আয়ুর্বেদের এই
স্বররণযুগে বৌদ্ধ রাজারা আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের বা বৈদ্যদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
আয়ুর্বেদের সুবর্ণযুগের পতনের শুরু বৌদ্ধ শাসক মৌর্যবংশের শেষ সম্রাট
বৃহদ্রথের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে। সম্রাট বৃহদ্রথকে হত্যা করে ব্রাহ্মণবংশজাত রাজকর্মচারী
পুষ্যমিত্র শুঙ্গ। সম্রাট
চন্দ্রগুপ্তের যেমন পরামর্শদাতা ছিলেন চাণক্য; তেমন-ই পুষ্যমিত্রের পরামরররশদাতা ও
প্রধান রাজপুরোহিত ছিল-ভরদ্বাজবংশীয় ব্রাহ্মণ পতঞ্জলি। বৌদ্ধ শাসনকে উৎখাত করে
পুষ্যমিত্র শুঙ্গ রাজবংশের প্রতিষ্ঠা ও ব্রাহ্মণ ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে।
আধুনিক
পন্ডিতদের মতে ‘মনুস্মৃতি’ নামের ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মীয় আইন-গ্রন্থের রচয়িতা ছিল
পতঞ্জনি। জাতপাতের অন্যতম স্রষ্টা পতঞ্জলি শূদ্র ও নারীদের শিক্ষালাভের অধিকার
কেড়ে নিয়েছিল। ‘মুক্তচিন্তা’ যে বৈপ্লবিক চিন্তার জন্ম দেয়- এটা বুঝেছিল পতঞ্জলি। মুক্তচিন্তার প্রসার রোধে মনকে পঙ্গু, নিষ্ক্রিয় রাখতে সৃষ্টি
করল ‘যোগ’-এর। যোগ হলো আত্মার
সঙ্গে পরমাত্মার মিলন;পরমব্রহ্মকে দর্শন, আত্মদর্শন। এমনটা করেছিল সামন্তপ্রভু ও
জাদু পুরোহিতদের স্বার্থকে রক্ষা করতে।
পতঞ্জলি
শল্যচিকিৎসার প্রতি ধিক্কার জানিয়ে দৈব ওষুধের প্রতি তার অকুন্ঠ সমর্থন জানায়।
বৈদ্যদের শবব্যবচ্ছেদ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে
চিকিৎসা বিজ্ঞানের গতি রুদ্ধ করে।
আয়ুর্বেদ নির্দেশিত মানবদেহের ‘অ্যানাটমি’
জ্ঞানকে বাতিল করে যোগের ‘অ্যানাটমি’(Anatomy শরীর বিজ্ঞান) ধারণার এক কাল্পনিক
ছবি আঁকে। তার কল্পনার ‘অ্যানাটমি’ জ্ঞান বড়ই বিচিত্র ও অবাস্তব। মানব মস্তিষ্কের
হাজার পাপড়ির ফুলের কুঁড়ির উপর ফণা মেলে থাকা সাপের কল্পনা, সাপের লেজের মানুষের
গুহ্য দেশে অবস্থান; ষঠচক্র, কুলকুন্ডলিনী জাগ্রত করার নামে যে কোনো নারীর সঙ্গে দেহ-মিলনকে
আবশ্যিক শর্ত হিসেবে জুড়ে দেওয়া; যোগের সাহায্য নানা অলৌকিক ক্ষমতা অর্জন করা-
ইত্যাদি কুসংস্করে অন্ধকার সৃষ্টির কাজে নেমে পড়ে।
ভারতীয় বৈদ্যদের
চিকিৎসার মূল ভিত্তি ছিল বায়ু, পিত্ত ও শ্লেষ্মা। বৈদ্যদের এই বায়ুতত্ত্বকে বিকৃত
করে পতঞ্জলি। তার ‘বায়ুতত্ত্বে’ ‘প্রাণায়াম’ নামের এক উদ্ভট তত্ত্ব আমদানী করে।
একটা করে নাকের ফুটো টিপে বন্ধ রেখে আর একটা করে নাকের ফুটো দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের
কাজ চালানো। এ’রকমভাবে বায়ু নিয়ন্ত্রণ বা শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ শিখিয়ে গেছে
পতঞ্জলি। পতঞ্জলির ‘অ্যানাটমি’ জ্ঞান থাকলে জানতে
পারতো দুটো নাকের ফুটোই গিয়ে মিশেছে শ্বাসনালীতে এবং শ্বাসনালী যেহেতু একটাই, তাই
নাকের ফুটো বন্ধ করে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
যোগের দ্বারা
সমাধি বা ভাব-সমাধি আসলে স্বসম্মোহন ছাড়া কিছুই নয়। যোগ সমাধিতে গভীরভাবে নিজের
চিন্তায় একটি ধারণাকে সঞ্চারিত (auto-suggestion) করায় অলীক দর্শন, অলীক শ্রবণ ইত্যাদি অনুভূতি
হতে থাকে। এই হলো যোগী ও তান্ত্রিকদের ‘সত্য দর্শন’, ‘সত্য উপলব্ধি’।
আয়ুর্বেদ একটি
বিজ্ঞান ছিল, আরও উন্নত হতে হতে অ্যালোপ্যাথির সৃষ্টি। আর যোগের ভিত্তিভূমি হলো-
ভুল অ্যানাটমি
জ্ঞান ও
বাস্তববর্জিত চিন্তা। অর্থাৎ পুরোটাই দাঁড়িয়ে আছে মিথ্যের উপরে।
যোগের সঙ্গে
তন্ত্রের মিল প্রচুর। অনেক ক্ষেত্রেই এক ও অভিন্ন। যোগের ‘অ্যানাটমি’
জ্ঞানের উপর তন্ত্র দাঁড়িয়ে। দুটোই বিজ্ঞান বিরোধী চিন্তা, কুসংস্কারাচ্ছন্ন
চিন্তা।
কোন ডাক্তার
বা ডক্টরেট যোগের পক্ষে লিখেছেন- এটা মুক্তমনের যুক্তিবাদীদের কাছে গ্রহণ
যোগ্যতালাভের মাপকাঠি নয়। তাঁরা যা লিখেছেন তা কতটা ঠিক- সেটাই বিবেচ্য।
যোগ আমাদের স্বাভাবিক মস্তিষ্কচর্চার বিরোধী, চিন্তচর্চার
বিরোধী, প্রশ্ন তোলার বিরোধী। কোনও সৃষ্টিশীল কাজেই এইসব যোগ-চিন্তায় বিভোররা অচল।
বিজ্ঞানে-শিল্পে-সাহিত্যে এমনকি প্রত্যেকটি সৃষ্টিশীল কাজে যারা নিজেদের
চিন্তা-চতনাকে উজাড় করে দিয়েছিলেন, তাঁরা কেউ-ই ‘আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন’কে
জীবনের লক্ষ্য করে দিয়েছিলেন, তাঁরা কেউ-ই ‘আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন’কে জীবনের
লক্ষ্য করে নেননি। আর, নেননি বলেই নিজেরা এগিয়ে ছিলেন, সমাজকে এগিয়ে দিয়েছেন।
আজও সমাজের অগ্রগতি এইসব চিন্তাশীল মানুষদের উপর
নির্ভরশীল। এঁরা সমাজবিজ্ঞানী, পুরাতত্ত্ববিদ, ঐদিহাসিক, ভূতত্ত্ববিদ, বিজ্ঞানী,
শিল্পী, সাহিত্যক, অর্থনীতিবিদ ইত্যাদি যাই হোন না কেন কেউ-ই ‘যোগী’ নন।
এঁরা অনেকেই মন
ও শরীরকে ‘রিলাক্স’ করার জন্য, মস্তিষ্ক কোষকে বিশ্রাম দিয়ে আবার সতেজ করার জন্য
স্ব-সম্মোহন বা ‘মেডিটেশন’ করেন। কিন্তু সেই স্বসম্মোহন বা ‘মেডিটেশন’ যোগীদের
‘মেডিটেশন’ থেকে পৃথক কিছু। এখানে মনোবিজ্ঞান আছে, ঈশ্বর নেই।
মস্তিষ্ক চর্চার
কারণে অতি সক্রিয় মস্তিষ্ক কোষকে বিশ্রাম দিতে এবং সঙ্গে শরীরের কোষগুলোকে সাময়িক
বিশ্রাম দিতে স্বসম্মোহন বা মেডিটেশন করা হয়। বিশ্রামের পর সতেজ মস্তিষ্ক কোষ আবার
মস্তিষ্কচর্চার জন্য সতেজ হয়ে ওঠে। যোগীদের মেডিটেশনে চিন্তার চর্চাকে বন্ধ করে
দেওয়া হয় বলে মস্তিষ্ককোষগুলো নানারকম অস্বাভাবিক আচরণ করে। ফলে তাঁরা অনেকেই
ঈশ্বর দেখে। ঈশ্বরের বাণী শোনে, ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলে ইত্যাদি। মনোবিজ্ঞানী ও মনোরোগ
চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে ( observation ) ওরা মানসিক রোগী।
মনোবিজ্ঞান এবং
মনোরোগ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এইসব ঈশ্বর দেখার মতো ভ্রান্ত অনুভূতিকে বলা হয়
‘ইলিউশন’ (Illusion), ‘হ্যালিউসিনেশন’ (hallucination), ‘ডেলিউশন’ (delusion) এবং প্যারানয়া (Paranoia).
ধরুন শ্যামবাবুর
কথা। তিনি যোগ নিয় প্রচুর পড়াশুনা করেছেন।
অনেক যোগীদের কাছে গিয়েছেন যোগ শিখতে। এখন তাঁর ধ্যান-জ্ঞান যোগ সাধনা। তিনি একটা
যোগ-কক্ষ তৈরী করেছেন। যোগে বসলে একসময় বুঝতে পারেন অর্থাৎ অনুভব করতে পারেন, তাঁর
বীর্য ছটি চক্র অতিক্রম করে মস্তিষ্কের সহস্রদল পদ্মের কুঁড়িতে উঠেছে। ফণা মেলে
থাকা সাপ ফণা গুটালো। হাজার পাপড়ি মেলে ফুটে উঠলো পদ্ম-কুঁড়ি। প্রতিটি পাপড়ের
ভিন্ন ভিন্ন রঙ। পদ্মের উপর আছেন শিব-শক্তি। ঈশ্বর দর্শনের অপার আনন্দে চেতনা রহিত
হয়ে গেছে। গোটা চেতনা জুড়েই শুধু আনন্দ।
শ্যামবাবু
প্যারাইয়া রোগী।(‘প্যারানয়া’ রোগের অর্থ – বদ্ধমূল ভ্রান্তিজনিত মস্তিষ্ক
বিকৃতি। কিন্তু তাঁরা বিশ্বাসের পিছনে সুন্দর যুক্তি সাজাতে খুব ভালোই পারেন।)
ধর্ম ব্যবসায়ী নন, প্রতারক নন। এই রোগী যখন ভক্তদের মাঝে যোগের নানা গ্রন্থ থেকে
উদ্ধৃতি দিয়ে তা&র উপলব্ধির কথা বলেন, তখন তাঁর অনেক শিষ্য জুটে যাবেই। কারণ
এখনও আমাদের সমাজের প্রথাগত শিক্ষা পাওয়া মানুষেদের জ্ঞান(wisdom) –এর লেভেল অত্যন্ত কম। মস্তিষ্ক-চর্চার অভাবেই কম।
শ্যামবাবুর মতো
কিছু কিছু প্যারানইয়া রোগী সাধারণের চোখে ‘অবতার’ বা ‘মহাপুরুষ’ বলে পূজিত হচ্ছে।
তাই আমরা একথা
বলতে পারি যে-
যোগ সাধনা শুধুমাত্র স্থবির এক তত্ত্ব
নয়,
মস্তিষ্ক-চিন্তা বিরোধী তত্ত্ব নয়,
মানসিক রোগী তৈরী করার এক শক্তিশালী
তত্ত্ব–ও।
কিন্তু তবুও প্রশ্ন আসে তাহলে ‘যোগ’-এর এত
জনপ্রিয়তার কারণ কী?
আমরা দেখতে পাই- শ্রীমদ্ভাগবতের একাদশ স্কন্ধে শ্রীভগবান
যোগসাধনের গুণগান গেয়েছেন। গীতায় যোগ মাহাত্ম্য আছে। অতএব, হিন্দু-‘উপাসনা’ ধর্মে
বিশ্বাসীদের কাছে প্রশ্নাতীত পরম সত্য হল ‘যোগ’।
ইংলন্ডের পিয়ের ম্যুরের মতে- ‘ভারতের আধ্যাত্মিকতা মনগড়া
একটা ব্যাপার। ভারতের সাধুরা ভয়ংকর রকম ক্ষমতাশালী,(রাজনীতিকদের কল্যাণে
প্রভাবশালীও বটে) অসাধারণ অলৌকিক শক্তিধর।’
এসব কারণে আমরা
দেখছি, হিন্দু তন্ত্র, মন্ত্র, যোগের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এতে
হাওয়া লাগিয়ে প্রমোট করেছেন ব্যবসায়ীরা কাজে লাগাচ্ছেন এবং টিকিয়ে রাখছেন
রাজনীতিকরা। মিডিয়ার প্রচার ও বিজ্ঞাপনের দৌলতে একবার একটু জনপ্রিয়তার আভাস এলেই
হুড়মুড় করে প্রচার তুঙ্গে। টি ভি’র কল্যাণে টাকার খেলা। আর বিজ্ঞাপনের –বিজ্ঞাপনে
মানুষকে বোকা বানানোর খেলা।
এবার দেখি ‘যোগ’ কতটা বিজ্ঞান সম্মত।
মন থাকলে মনের চাপ থাকবেই। চাপ থাকে না মানসিক
প্রতিবিন্ধীর। মানসিক চাপ বাড়লে বাড়তি টেনশন তৈরি হয়। কে কতটা চাপ সহ্য করতে পারে,
তা মানুষে মানুষে যেমন পার্থক্য তৈরি করে; তেমনি অবস্থা, সিচুয়েশন, চাপের ধরন, সেই
বিশেষ ধরনের চাপকে গ্রহণ করার শক্তি ইত্যাদি বহুতর বিষয়ের উপর টেনশনের পরিমাপ নির্ভর
করে।
টেনশনের সঙ্গে
স্নায়ুতন্ত্রের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ
একটা অংশ হলো ‘অটনমিক নারভাস সিস্টেম’। এর আবার দুটো অংশ। (এক) ‘সিমপ্যাথেটিক’,
(দুই) ‘প্যারাসিমপ্যাথেটিক’।
যখন আপনি কোনও
বিপদের মুখোমুখি অথবা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি, তখন আপনার শরীরের
‘অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি’ ‘অ্যাড্রেনালিন’ হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে সক্রিয় হয়ে
ওঠে ‘সিম্প্যাথেটিক’ স্নায়ুতন্ত্র।
তাই সবচেয়ে ভালো
হলো টেনশন দেখা দিলে ‘রিল্যাকসেশান’ করে টেনশনকে নির্মুল করা। কিন্তু সেই সঙ্গে এও
মনে রাখতে হব- ‘রিলাকসেশান’, টেনশন কন্ট্রোলে রাখার অতি কার্যকর পদ্ধতি হলেও সব
সময় অসাধারণ কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে না।
কারণ, যে
হতদরিদ্র, বেকার, বিনা বিচারে জেলের ভিতর অত্যাচারিত, যে মুসলিম ধর্মের গুজরাটবাসী
মানুষটি চোখের সামনে দেখেছে স্ত্রী ও বোনকে ধর্ষিতা হতে, বাবা ও ভাইওকে জীবন্ত
পুড়ে মরতে সেই সব মানুষ ‘স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’-এর শিকার হতেই পারে। এসব ক্ষেত্রে
‘স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’ ঠিক করতে প্রয়োজন গরিবি হটানো, বেকারদের কর্মসংস্থান, বিনা
বিচারের বন্দিদের মুক্তি, মনোরোগের চিকিৎসা ইত্যাদি। এখানে কোন ‘যোগ’ বা ‘রিল্যাকসেশানে
এই সব সমস্যাক্লিষ্ট মানুষদের টেনশনমুক্ত করা সম্ভব নয়। যদিও এটা ঠিক যে,
রিল্যাকসেশান এদেরও শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রনাকে সহনীয় করে তোলে, কষ্ট কিছুটা
কমায়, স্ট্রেস কমায়।
আমাদের উচিৎ দৈনন্দিন জীবনে প্রতিদিন কিছুটা শরীর
চর্চা করা ও পরিমিত আহার গ্রহন। তবে তার জন্য ধর্মের নামে
মনকে চিন্তাশূন্য,
নির্লিপ্তের বোকামি না করে অলীক আধ্যাতিকতার স্রোতে না ভেসে, প্রচার মাধ্যম শাসনতন্ত্রের রঙিন স্বপ্নে না উড়ে, নিজের বিচার
বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও পৃথিবীর
স্বার্থে আত্মনিয়োগ করা।
______________________________________________
0 comments:
Post a Comment