Wednesday 15 October 2014

// // Leave a Comment

মূলনিবাসী বহুজনদের চর্চার প্রসঙ্গেঃ-

মূলনিবাসী বহুজনদের চর্চার প্রসঙ্গেঃ-
চর্চা অর্থাৎ আলোচনা । এই আলোচনার বিষয় কি হওয়া দরকার ? কাদের সঙ্গে কোন পরিস্থিতে আলোচনা করা উচিৎ নয় ?  
    মূলনিবাসী বহুজন সমাজের মানুষেরা মহামানবদের সংগ্রামের ফলে সাংবিধানিক ভাবে কিছুটা সুযোগ পেয়ে নিজেকে সুবিধাবাদী বানিয়েছেন ।
তাঁরা সমাজ থেকে শুধু পেতেই চান । দেবার নামে নৈবঃ নৈবঃ চঃ । কিন্তু যাঁরা সমাজ থেকে উপকার পেয়েছেন এবং তাঁরা সাধ্য মত Pay back to the society করতে চান তাঁদের উদ্দেশ্যে এই লেখা
    আমাদের আনেকেই যেকোন বিষয় নিয়েই আলোচনা করতে শুরে করেন বা আলোচনা করতে ভালবাসেন । আর নিজের মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেন । তবে আমার ব্যাক্তিগত মতামত হচ্ছে-যে কোন বিষয়ের উপর চর্চা করার সময় এই তিনটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখা দরকার । সে গুলো হচ্ছে-
                             (1) স্থান
                             (2) কাল
                        এবং (3) পাত্র । আর এই তিনটি বিষয়ের সঙ্গে সর্বোপরি দৃষ্টি রাখতে হবে উদ্দেশের প্রতি । অর্থাৎ উদ্দেশের জন্য আলোচনা হওয়া দরকার ।
এই বিষয়গুলি নিয়ে ধীরে ধীরে আলোচনা করছি । তবে সেটা নিচে থেকে উপরে করছি আলোচনার সুবিধার্থে ।
     ধরুন আপনি কোন সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে আলোচনা করতে চান । এই সামাজিক অবক্ষয় কে এখানে আমি ব্রাহ্মণ্যবাদকেই ধরলাম । কারণ এটাই আমাদের  সমাজের সবথেকে বড় সমস্যা । ব্রাহ্মণ্যবাদ  যখন বলছি, তখন এটা তাঁদের দ্বারাই  প্রতিস্থাপিত হয়েছে, এটা ধরে নিয়ে সেই আলোচনার গভীরে প্রবেশের পূর্বে দেখে  নেওয়া দরকার যে, আমি কার সঙ্গে আলোচনার করছি । অর্থাৎ আমার সামনের লোকটি কে ? তিনি কি আমাদের লোক ? নাকি আমার সমাজকে পদানাত করে রাখার লোক ? তিনি যদি আমার সমাজের না হন্‌ তাহলে তাঁকে আপনি আপনার যুক্তি গুলিয়ে খাওয়ালেও তিনি আপনার কথা শুনতে চাইবেন না । তিনি আপনার প্রসঙ্গ পাল্টে দিয়ে তাঁর লাইনে নিয়ে গিয়ে আপনার সময় ও বুদ্ধিকে নষ্ট করার কাজে লিপ্ত হবেন । আমাদের এই কথা মাথায় রেখে চর্চা করা দরকার যে, সেই ব্যাক্তি যেন আমার সমাজেরই হন্‌ । অর্থাৎ, প্রথমেই আপনাকে পাত্র নির্ণয় করেত হবে ।  
    যিনি আপনার সমাজের ব্যাক্তি নন্‌ বা হিতৈষী নন্‌ । তাঁর সঙ্গে আপনি যতই যুক্তি দেখান বা Document দেখান, তিনি আপনার line-এ কখনও আসবেন না (এক আধটা ব্যাতিক্রম অন্য কথা )। উল্টা আপনার Time কে Kill করবে । তাই কোন আলোচনার পূর্বে আপনি আপনার সামনের ব্যাক্তিটি কে তাঁকে সঠিক নির্ণয় করুন ।

    আপনি অনেক কিছুই জানেন্‌, তাই যেকোন জায়গায় চর্চায় জুড়ে যান । এটা কিন্তু ভয়ঙ্কর ব্যাপার । কারণ আপনার আলোচনা যতই  ক্ষুরধার হোকনা কেন, সেখানে যদি আপনার স্বপক্ষের লোক না থাকে তাহলে প্রাবাদের 'দশচক্রে ভগবান ভুত' হয়ে যাবে । আপনার বিপদের স্বম্ভাবনাও বাড়তে পারে । কারণ আপনি একটা প্রতিষ্ঠিত system এর বিরুদ্ধে সেই system এর রক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করতে গেছেন ।  তাই অনেক জায়গায় সঠিক উত্তর দিতে পারলেও পারিপার্শিকতা দেখে অবস্থা খারাপ  বুঝলে সেখানে মুখ না খোলাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করি । তবে এটা  সম্পুর্ণভাবে নির্ভর করবে আপনার নির্ণয়ের উপর । অর্থাৎ ঐ স্থান আপনার বিষয়ের আলোচনার জন্য উপযুক্ত কিনা এটা আপনাকে নির্ণয় করতে হবে ।

    কোন বিষয়ের উপর আলোচনা করতে গিয়ে আপনাকে 'কাল' বা সময়-এর উপর দৃষ্টি রাখা দরকার । কারণ যেকোন সময়েই যদি আপনি আপনার প্রসঙ্গকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন তাহলে কিন্তু হীতে বিপরীত হতে পারে । কারণ  ধরুন কোথাও তথাকথিত ধর্মীয় আলোচনা হচ্ছে ।  সেখনে  শ্রোতারা  প্রায় সবাই ভক্ত । তাই তার মধ্যে আপনি সেই প্রসঙ্গের বিরোধীতা করে কিছু বলতে গেলে সেটা বিপদ জনক হওয়ার সম্ভাবনা ঘটতে পারে ।

     এবার আসি সেই উদ্দেশ্যের কথায় । উদ্দেশ্য কি ? আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে- যেহেতু আমরা সামাজিকভাবে সমাজের কাছে ঋণী, তাই আমরা চাই সমাজের ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সমাজকে Pay Back করতে আমাদের চাই সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিশা দিতে । তাই আমাদের যেকোন আলোচনার উদ্দেশ্য এটা যেন হয় যে, তার পরিনতি সামাজিক মঙ্গল হবে ।
    অনেক আলোচনা করলাম, ব্যাক্তিগত credit নিলাম, অনেকে শুনে বা জেন আমাকে বাহবা দিল, তাতে তো আমার সুনাম হ'ল । কিন্তু আমার সমাজের কি লাভ হ'? ব্যাক্তি প্রচার থেকে দূরে থাকা বা বেশী উৎসাহিত না হয়ে সেটাকে সামাজিক ভাবনায় Convert করতে পারলে সমাজের মঙ্গল  হবে । তাই আমাদেরকে কোন বিষয়ের আলোচনা করার সময় উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে স্থান-কাল-পাত্র-এর উপর দৃষ্টি রেখে কাজ করা দরকার । তাহলে বুদ্ধি ও শ্রম দুটোই কাজে লাগবে ।
নীচে কিছু বিষয় দিলাম যেগুলো আমাদের মেনে চলার চেষ্টা করা উচিত ।
  জন সম্পর্ক কোন্‌ কোন্‌ বিষয়ের উপর না করা দরকার ।
 (১) মূলনিবাসীদের খারাপ মানসিকতা যাতে না হয়, সে জন্য এক জাতির (caste) ভাল, অন্য জাতির খারাপ বিশ্লেষণ করা ঠিক নয় ।
 (২) অযথা কোন কারণে অন্যের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়া ঠিক নয় ।
(৩) ব্রাহ্মণদের সঙ্গে আন্দোলনাত্মক চর্চা করে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কখনও ঠিক নয় ।
 (৪) সার্বজনিক স্থানে সব সময় আমাদের বিচারধারার চর্চা করা উচিত নয় ।
 চর্চা কোন বিষয়ের উপর কেন্দ্রীভূত হওয়া দরকার ।

(১) সমাজের সমস্যাগুলো এবং তার কারণ ব্রাহ্মণ এবং ব্রাহ্মণবাদ-এর উপর চর্চা কেন্দ্রীভূত করা দরকার ।
(২) আমাদের মহামানবদের দ্বারা চালানো আন্দোলন, তার উপলব্ধি এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার উপর চর্চা হওয়া  দরকার ।
(৩) বর্তমানে সমাজের সমস্যার সমাধান করার ক্ষেত্রে সংঠনের দৃষ্টিভঙ্গির উপর চর্চা হওয়া দরকার 
(৪) উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করার লক্ষ্যে চর্চা হওয়া দরকার ।
( ৫) মূলনিবাসী বহুজন সমাজের সংগঠনের প্রতি দোষারোপ করা ঠিক নয়।
 (৬) ভবিষ্যৎ কর্মসূচীর চর্চা করা দরকার ।
(৭) আমাদের বিচার এবং কর্মকে কারো উপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়, বরং উদ্দেশ্য এবং বিচারধারার প্রতি প্রেরিত করা দরকার ।
(৮) ভাবনাত্মক(sentiment) বিষয়ের উপর চর্চা করার সময় বিরোধীতার পরিস্থিতির নির্মাণ হওয়ার মত শব্দের ব্যবহার করা উচিত নয় ।
(৯) চর্চার কেন্দ্রবিন্দু যেন ব্যাক্তিগত আচরণের প্রতি না হয়, বরং সামাজিক আচরণের প্রতি হওয়া দরকার ।
(১০) চর্চা করার পূর্বে সুনিশ্চিত হওয়া দরকার যে, যার সঙ্গে চর্চা করতে চান তিনি কে ? তিনি কি মূলনিবাসী ? শুধুমাত্র মূলনিবাসীদের সঙ্গে ই চর্চা করা উচিত ।
(১১) সবসময় মনে রাখবেন যে, ভুল কাজের জন্য মানুষ দায়ী নয় । কেননা, আমাদের সমাজের লোকেরা কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল এটাই ঠিক করে বুঝতে পারেন না । আর যিনি বুঝতে পেরে ভুল কাজ করেন, তাঁকে ভুল বলে উল্লেখ করা দরকার ।
                   -------------------------------






                           


0 comments:

Post a Comment