Tuesday 19 April 2016

// // Leave a Comment

ভগবদ্‌গীতা সম্পর্কে প্রবন্ধঃ প্রতিবিপ্লবের দার্শনিক ব্যাখ্যা- ডঃ আম্বেদকর।


ভগবদ্‌গীতা সম্পর্কে প্রবন্ধঃ প্রতিবিপ্লবের দার্শনিক ব্যাখ্যা- ডঃ আম্বেদকর।
(আম্বদেকর রচনাবলী ৬ষ্ঠ খন্ড)
কৃষ্ণ এবং তার গীতা
ভগবদ্‌গীতা একটি ‘সুচসমাচার’ নয় এবং এর কোন বাণী থাকতে পারে না এবং কারো পক্ষে এর শরণাপন্ন হওয়া সম্পূর্ণ অর্থহীন। অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে যে যদি ভগদ্‌গীতা ‘সুসমাচার’ না হয় তবে তা কি? উত্তরে আমি বলব, তা ধর্মীয় গ্রন্থ বা দার্শনিক মতবাদ –এর কোনটিই নয়। ভগবদ্‌গীতা দর্শনের ভিত্তিতে কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় নিয়ম বিধিকে সুরক্ষা করে। সেই হিসাবে যদি কেহ একে ধর্মগ্রন্থ বা দর্শনশাস্ত্র বলেন তবে তিনি নিজে খুশি থাকতে পারেন কিন্তু মূলতঃ এটি তার কিছুই নয়। ধর্মকে রক্ষা করার জন্য তা দর্শনের বুলি আওড়ায়। (পৃষ্ঠা নং ৯)

    ভগবদ্‌গীতা একটি দার্শনিক বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে-সেটা হচ্ছে- কর্মযোগ। এর দ্বারা ধর্ম কর্মের অনুষ্ঠান করা বুঝায়, যেমন যজ্ঞকে বলা হয় মুক্তির পথ। গীতা সমস্ত যোগ বা মার্গের মধ্যে বারবার কর্মযোগেকে উচ্চস্থান দিয়ে থাকে। যে পদ্ধতিতে তা কর্মযোগকে রক্ষা করে তা হলো, যা এর উপর অন্ধবিশ্বাসাদি কুৎসিত আঁচিলের মত গজিয়ে উঠেছে তা দূরীভূত করা। অন্ধবিশ্বাস হলো আঁচিলরূপ অস্বাভাবিক মাংসপিন্ড। (পৃষ্ঠা নং ১০)
    প্রতিবিপ্লবের মতবাদ্গুলি রক্ষার প্রয়োজনীয়তা গীতা কেন অনুভব করেছে? আমার নিকট উত্তরটি খুব প্রাঞ্জল। বৌদ্ধ ধর্মের আক্রমণ হ’তে ঐগুলিকে রক্ষা করার জন্যই  গীতার অভ্যুত্থান ঘটে। বুদ্ধ অহিংসার পুজারী শুধু তাই নয়। ব্রাহ্মণ ভিন্ন অন্য বহু সংখ্যক লোক জীবনের পথ বলে এই মত গ্রহণ করেছিলেন এবং হিংসার প্রতি ঘৃণায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। বুদ্ধ চতুর্বর্ণের বিরুদ্ধে লোককে প্রবুদ্ধ এবং চতুর্বর্ণ মতবাদের বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক কতকগুলি অপ্রীতিকর উপমা ব্যবহার করেছিলেন। তাতে চতুর্বর্ণের কাঠামো ভেঙে যায় এবং চতুর্বর্ণ নির্দেশিত বিধানগুলির ওলট পালট হয়ে যায়। শূদ্র এবং রমণীগণ সন্ন্যাসী হওয়ার অধিকার লাভ করে যা প্রতিবিপ্লবের দ্বারা অস্বীকার করা হয়। বুদ্ধ কর্মকান্ড এবং যজ্ঞকে হিংসাত্মক বলে তিব্রভাবে নিন্দা করেছেন। তিনি একে আরও একটি কারণে নিন্দা করেছেন যে, এর পিছনে ফায়দা লোটার একটি স্বার্থপর ইচ্ছা বলবত আছে।
    এই আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতি বিপ্লবকারীদের কি বলার আছে? বলতে পারেন এগুলি বেদের নির্দেশ, বেদ অভ্রান্ত অতএব তার মতবাদ প্রশ্নাতীত। যে যুগ সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল এবং সভ্য যুগ, সেই বৌদ্ধযুগে ভারত এরূপ তুচ্ছ স্বেচ্ছাচারী অযৌক্তিক এবং ভঙ্গুর মতবাদের উপর ভিত্তি করে কিরূপে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে? (পৃষ্ঠা নং ১২)
গীতা কি বৌদ্ধধম্মের পূর্বে কার?
   (ক) ভগবদ্‌গীতা ব্রহ্ম-নির্বান বিষয়ে আলোচনা করেছে (ম্যাক্সমূলার মহাপরি-নির্বান সুত্ত, পৃঃ  ৬৩) অর্থাৎ ব্রহ্মলাভ করার পথ। ভগবদ্‌গীতা বলেছে নির্বান লাভ করার উপায়-(১) শ্রদ্ধা অর্থাৎ আত্মবিশ্বাস, (২) ব্যবসায় অর্থাৎ স্থিরপ্রতিজ্ঞ, (৩) স্মৃতি অর্থাৎ অদ্ভীষ্টস্মরণ, (৪) সমাধি অর্থাৎ একান্তধ্যান, এবং (৫) প্রজ্ঞা অর্থাৎ অধ্যাত্মিক বা খাঁটি জ্ঞান। এই “নির্বাণ” মতবাদ গীতা কোথা  থেকে ধার করেছে? নিশ্চয়ই তা উপনিষদ থেকে ধার করা হয় নাই। কারণ উপনিষদে কোথাও নির্বান শব্দটির উল্লেখ করে নাই। সমস্ত ধারণাটি বৌদ্ধদের এবং বৌদ্ধধম্ম হতে  তা ধারপ্রাপ্ত। এ বিষয়ে যদি কারো কোন সন্দেহ থাকে তবে ভগবদ্‌গীতার এই ব্রহ্মনির্বানের সঙ্গে ‘মহাপরিনিব্বান সুত্তে’ সংকলিত নির্বাণ সম্পর্কে বৌদ্ধদের ধারণার সহিত তুলনা করতে পারেন। দেখা যাবে যে সেগুলি একই। ঘটনা এই নয় কি যে গীতা নির্বাণের পরিবর্তে-ব্রহ্ম-নির্বাণদের সম্পূর্ণ ধারণাটি ধার করেছে? এটা বৌদ্ধ ধম্ম থেকে চুরি করার অপবাদ মোচন ভিন্ন অন্য কোন কারণে নয়।
   (খ) অন্য একটি দৃষ্টান্ত গ্রহণ করা যাক। ৭ম অধ্যায়ের ১৩-২০ শ্লোকে কৃষ্ণের নিকট ‘প্রিয়’
 কে এই সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে- যার জ্ঞান আছে, বা যে কর্ম অনুশীলন করে, বা যে ভক্ত, এই তিনের মধ্যে কে কৃষ্ণের প্রিয়। কৃষ্ণ বলেছে- ভক্তই তার নিকট প্রিয়- কিন্তু আরও কিছু যুক্ত করেছেন যে তার অবশ্যই ভক্তের চিহ্ন থাকতে হবে। খাঁটি ভক্তের চিহ্ন কি? কৃষ্ণের মতে একজন খাঁটি ভক্ত অনুশীলন করে- (১) মৈত্রী অর্থাৎ দয়ায় অনুরাগ; (২) করুণা অর্থাৎ সহানুভূতি’ (৩) মুদিতা অর্থাৎ সহানুভূতির আনন্দ; এবং (৪) উপেক্ষা অর্থাৎ নির্লিপ্ত। খাঁটি ভক্তের এই গূণাবলী ভগবদ্‌গীতা কোথা থেকে ধার করেছে? বৌদ্ধ ধম্মেই এর মূল। যারা এর প্রমাণ পেতে চান তারা মহাপদন সুত্ত’ এবং তেবিজ্জ সুত্ত –এর তুলনা করতে পারেন। সেখানে বুদ্ধ কেন কারো পক্ষে হৃদয়ের অনুশীলনের জন্য ভাবনার (মানসিক ভাব) লালন পালন প্রয়োজন তা শিক্ষা দিয়েছেন। এই তুলনা দেখাবে যে সমগ্র মতবাদটি বৌদ্ধ মতবাদ থেকে সংগৃহীত, এমন কি শব্দগুলিও।
    (গ) তৃতীয় অপর একটি দৃষ্টান্ত পরখ করা যাক। ১৮শ অধ্যায়ে ভগবদ্‌গীতা ক্ষেত্র এবং ক্ষেত্রজ্ঞ সম্পর্কে আলোচনা করেছে। ৭-১১শ শ্লোকে নিম্নে উল্লিখিত ভাষায় কৃষ্ণ উল্লেখ করেছেন জ্ঞান এবং অজ্ঞানতা কিঃ-   অহংকারশূন্যতা (বিনয়), ভান-বিরহিতা, আঘাত বা ক্ষতি না করার ভাব, ক্ষমা, সোজা পথে চলা (সততা), গুরুর প্রতি ভক্তি, পবিত্রতা, একনিষ্ঠতা, আআত্মসংযত, ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য বিষয়ের প্রতি অনাসক্তি, আত্মশ্লাঘাহীনতা, দুর্ভোগ এবং হীনজন্ম সম্পর্কিত চিন্তা, মৃত্যু, জরা এবং ব্যাধি, অনাসক্তি, পুত্র, স্ত্রী বা গৃহ সম্পর্কে নিজেকে সনাক্ত না করা, গ্রাহ্য-অগ্রাহ্য উভয়ের উপস্থিতিতে সম মনোভাবাপন্ন থাকা, আমার প্রতি স্থিরবিশ্বাস এবং ধ্যান, শান্তিপূর্ণ আমোদ অবলম্বন (নির্জনে একাগ্রতা, ধ্যান), পার্থিব মানব সমাজের প্রতি অণীহা, আত্মজ্ঞানের অবিরাম প্রয়োগ, তত্ত্বজ্ঞানের সঠিক তাৎপর্য গ্রহণ এবং অনুভব করণ (সাংখ্য দর্শন)- এই সকলকে বলা হয় জ্ঞান এবং ইহার বিপরীতগুলিই অজ্ঞান।”
    বুদ্ধের বাণী সম্পর্কে যারা কিছুমাত্র অবগত তারা কি কেহ অস্বীকার করতে পারেন যে বৌদ্ধধম্মের মূল মতবাদ থেকে এই অংশতির প্রতিটি শব্দ গ্রহণ করা হয় নাই?
     (ঘ) ১৩শ অধ্যায়ের ৫, ৬, ১৮, ১৯ শ্লোকে গীতা অনেক শিরোনামে কর্মের রূপক ব্যাখ্যা দিয়েছে- (১) জ্ঞান (ত্যাগ), (২) দান, (৩) তপ (৪) খ্যাদ্য, এবং (৫) স্বধ্যায় (বৈদিক পাঠ)। পুরাতন ধারণা এই নূতন ব্যাখ্যার মূল কি? বুদ্ধ ‘মজ্জহিনা নিকায়’ ১/২৮৬ সুত্ত, ১৬শ-এ যা বলেছেন তার সঙ্গে তুলনা করলে কেহ কি সন্দেহ করতে পারেন যে কৃষ্ণ ১৭ অধ্যায়ের ৫, ৬, ১৮, ১৯ শ্লোকে যা বলেছেন তা বুদ্ধের শব্দের অবিকল প্রতিফলন নয়?
     এগুলি মাত্র কয়েকটি দৃষ্টান্ত আমি নির্বাচন করেছি যা মতবাদ সম্পর্কে অধিক প্রয়োজনীয়। যারা এ বিষয়কে অনুসরণ করতে কৌতূহলী –তারা তেলাং প্রদত্ত ভগবদ্‌গীতার সংস্করণের পাদটীকায় গীতা এবং বৌদ্ধ ধম্মের সাদৃশ্যের উল্লেখ দেখতে সমর্থ হবে যে কি বহুল পরিমানে ভগবদগীতা বৌদ্ধ মতবাদের মধ্যে অনুপ্রবেশ এবং কি পরিমানে বৌদ্ধধম্ম হতে তার মতবাদ ধার করেছে। সংক্ষেপে বলা যায় ভগবদ্‌গীতা সুচিন্তিতভাবে বৌদ্ধ সুত্তের আদর্শের গঠিত হয়েছে বলে মনে হয়। বৌদ্ধ সুত্তগুলি হল, সংলাপ, ভগবদ্‌গীতাও তাই। বুদ্ধের ধম্ম নারী এবং শূদ্রের মুক্তি আনে। কৃষ্ণও নারী এবং শূদ্রের মুক্তি দানের জন্য এগিয়ে আসেন, বৌদ্ধগণ বলেন-‘আমি আমাকে বুদ্ধে, ধম্মে এবং সংঘে সমর্পণ করি।’ কৃষ্ণও বলেন-‘সকল ধর্ম’ পরিত্যাগ করে আমার শরণাপন্ন হও’ এর চেয়ে কাছাকাছি আর কি তুলনা থাকতে পারে যা বৌদ্ধধম্ম এবং ভগবদ্‌গীতার মধ্যে আছে। (পৃঃ ১৮ থেকে ২০)
------------------------------------------------------
   


Read More

Tuesday 12 April 2016

// // Leave a Comment

বিচার ধারার প্রয়োগ

বিচার ধারার প্রয়োগ
বাবাসাহেব বলেছেন, - “যিনি তাঁর দুঃখ থেকে মুক্তি চান, তাঁকে  লড়তে হবে। আর যিনি লড়াই করতে চান তাঁকে পড়তে হবে। কারণ জ্ঞান বিনা লড়াই করতে গেলে পরাজয় নিশ্চিত।”  শিক্ষা দু’প্রকার। এক প্রকার হচ্ছে- যিনি স্কুল কলেজের শিক্ষা গ্রহণ করেন। অর্থাৎ Academic Education. আর দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে- নিজের সঠিক ইতিহাস জানার শিক্ষা অর্থাৎ Social Education.  বাবাসাহবে বলেছেন,-“যে তার ইতিহাস জানেনা, সে তার ভবিষ্যতের পরিবর্তন করতে পারেনা।” নিজের সঠিক ইতিহাস না জানার জন্য ভারতের মূলনিবাসীরা নিজেদেরকে শূদ্র(নীচ্‌) মনে করে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের শোষণ স্বীকার করে নিয়েছে। এর জন্য যখনই এরা কোন  লড়াই করে, তখনই হেরে যায়। আমাদের চার পাশের কম লেখাপড়া লোকেরা শ্রমিক মানসিকতার লোক। যারা নিজেদের শূদ্র মনে করে। তাদের যতই বোঝানো হোক না কেন বুঝতে চায় না।   আর যারা  স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমের মধ্যে নিজের শিক্ষাকে সীমিত করে রেখেছে, তারা জেনে না জেনে  ব্রাহ্মণ্যবাদের কাঠের পুতুল হয়ে রয়েছে  চাকরীর ক্ষেত্রে, বিবাহ, শ্রাদ্ধ (শ্রদ্ধা) ও রাজনীতি বা যে কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা ক্রিয়া-কর্মের ক্ষেত্রে। এই জন্য বাবাসাহেব বলেছেন,-“আমার মতে প্রকৃত শিক্ষিত তিনি, যিনি শত্রুকে চেনেন।”  আপনাদের শত্রু প্রতিবারই রূপ আর নাম পরিবর্তন করে আপনাদের নাচিয়ে চলেছে। আর আপনারা প্রত্যেকবার ধোকা খাচ্ছেন; কখনও দেবতার নামে, তো কখনও ধর্মের নামে। আবার কখনও আইনের নামে তো কখনও পাপ পূণ্যের নামে; আবার কখনও দেশভক্তির নামে।
    আপনি যতক্ষণ নিজে এই সব কিছুর মূল তত্ত্বকে বুঝতে না পারছেন ততক্ষণ কেউই  আপনাকে বোঝাতে পারবেন না। আর আপনি ব্যক্তিগত দিক থেকে মানষিক গোলামী থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন হ’তে পারবেন না। যার জন্য গৌতমবুদ্ধ বলেছেন,-“আত্মদীপ ভব।” অর্থাৎ আপনার অন্তরাত্মাকে আপনি নিজেই প্রজ্বলিত করুন। নিজে জানো, বিচার করো এবং অগ্রসর হও। ডাঃ আম্বেদকর, গৌতমবুদ্ধ বা অন্য কোন মনীষীর ফটো থেকে কিছুই পাওয়া যাবেনা। আপনি সারা দিন রাত ফটোর সামনে বসে যতই কামনা করুন কিছুই পাওয়া যাবেনা। যদি কিছু পেতে চান, তাহলে ঐ মহামানবদের জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজের জীবনে তার প্রয়োগ করুন। এই শিক্ষার ফল ব্রাহ্মণ্যবাদীরা বুঝতে পেরেছ বলে তারা ভয়ে মুষড়ে থাকে। এই জন্য যে, যেকোন প্রকারে যেন এই মহামানবদের বিচার ধারা আদর্শ সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে প্রবেশ না করে।
   আপনাদের প্রগতি করতে হ’লে এই মহামানবেদের বিচারধারাকে নিজের জীবন ও কর্মে প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আর ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রতি তিব্র ঘৃণা করতে হবে। তাহলে আপনাদের প্রগতি ও কল্যান হবে।
নতুন বিচারধারাই আপনাকে মঞ্জিল পর্যন্ত পৌঁছে দেবে।  

____________________________ 
Read More
// // Leave a Comment

বাবা সাহেব ডঃ আম্বেদকরের ধর্ম(ধম্ম) ভাবনা

বাবা সাহেব ডঃ আম্বেদকরের ধর্ম(ধম্ম) ভাবনা
জগদীশচন্দ্র রায়(মুম্বাই) email ID- roy.1472@gmail.com  
    বর্তমানে অনেকে কথায় কথায় বলেন যে, “আমি কোন ধর্ম মানিনা।” কিন্তু তাঁদের ভাবনাটা  অনেক কল্যাকারী। আসলে তাঁদের ভাবনাটা হচ্ছে ‘ধম্ম’ ভাবনা। কারণ ‘ধর্ম’ এবং ‘ধম্ম’ অর্থ কিন্তু এক নয়, এদুটো সম্পূর্ণ বিপরীত মুখী। যদিও আমরা সাধারণভাবে এর পার্থক্য করিনা। তবে আমরা ‘ধর্ম’ বললেও, এ বিষয়ে বাবা সাহেবের যে ভাবনা, সেটা ‘ধম্ম’ ভাবনা। যার জন্য তিনি লিখেছিলেন “বুদ্ধ এবং তার ধম্ম-BUDDHA AND HIS DHAMMA”. ধর্মের মধ্যে অলিক, অবাস্তব, ঈশ্বরের কল্পনা ও বিভিন্ন কাহিনি আছে। ‘ধম্ম’-এ কিন্তু এসবের কোন স্থান নেই। ধম্ম হ’ল  ন্যায়পরায়নাতা, যা অর্থ হ’ল মানুষের মধ্যে সঠিক সম্পর্ক বা ভাইচারা। যেটা জীবনের সব ক্ষেত্রেই প্রয়োগযোগ্য। যে একা একা থাকে তার ধম্মের দরকার নেই। কিন্তু যখন দু’জন মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদেরকে ধম্মের মধ্যেই থাকতেই হবে; তারা এটা পছন্দ করুন বা না করুন। কারণ ধম্ম বাদ দিয়ে সমাজ চলতে পারেনা।
এই ধম্ম সম্পর্কে বাবা সাহেব বলেছেন, “For the progress of mankind Religion – or to be more precise Dhamma, is absolutely necessary.” অর্থাৎ মানব জাতির প্রগতি সাধনে ধর্মের(ধম্ম) প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো। এই ধর্ম কি মামুলি ধর্ম? না আদৌ তা নয়। ধর্মকে তিনি কখনোই মামুলি অর্থে স্বর্গ বা ঈশ্বর লাভের উপায় স্বরূপ মনে করেন নি।   উপরের মন্তব্য থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, তাঁর কাছে ধর্ম ছিল অত্যন্ত বাস্তব এবং  জীবনভিত্তিক এক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন বিশেষ। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান- ইত্যাদি এইসব প্রচলিত যে কোন পদবাচ্যি হোক না কেন তাঁর মতে ধর্মকে অবশ্যই মানুষের জাগতিক সমৃদ্ধি ও তার মানসিক উন্নয়নের জন্য হতে হবে। এখানে প্রচলতি অর্থে স্বর্গ-নরকের কোন স্থান নেই। এমন কি ঈশ্বর এখানে সম্পূর্ণ অনুক্ত। ঈশ্বরের জায়গায় তিনি স্থাপন করেছেন নৈতিকতাকে।
   ধর্ম চিন্তায় বাবা সাহেবের একটি বড় রকমের অবদান এই যে, তিনি নিছক ভাবালুতার জগত   থেকে ধর্মকে টেনে এনে তাকে বাস্তব জগতের জ্ঞানালোকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। যে ধর্মে নৈতিকতার শাসন নেই, যে ধর্মে আইনের অনুমোদন অনুপস্থিত, যার মধ্যে বিজ্ঞানচেতনা, গণতান্ত্রিক মানসিকতা ও জাগতিক সমৃদ্ধির স্বীকৃতি অনাদৃত এবং যেখানে সৌভ্রাতৃত্ব নিষিদ্ধ সেই ধর্মকে তিনি কখনো মর্যাদার চোখে দেখেননি। তিনি Buddha and the future of his Religion নামক গ্রন্থে লিখেছেন-
1) The society must have either the sanction of law or the sanction of morality to hold it together.
 2) Religion if it is to function, must be in accord with reason which is another name science.
3) It is not enough for religion to consist of a moral code, but its moral code must recognize the fundamental tenets of liberty, equality and fraternity.
4) Religion must not sanctify or ennoble poverty.”
(.) সমাজকে সংহত রাখতে হলে তার পেছেনে আইন অথবা নৈতিকতার অনুমোদন অবশ্যই থাকা দরকার।
 (২) ধর্মকে যদি প্রভাবশীল হতেই হয় তাহলে তাকে অবশ্যই নির্ভর করতে হবে যুক্তির উপর যার অপর নাম বিজ্ঞান।
(৩) ধর্মের ভেতর নৈতিক আচরণ-বিধি থাকাটাই যথেষ্ট নয়, সেই নৈতিক আচরণ-বিধিকে অবশ্যই স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের মৌলিক নীতিগুলো স্বীকার করে নিতে হবে।
(৪) ধর্ম অবশ্যই দারিদ্র্যকে কোনরূপ পবিত্রতা বা মহত্ত্ব দান করবে না।
বাবা সাহেব আম্বেদকরের ধারণায় যে ধর্ম যুক্তি বা বিজ্ঞানসম্মত নয় সে ধর্ম কখনো কঠিন বাস্তবের আঘাত সইতে পারে না। মিথ্যা ভাবাবেগ, কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাস মানব সমাজকে অগ্রগতির পথে চালনা করতে অক্ষম। যারা শোষক তারাই এগুলিকে শোষণের হাতিয়াররূপে ব্যবহার করে থাকে। ভারতবর্ষে হিন্দুধর্মের আওতায় এইভাবেই তো গড়ে উঠেছে ব্রাহ্মণ্যবাদ। যার অপর নাম শোষণ। মধ্যযুগের খৃষ্টধর্মে পুরোহিততন্ত্র এবং ইসলামধর্মে মৌলবাদ ঐ একই শোষণের  নামান্তর। যার জন্য তিনি স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব এই মৌলিক নীতিগুলিকে ধর্ম অবশ্যই স্বীকার করে নেবে, এর উপর জোর দিয়েছেন। কারণ এগুলির সঙ্গে ধর্মের যদি কোন বিরোধ ঘটে তাহলে সেই ধর্মের আশ্রয়ে মানুষ কখনো পূর্ণমর্যাদা নিয়ে শান্তিতে বাস করতে পারে না।    
    বাবা সাহেব ধর্মের ব্যপারে নিয়ম ও নীতির উপর জোর দিয়ে তার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রথমেই  অধ্যাপক কার্ভারের বক্তব্যকে তুলে ধরে বলেছেন- “ নীতি এবং ধর্ম জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার পক্ষে সবথেকে শক্তিশালী হাতিয়ার।”     নিয়ম ব্যবহারিক হয়। এর নির্ধারিত মাপদন্ড অনুসারে কাজ করার প্রথাগত রাস্তা আছে। কিন্তু নীতি হচ্ছে বৌদ্ধিক (Intellectual). নীতি হচ্ছে কোন কিছুকে বিচার করার উপযুক্ত সাধন (Methods of judging things.) এটা কোন বিষয়ের ভাল মন্দ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণভাবে চিন্তা করতে নির্দেশ দেয়। নীতি বাস্তবে কোন ধরা-বাঁধা পথে চলতে নির্দেশ দেয় না। কিন্তু নিয়ম রান্নাকরার পদ্ধতির নির্দেশের মত সরাসরি আমাদের বলে দেয় যে, কি করতে হবে এবং কিভাবে করতে হবে। নিয়ম এবং নীতির মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে।
    ভাল কাজ করা বলতে নিয়ম  যা বোঝায়, এবং ভাল কাজ করা বলতে নীতি যা বোঝায়; তার মধ্যে প্রচুর পার্থক্য আছে। নীতি যখন কোন কিছুকে ভাল কাজ বলে, তখন সে বিচার বিশ্লেষণপূর্বক তার পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েই সেকথা বলে। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে যান্ত্রিক পদ্ধতি। নীতি ভুলও হতে পারে। কিন্তু নীতির আধারে করা কাজ দায়িত্বপূর্ণ হওয়া দরকার। এই দায়িত্বের জন্য ধর্ম হচ্ছে একটা নীতিগত ব্যপার। ধর্ম কখনও শুধুমাত্র নিয়ম সর্বস্ব হ’তে পারেনা। ধর্ম যদি শুধুমাত্র নিয়মে পর্যবসতি হয়, তখন তাকে আর ধর্ম বলা যায়না। কারণ ধর্মের মৌলিক উপাদান দায়িত্বজ্ঞানকে বাদ দিলে তাকে ধর্ম নামে অভিহিত করা যায় না।
    তিনি হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে বলেছেন- হিন্দু ধর্ম কি? এটা কি কিছু নিয়মের বোঝা, নাকি কিছু নীতির সমষ্টি? বেদ আর স্মৃতিশাস্ত্রগুলির বর্ননা অনুসারে হিন্দুধর্ম কিছুই নয়। এটা শুধু সামাজিক, রাজনৈতিক ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত কিছু নিয়ম ও নির্দেশের সমষ্টি। হিন্দুরা যাকে ধর্ম বলে সেটা কিছু আদেশ বা নির্দেশ এবং নিষেধাজ্ঞার সমষ্টি। ধর্মের যে আধ্যাত্মিক নীতি সমূহ; যেগুলি বিশ্বের সব মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হবে, সে সব হিন্দুধর্মে নেই বললেই চলে। যেটুকু আছে হিন্দুদের জীবন যাত্রায় তার তেমন একটা ব্যবহার দেখা যায় না। বেদ এবং স্মৃতিশাস্ত্রগুলির নির্দেশ এবং তার ব্যাখ্যা থেকে জানা যায় যে, একজন হিন্দুর পক্ষে ‘ধর্ম’-এর অর্থ হল কতকগুলি নির্দেশ ও বিধি নিষেধ মাত্র। বেদে ‘ধর্ম’ শব্দটির দ্বারা কিছু সংখ্যক ধর্মীয় আচরণের আদেশ বোঝান হয়েছে। এমন কি  জৈমিনীর ‘পূর্বমীমাংসা’-র ব্যাখ্যা অনুসারে ‘ধর্ম’ হ’ল একটি আকাঙ্খিত লক্ষ্য না ফলযেটা বেদের পরিচ্ছেদে লেখা আছে সরল ভাষায় হিন্দুরা যাকে ধর্ম বলে, তাহল প্রকৃতপক্ষে কিছু আইন বা বেশীর বেশী আইনানুগ নিয়ম। পরিস্কারভাবে বলতে হলে আমি এই আচার-আচরণের নির্দেশ নামাগুলিকে ‘ধর্ম’ বলে স্বীকার করতে পারিনা। এই নির্দেশনামার প্রধান কুফল হ’ল, তা ধর্ম  সম্পর্কে মানুষের মনে ভুল ধারণার সৃষ্টি করেছে। মানুষের মুক্ত মনের স্বতঃস্ফুর্ত নীতিজ্ঞানকে নষ্ট করেছে। ধর্মভীরু লোকদের কম বেশী উদ্বিগ্ন করে তুলেছে ও তাদের উপর আরোপিত নিয়ম ও আচারের প্রতি দাস সুলভ মনোভাবের সৃষ্টি করেছে।
এর পরে তিনি দ্বিধাহীন কন্ঠে ঘোষণা করেছেন যে,-“আমি এটা বলতে কোন দ্বিধা বোধ করিনা  যে, এই রকম ধর্ম নষ্ট করা দরকার। আর এই রকম ধর্মকে নষ্ট করার ক্ষেত্রে কোন অধর্ম হবেনা ( no hesitation in saying that such religion must be destroyed and I say, there is nothing irreligious in working for the destruction of such a religion)বাস্তবিকই, আমি বলি যে, ধর্মের নামে এই ধরেনের অমানবিক আইনগুলির মুখোস খুলে দেওয়া আপনাদের অন্যতম পবিত্র কর্তব্য হওয়া উচিত। আপনাদের জন্য এটাই অপরিহার্য পদক্ষেপ হওয়া উচিত। একবার আপনারা যদি মানুষের মন থেকে এই ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে পারেন যে, হিন্দুধর্মের নামে জনগণকে যেটা বলা বা শেখানো হচ্ছে সেটা ধর্ম নয়, সেটা হচ্ছে কতকগুলি আইন বা নিয়ম।”
তিনি এবার ধর্মের (ধম্ম) প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বললেন,-“আমি নিয়মসর্বস্ব ধর্মকে সমালোচনা  করছি বলে এটা যেন কেউ মনে না করেন যে, আমি ধর্মের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করছি। অপর পক্ষে আমি বার্কের (Burke) এই কথার সংগে একমত যে, “প্রকৃত ধর্ম হচ্ছে সমাজ জীবনের ভিত্তি এবং এই ভিত্তির উপরই গড়ে ওঠে দেশের ন্যায়পরয়ান সরকার। (True religion is the foundation of society, the basic on which all true civil Government rests, and both their sanction) সুতরাং যখন আমি দাবি করি যে, হিন্দু সমাজের প্রাচীন নিয়মগুলি বিলোপ করা দরকার, তখনই আমি মনে করি সঙ্গে সঙ্গে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে এমন একটি ধর্মের প্রয়োজন, যেটা প্রতিষ্ঠিত হবে নীতির উপর ভিত্তি করে। ধর্মের প্রয়োজনীয়তা আমি একান্তভাবে অনুভব করি।
আর এর জন্য তিন জানিয়েছেন যে,- ধর্মের মধ্যে নতুন জীবনের সঞ্চার করতে হলে পুরাতন শাস্ত্রীয় ধর্ম ও শাস্ত্রের কর্তৃত্বের অবসান আগে ঘটাতে হবে।
     হিন্দু ও হিন্দুধর্ম সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বাবা সাহেব আম্বেদকর বলেছেন-“What is called Religion by the Hindus is nothing but a multitude of commands and prohibitions. Religion in the sense of spiritual principles, truly universal, applicable to all races, to all countries, to all times, is not to be found in theme.” অর্থাৎ হিন্দুরা যাকে ধর্মে বলে, তা এক গাদা আজ্ঞা ও নিষেধাজ্ঞা ভিন্ন আর কিছুই নয়। অধাত্মিক নীতি অর্থে ধর্ম, যা প্রকৃতই বিশ্বজনীন-সকল জাতি, সকল দেশ ও সকল যুগে প্রযোজ্য, সে কিন্তু এগুলোর মধ্যে নেই। স্বাধীন, শক্তিশালী, সুন্দর ধর্মের প্রয়োজন। কিন্তু হিন্দুধর্ম সেরূপ কোন ধর্ম নয়। বাবা সাহেবের নির্দেশিত ধর্মের উপাদানের বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, শিক্ষা, ধর্ম ও সংস্কৃতি এক কথায় মনুষ্য সমাজের সবগুলি দিক এর মধ্যে ধরা পড়েছে।
     তিনি বলেছেন,- “মানুষের জীবনে আশা কর্মশক্তির উৎস। আর এই আশাকেই সৃষ্টি করে ধর্মসুতরাং ধর্মের মধ্যে মানুষ খুঁজে পায় সান্ত্বনা।  - Hope is the spring of action in life. Religion affords this hope. Therefore, mankind finds solace in the religion.
বাবা সাহেব যেমন ধর্মের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তেমনি মহামানব বুদ্ধ বলতেন,- মুক্ত সমাজ গড়তে হলে ধর্মের প্রয়োজন। জগতের পুনর্গঠন করা হচ্ছে ধর্মের কাজ, তার উৎপত্তি বা পরিণতি ব্যাখ্যা করা নয়। মানুষ ও নৈতিকতাই ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু, ঈশ্বর নয়। ‘ধর্ম,’ শাস্ত্রগ্রন্থের  মধ্যে নেই। ধর্ম মানুষের হৃদয়ে।
আবার কার্লমার্ক্স ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না। ধর্ম তাঁর নিকট ছিল আফিম-স্বরূপ। ধর্মের স্থানে তিনি বসিয়েছিলেন দর্শনকে। বুদ্ধের মত তিনিও বলতেন, দর্শনের উদ্দেশ্য হচ্ছে জগতের পুনর্গঠন করা তার উৎপত্তি ব্যাখ্যা করা নয়।
    পতিত পাবন হরিচাঁদ ঠাকুরও কিন্তু বুদ্ধের ধর্ম সম্পর্কে এই দর্শনকে গ্রহন করেছিলেন। বাবা সাহেবের মতো তিনিও উপলব্ধি করেছিলেন, ধর্মহীন মানুষ পশুর সমান। যার জন্যই তিনি ধর্ম থেকে পতিত করে দেওয়া মানুষদের উত্থানের জন্য নতুন ধর্ম দর্শন দেওয়ার কাজে ব্রতী হয়েছিলেন। আর সেই ধর্ম দর্শনের ধারা ছিলে বুদ্ধের ধর্ম দর্শনের নবরূপ।   
    পরিসমাপ্তিতে আমরা বাবা সাহেবের আদর্শ ধর্ম সম্পর্কে যেটা উপলব্ধি করতে পারি, সেটা হচ্ছে- ধর্ম ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিশ্বাস করুক বা না করুক তার কেন্দ্রবিন্দু হবে মানুষ ও নৈতিকতা (Man and Morality)। ধর্ম হবে এমন যা মানুষের মনে উন্নত আশা-আকাঙ্খা জাগিয়ে তুলবে এবং সৎকর্ম করতে তাকে প্রেরণা যোগাবে। স্বাধীনতা সাম্য ও ভ্রাতৃত্বকে ধর্ম তো স্বীকার করে নেবেই, তাছাড়া এগুলি সম্পর্কে মানুষের মনে যাতে সঠিক অনুভূতি ও ধারণা গড়ে ওঠে তার জন্য অনুকুল পরিবেশ রচনায় করবে সহায়াতা। ধর্ম সকল যুগে সকল অবস্থায় সকলের জন্য সমভাবে প্রয়োজ্য হবে। কোন প্রকার হিংসা বা বিভেদমূলক নীতি ও আচরণকে কখনই প্রশ্রয় দেবে না। ধর্মের মধ্যে বিজ্ঞান-চর্চা এবং সৎভাবে জাগতিক সমৃদ্ধিলাভের অনুমোদন থাকবে। আর ধর্মকে হতে হবে সর্বতোভাবে প্রতিটি মানুষের জন্য সমমুল্যতা সৃষ্টির এর নিরপেক্ষ সহায়কী শক্তি।
--------------------------------------------------------
তথ্যঃ-১) আম্বেদকর-দর্শনে ধর্ম  -অধ্যাপক সত্যরঞ্জন রায়।
     ২) Annihilation of Caste – B. R. Ambedkar





Read More