মূলনিবাসী
বহুজনদের চর্চার প্রসঙ্গেঃ-
চর্চা অর্থাৎ আলোচনা ।
এই আলোচনার বিষয় কি হওয়া দরকার ? কাদের সঙ্গে কোন পরিস্থিতে আলোচনা করা উচিৎ নয় ?
মূলনিবাসী বহুজন সমাজের মানুষেরা মহামানবদের
সংগ্রামের ফলে সাংবিধানিক ভাবে কিছুটা সুযোগ পেয়ে নিজেকে সুবিধাবাদী বানিয়েছেন ।
তাঁরা সমাজ থেকে শুধু পেতেই চান । দেবার নামে নৈবঃ নৈবঃ চঃ । কিন্তু যাঁরা সমাজ থেকে উপকার পেয়েছেন এবং তাঁরা সাধ্য মত Pay back to the society করতে চান তাঁদের উদ্দেশ্যে এই লেখা ।
তাঁরা সমাজ থেকে শুধু পেতেই চান । দেবার নামে নৈবঃ নৈবঃ চঃ । কিন্তু যাঁরা সমাজ থেকে উপকার পেয়েছেন এবং তাঁরা সাধ্য মত Pay back to the society করতে চান তাঁদের উদ্দেশ্যে এই লেখা ।
আমাদের আনেকেই যেকোন বিষয় নিয়েই আলোচনা করতে
শুরে করেন বা আলোচনা করতে ভালবাসেন । আর নিজের মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা
করেন । তবে আমার ব্যাক্তিগত মতামত হচ্ছে-যে কোন বিষয়ের উপর চর্চা করার সময় এই
তিনটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখা দরকার । সে গুলো হচ্ছে-
(1) স্থান
(2) কাল
এবং (3) পাত্র । আর
এই তিনটি বিষয়ের সঙ্গে সর্বোপরি দৃষ্টি রাখতে হবে উদ্দেশের প্রতি । অর্থাৎ
উদ্দেশের জন্য আলোচনা হওয়া দরকার ।
এই বিষয়গুলি নিয়ে ধীরে
ধীরে আলোচনা করছি । তবে সেটা নিচে থেকে উপরে করছি আলোচনার সুবিধার্থে ।
ধরুন আপনি কোন সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে আলোচনা করতে
চান । এই সামাজিক অবক্ষয় কে এখানে আমি ব্রাহ্মণ্যবাদকেই ধরলাম । কারণ এটাই আমাদের সমাজের সবথেকে বড় সমস্যা । ব্রাহ্মণ্যবাদ যখন বলছি, তখন এটা তাঁদের দ্বারাই প্রতিস্থাপিত হয়েছে, এটা ধরে নিয়ে সেই আলোচনার
গভীরে প্রবেশের পূর্বে দেখে নেওয়া দরকার
যে, আমি কার সঙ্গে আলোচনার করছি । অর্থাৎ আমার সামনের
লোকটি কে ? তিনি কি আমাদের লোক ? নাকি আমার সমাজকে পদানাত করে রাখার লোক ? তিনি
যদি আমার সমাজের না হন্ তাহলে তাঁকে আপনি আপনার যুক্তি গুলিয়ে খাওয়ালেও তিনি
আপনার কথা শুনতে চাইবেন না । তিনি আপনার প্রসঙ্গ পাল্টে দিয়ে তাঁর লাইনে নিয়ে গিয়ে
আপনার সময় ও বুদ্ধিকে নষ্ট করার কাজে লিপ্ত হবেন । আমাদের এই কথা মাথায় রেখে চর্চা
করা দরকার যে, সেই ব্যাক্তি যেন আমার সমাজেরই হন্ ।
অর্থাৎ, প্রথমেই আপনাকে পাত্র নির্ণয় করেত হবে ।
যিনি আপনার সমাজের ব্যাক্তি নন্ বা হিতৈষী
নন্ । তাঁর সঙ্গে আপনি যতই যুক্তি দেখান বা Document দেখান, তিনি আপনার line-এ কখনও আসবেন না। (এক আধটা ব্যাতিক্রম
অন্য কথা )। উল্টা আপনার Time কে Kill করবে । তাই কোন আলোচনার পূর্বে
আপনি আপনার সামনের ব্যাক্তিটি কে তাঁকে সঠিক নির্ণয় করুন ।
আপনি অনেক কিছুই জানেন্, তাই যেকোন
জায়গায় চর্চায় জুড়ে যান । এটা কিন্তু ভয়ঙ্কর ব্যাপার । কারণ আপনার আলোচনা যতই ক্ষুরধার হোকনা কেন, সেখানে
যদি আপনার স্বপক্ষের লোক না থাকে তাহলে প্রাবাদের 'দশচক্রে
ভগবান ভুত' হয়ে যাবে । আপনার বিপদের স্বম্ভাবনাও বাড়তে
পারে । কারণ আপনি একটা প্রতিষ্ঠিত system এর বিরুদ্ধে সেই
system এর রক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করতে গেছেন । তাই অনেক জায়গায় সঠিক উত্তর দিতে পারলেও
পারিপার্শিকতা দেখে অবস্থা খারাপ বুঝলে
সেখানে মুখ না খোলাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করি । তবে এটা সম্পুর্ণভাবে নির্ভর করবে আপনার নির্ণয়ের উপর । অর্থাৎ
ঐ স্থান আপনার বিষয়ের আলোচনার জন্য উপযুক্ত কিনা এটা আপনাকে নির্ণয় করতে হবে ।
কোন বিষয়ের উপর আলোচনা করতে গিয়ে আপনাকে 'কাল'
বা সময়-এর উপর দৃষ্টি রাখা দরকার ।
কারণ যেকোন সময়েই যদি আপনি আপনার প্রসঙ্গকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন তাহলে কিন্তু
হীতে বিপরীত হতে পারে । কারণ ধরুন কোথাও
তথাকথিত ধর্মীয় আলোচনা হচ্ছে । সেখনে শ্রোতারা
প্রায় সবাই ভক্ত । তাই তার মধ্যে আপনি সেই প্রসঙ্গের বিরোধীতা করে কিছু
বলতে গেলে সেটা বিপদ জনক হওয়ার সম্ভাবনা ঘটতে পারে ।
এবার আসি সেই উদ্দেশ্যের কথায় । উদ্দেশ্য
কি ? আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে- যেহেতু আমরা সামাজিকভাবে সমাজের কাছে ঋণী, তাই আমরা চাই সমাজের ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সমাজকে Pay Back
করতে আমাদের । চাই
সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিশা দিতে । তাই আমাদের যেকোন
আলোচনার উদ্দেশ্য এটা যেন হয় যে, তার পরিনতি সামাজিক মঙ্গল হবে ।
অনেক আলোচনা করলাম, ব্যাক্তিগত credit
নিলাম, অনেকে শুনে বা জেন আমাকে বাহবা
দিল, তাতে তো আমার সুনাম হ'ল ।
কিন্তু আমার সমাজের কি লাভ হ'ল ? ব্যাক্তি প্রচার থেকে দূরে থাকা বা বেশী উৎসাহিত না হয়ে সেটাকে সামাজিক
ভাবনায় Convert করতে পারলে সমাজের মঙ্গল হবে । তাই আমাদেরকে কোন বিষয়ের আলোচনা করার সময়
উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে স্থান-কাল-পাত্র-এর উপর দৃষ্টি রেখে কাজ করা দরকার । তাহলে
বুদ্ধি ও শ্রম দুটোই কাজে লাগবে ।
নীচে
কিছু বিষয় দিলাম যেগুলো আমাদের মেনে চলার চেষ্টা করা উচিত ।
জন সম্পর্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের উপর না করা
দরকার ।
(১) মূলনিবাসীদের খারাপ মানসিকতা যাতে না হয়, সে জন্য এক
জাতির (caste) ভাল, অন্য জাতির
খারাপ বিশ্লেষণ করা ঠিক নয় ।
(২) অযথা কোন কারণে অন্যের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে
পড়া ঠিক নয় ।
(৩) ব্রাহ্মণদের সঙ্গে
আন্দোলনাত্মক চর্চা করে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কখনও ঠিক নয় ।
(৪) সার্বজনিক স্থানে সব সময় আমাদের বিচারধারার
চর্চা করা উচিত নয় ।
চর্চা কোন বিষয়ের উপর কেন্দ্রীভূত হওয়া দরকার ।
(১) সমাজের সমস্যাগুলো
এবং তার কারণ ব্রাহ্মণ এবং ব্রাহ্মণবাদ-এর উপর চর্চা কেন্দ্রীভূত করা দরকার ।
(২) আমাদের মহামানবদের
দ্বারা চালানো আন্দোলন,
তার উপলব্ধি এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার উপর চর্চা হওয়া দরকার ।
(৩) বর্তমানে সমাজের
সমস্যার সমাধান করার ক্ষেত্রে সংঠনের দৃষ্টিভঙ্গির উপর চর্চা হওয়া দরকার ।
(৪) উদ্দেশ্যকে পূর্ণ
করার লক্ষ্যে চর্চা হওয়া দরকার ।
( ৫) মূলনিবাসী বহুজন
সমাজের সংগঠনের প্রতি দোষারোপ করা ঠিক নয়।
(৬) ভবিষ্যৎ কর্মসূচীর চর্চা করা দরকার ।
(৭) আমাদের বিচার এবং
কর্মকে কারো উপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়, বরং উদ্দেশ্য এবং বিচারধারার প্রতি
প্রেরিত করা দরকার ।
(৮) ভাবনাত্মক(sentiment)
বিষয়ের উপর চর্চা করার সময় বিরোধীতার পরিস্থিতির নির্মাণ হওয়ার মত শব্দের ব্যবহার
করা উচিত নয় ।
(৯) চর্চার
কেন্দ্রবিন্দু যেন ব্যাক্তিগত আচরণের প্রতি না হয়, বরং সামাজিক আচরণের প্রতি হওয়া
দরকার ।
(১০) চর্চা করার
পূর্বে সুনিশ্চিত হওয়া দরকার যে, যার সঙ্গে চর্চা করতে চান তিনি কে ? তিনি কি মূলনিবাসী ? শুধুমাত্র মূলনিবাসীদের
সঙ্গে ই চর্চা করা উচিত ।
(১১) সবসময় মনে রাখবেন
যে, ভুল কাজের জন্য মানুষ দায়ী নয় । কেননা, আমাদের
সমাজের লোকেরা কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল এটাই ঠিক করে বুঝতে পারেন না । আর যিনি
বুঝতে পেরে ভুল কাজ করেন, তাঁকে ভুল বলে উল্লেখ করা দরকার
।
-------------------------------
0 comments:
Post a Comment