বিজয় দশমী কী ও কেন ? কিসের বিজয় দশমী?
ঐতিহাসিক সত্যত্যা হচ্ছে, সম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের পর হিংসার রাস্তা ত্যাগ করে বুদ্ধ ধম্ম গ্রহণ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বৌদ্ধ ধম্ম গ্রহণ করার পর অনেক বৌদ্ধ স্থানে ভ্রমণ করেন। বুদ্ধের জীবন চর্চা করা ও সেটা নিজের জীবনে পালন করার কাজ করেন। আর তিনি বহু
শিলালিপি, ধম্ম স্তম্ভ-এর নির্মাণ করিয়ে ছিলেন। সম্রাট অশোকের এই ধার্মিক পরিবর্তনে খুশি হয়ে দেশের জনগণ ঐ সব স্মারক বা স্তম্ভ সাজিয়ে দ্বীপ জ্বালিয়ে দ্বীপ উৎসব পালন করেন। এই আয়োজন খুব খুশি ও আনন্দের সঙ্গে দশ দিন পর্যন্ত চলে। আর দশম দিনে সম্রাট অশোক রাজ পরিবারের সঙ্গে ভন্তে মোজ্ঞিলিপুত্ত নিষ্প এর কাছে ধম্ম দিক্ষা গ্রহণ করেন।
ধম্ম দিক্ষার পর তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, “আজ থেকে আমি শস্ত্র এর পরিবর্তে শান্তি আর অহিংসা দিয়ে প্রতিটি প্রাণীর মন জয় করার ব্রত গ্রহণ করছি।” এই জন্য বৌদ্ধ জগত একে অশোক বিজয় দশমী হিসাবে পালন করেন।
কিন্তু ব্রাহ্মণরা এক কাল্পনিক রাম আর রাবণের যুদ্ধ বিজয়ের কাহিনি প্রচার করে সম্রাট অশোকের এই মহত্ত্বপূর্ণ উৎসবকে কব্জা করে নিয়েছে।
দশহরা-দশেরা বা রাবণ বধ ?
দশহরা- দশেরা বা রাবণ বধ এর সঙ্গে যে তথ্য জুড়ে আছে সেটা হচ্ছে- চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য থেকে শুরু করে শেষ মৌর্য সম্রাট বৃহদ্রথ, মোট দশ জন সম্রাট।
১) চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ২) বিন্দুসার মৌর্য ৩) সম্রাট অশোক ৪) কুনাল মৌর্য ৫) দশরথ মৌর্য ৬) সম্প্রতি মৌর্য ৭ শালীশুক্ত ৮) দেববর্মা মৌর্য ৯) সত্যধন মৌর্য এবং ১০) বৃহদ্রথ মৌর্য ।
এই মৌর্য বংশের শেষ নাবালক সম্রাট বৃহদ্রথ মৌর্য এর সেনাপতি ছিল- ব্রাহ্মণ, পুষ্যমিত্র শুঙ্গ । ১৮৫ খৃষ্ট পুর্বাব্দে প্রকাশ্য রাজ সভায় পুষ্যমিত্র শুঙ্গ রাজা বৃহদ্রথ কে হত্যা করে শুঙ্গ বংশের স্থাপনা করে। যেদিন সম্রাট বৃহদ্রথ কে হত্যা করে পুষ্যমিত্র শুঙ্গ, তখন এই বিজয়া দশমী উৎসব চলছিল। যেটা সম্রাট অশোকের সময় থেকে চালু হয়েছিল। অশোক বিজয় দশমী হিসাবে। তো পুষ্যমিত্র শুঙ্গ বৃহদ্রথ কে হত্যা করে উৎসব পালন করে, আর নাম দেয় বিজয় দশমী। অশোক বিজয় দশমী এর পরিবর্তে শুরু হয় শুধু বিজয় দশমী। এই উৎসবে পুষ্যমিত্র শুঙ্গ মৌর্য বংশের দশ জন সম্রাটের আলাদা আলাদা পুতুল বানিয়ে তাঁদের দশ মাথা এক সঙ্গে দহন করে। আর তখন থেকে নাম দেয় দশ মাথা রাবণ দহন। আসলে দশ মাথা রাবণের প্রতীক হচ্ছে দশ জন মৌর্য সম্রাট এর দহন বা মৌর্য বংশের বিনাশ। এবার আপনার বিচার
করুন দশ মাথা রাবণের প্রতীক কি অশুভের প্রতীক? না কি আপনাদের ভ্রমিত করে নিজেদের ঐতিহ্য
কে মুছে দেওয়া হচ্ছে এবং নিজেদের অজান্তেই নিজেদের পূরব পুরুষদের অপমান করছেন? এই ভাবনার
দায়িত্ব কিন্তু আপনার আমার ও আমাদের সকল মূলনিবাসীদের। বাবা সাহেব কিন্তু এই ইতিহাসকে
তুলে ধরার জন্য এই দিনে ধম্ম দিক্ষা গ্রহণ করেন।
আর বাবা সাহেব আম্বেদকর এই অশোক বিজয় দশমীকে
সম্মান জানানোর জন্য 1956 সালের বিজয় দশমীর দিন ধম্ম দিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। ঐ দিনটা কে ঐতিহাসিক ভাবে পালন করার জন্য বাবা সাহেব ধম্ম দিক্ষা গ্রহণ করেন। আর নাম
দেন “ধম্ম চক্র প্রবর্তন দিন” হিসাবে। “ধম্ম”
অর্থাৎ ভাইচারা যার উদ্দেশ্য সমতা, স্বতন্ত্রতা, বন্ধুতা ও ন্যায়। “ধম্ম চক্র প্রবর্তন” অর্থাৎ এই ধম্মের চাকাকে অর্থাৎ
সমতা, স্বতন্ত্রতা, বন্ধুতা ও ন্যায় এর চাকাকে গতি প্রদান করা। যেটা সম্রাট অশোক চালু
করেছিলেন। আর পুষ্যমিত্র শুঙ্গ সে চাকাকে রুদ্ধ করে দিয়েছিল। এবার আপনার এই ধম্মের
চাকা কে গতিশীল করবেন না কি ধর্মের চাকা কে অর্থাৎ অসমানতা, অবিচার, মানসিক গোলামীর
চাকা কে গতিশীল করবেন ভেবে দেখুন !
_________________________
http://www.januday.com/NewsDetail.aspx?Article=9596