বুদ্ধিজীবী
সম্পর্কে বাবাসাহেব কী বলেছেন? (Annihilation
of Caste -জাতিপ্রথার বিলুপ্তি -বই)
“মহামণীষীরাই ইতিহাসের সৃষ্টি কর্তা”-এই তত্ত্বকে আপনারা গ্রহণ করুন বা না করুন, এই
সত্যটা আপনাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে
যে, প্রত্যেক দেশে বুদ্ধিজীবী শ্রেণী শাসক শ্রেণী না
হলেও সব চেয়ে প্রভাবশালী শ্রেণী হয়। বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর দূর দৃষ্টি আছে। তাঁরা উপদেশ দিতে এবং নেতৃত্ব দিতে পারেন। যেকোন দেশের
সাধারণ জনগণ বিচারশীল জীবন ব্যতীত করেনা। এই ধরনের জনগণ বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর অনুকরণ
ও অনুসরণ করে। একথা বলার মধ্যে কোন অতিরঞ্জন নেই যে, যে কোন দেশের সম্পূর্ণ ভবিষ্যৎ সেই দেশের বুদ্ধিজীবী
শ্রেণীর উপর নির্ভর করে। যদি বুদ্ধিজীবী শ্রেণী সৎ, স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ
হন, তাহলে সংকটকালে সেই বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর নেতৃত্বের উপর আস্থা স্থাপন করা যায়।
একথা সত্যি যে,
বুদ্ধি বা মেধা কোন গুণ নয়, এটা একটি শক্তি বা সাধন। আর
সাধনের প্রয়োগ সেই লক্ষ্যের উপর নির্ভর করে, যাকে প্রাপ্ত করার জন্য একজন ব্যক্তি
চেষ্টা করে। বুদ্ধিমান ব্যক্তি
সৎ ও হতে পারেন, আবার বদমাশ বা দুষ্ট প্রকৃতিরও হতে পারেন। সেই রূপ বুদ্ধিজীবী শ্রেণী উচ্চ
বিচার যুক্ত ব্যক্তিদের একটা দল হতে পারেন। যাঁরা সাহায্যের জন্য প্রস্তুত থাকেন।
আর পথভ্রষ্ট লোকদের সঠিক রাস্তায় আনার জন্য প্রস্তুত থাকেন।
আবার বুদ্ধিজীবী
শ্রেণী ধোকাবাজের দলেও পরিণত হ’তে পারেন। সংকীর্ণ স্বার্থসিদ্ধির জন্য ছোট দলেরও
সমর্থক হ’তে পারেন। বড়ুই দুঃখের বিষয় এইযে, ভারতবর্ষে বুদ্ধিজীবী শ্রেণী
ব্রাহ্মণ জাতির উপকার ও চাওয়া পাওয়ার সঙ্গে আপোষ করে। তাঁরা তাদের দেশের ভালর কথা
না ভেবে তাদের জাতির সুবিধাকে বেশি প্রাধান্য দেন। এই পরিস্থিতিটা বড়ই দুখজনক। সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে যে, ব্রাহ্মণরাই
হিন্দুদের বুদ্ধিজীবী শ্রেণী। আর এঁরা শুধু বুদ্ধিজীবী শ্রেণীই নয়, বরং
অন্যান্য সকল জাতির হিন্দুরা তাদের অত্যন্ত ভক্তি-শ্রদ্ধা করে। হিন্দুদের এই
শিক্ষা দেওয়া হয় যে, ব্রাহ্মণরাই শুধুমাত্র গুরু হতে পারে।“বর্নানাং ব্রাহ্মণো
গুরু”।